
ছবিঃ সংগৃহীত
চাঁদ, মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক রহস্যময় বস্তু, যুগে যুগে এটি ঘিরে নানা কল্পনা ও গবেষণা হয়েছে। কখনো চন্দ্রপৃষ্ঠে পতাকা উড়িয়ে, আবার কখনো রোভার পাঠিয়ে বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করেছেন অজানাকে জানার। সর্বশেষ ১৯৭২ সালে মানুষ চাঁদের বুকে পা রেখেছিল। তারপর থেকে নানা কারণে মানুষ আর চাঁদের পৃষ্ঠে যেতে পারেনি। তবে এবার নতুন এক যুগে পা রাখতে যাচ্ছে রাশিয়া ও চীন, যা বিশ্বে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে।
সম্প্রতি, রাশিয়া এবং চীন চাঁদে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করার জন্য একটি সমঝোতা সনদে স্বাক্ষর করেছে। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে চাঁদের দক্ষিণ পৃষ্ঠে একটি মানব বসতি এবং চন্দ্রঘাটি স্থাপন করা হবে, যা চালাতে প্রয়োজন হবে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের। প্রকল্পটি ২০৩৬ সালের মধ্যে শেষ হবে বলে জানানো হয়েছে। বিশেষত, এই কেন্দ্রটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হবে, যার জন্য মানুষের উপস্থিতি প্রয়োজন হবে না। তবে নির্মাণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে কোনো বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
চাঁদে স্থায়ী ঘাঁটি স্থাপন করার জন্য মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা কিছুদিন আগে একটি পরিকল্পনা উত্থাপন করেছিল, তবে এটি ২০২৬ সালের বাজেট প্রস্তাবে বাতিল করা হয়। এই বাতিলের পরই রাশিয়া এবং চীন যৌথভাবে তাদের উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছে।
চীনের চাং ই মিশন ২০২৮ সালে চাঁদে ঘাঁটির প্রাথমিক ভিত্তি স্থাপন করবে, এবং এই মিশনের অংশ হিসেবে প্রথমবারের মতো চীনা নভচারী চাঁদের বুকে পা রাখবেন। ২০৩০ থেকে ২০৩৫ সালের মধ্যে, পাঁচটি সুপার হেভি লিফট রকেটের মাধ্যমে চন্দ্রঘাটির বিভিন্ন অংশ চাঁদে পাঠানো হবে। এই প্রকল্পে অংশগ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ১৭টি দেশ, যার মধ্যে রয়েছে মিশর, পাকিস্তান, ভেনেজুয়েলা, থাইল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকা।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রও চাঁদে তার নিজস্ব পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। নাসা-এর আর্টেমিস প্রোগ্রামের মাধ্যমে ৫০ বছরেরও বেশি সময় পর নভচারীরা চাঁদে পা রাখবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে নাসা-এর নিজস্ব চন্দ্রঘাটি প্রকল্পটি কিছু অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। ২০২৭ সালের মধ্যে স্টেশনটি উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা থাকলেও, ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত বাজেটে এই প্রকল্পটি বাতিলের আহ্বান জানানো হয়েছে, যদিও স্টেশনটির বিভিন্ন মডিউল তৈরির কাজ ইতোমধ্যে অগ্রগতি লাভ করেছে।
চাঁদকে কেন্দ্র করে রাশিয়া ও চীনের এই নতুন পরিকল্পনা বিশ্বের মহাকাশ গবেষণার পরিসরে এক নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে, যা ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক মহাকাশ নীতির দৃষ্টিকোণেও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
মারিয়া