ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

ভারতের অভিযোগ: এসব বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীকে সহায়তা করছে পাকিস্তান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:৪১, ১০ মে ২০২৫

ভারতের অভিযোগ: এসব বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীকে সহায়তা করছে পাকিস্তান

ছবিঃ সংগৃহীত

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে গত কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ উত্তেজনা বিরাজ করছে। একে অপরের ভূখণ্ডে ড্রোন হামলার অভিযোগ এবং পাল্টা হামলার মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে উঠেছে। এই বিরোধের কেন্দ্রে রয়েছে কাশ্মীরভিত্তিক কিছু সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী, যাদের ভারত বলছে—পাকিস্তান সমর্থন ও আশ্রয় দিয়ে আসছে।

গত মাসে ভারতশাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে এক হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এর দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (TRF) নামের এক সশস্ত্র গোষ্ঠী। ভারত বলছে, এই গোষ্ঠী মূলত পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার (LeT) একটি উপশাখা।

পাকিস্তান অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং একটি স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।

নিচে আলোচিত চারটি সশস্ত্র গোষ্ঠী সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:

দ্যা রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (TRF)
TRF গঠিত হয় ২০১৯ সালে, যখন ভারত সরকার সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা বাতিল করে। এই গোষ্ঠী প্রথম বড় হামলার দায় নেয় ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে পহেলগামে।

এই গোষ্ঠীর অভিযোগ, ভারত বাইরের মানুষদের কাশ্মীরে বসবাসের অনুমতি দিয়ে এখানকার জনসংখ্যার গঠনে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে। TRF-এর নাম ইসলামী নয়, তবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের মতে, এটি মূলত লস্কর-ই-তৈয়বারই একটি ফ্রন্ট সংগঠন।

ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর দাবি, ২০২২ সালে কাশ্মীরে যেসব অস্ত্রধারী নিহত হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই TRF-এর সদস্য ছিলেন।

লস্কর-ই-তৈয়বা (LeT)
LeT প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯০-এর দিকে হাফিজ সাঈদের নেতৃত্বে। ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলায় ১৬৬ জন নিহত হন, যার দায়ভার ভারতের পক্ষ থেকে এই সংগঠনের ওপর চাপানো হয়। ভারতের দাবি, লস্কর-ই-তৈয়বা পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমর্থনপুষ্ট।

মে ৭ তারিখে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অন্যতম লক্ষ্য ছিল মুরিদকে শহরে অবস্থিত 'মারকাজ তৈবা' নামের একটি ঘাঁটি, যা LeT-এর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।

পাকিস্তান দাবি করে, LeT নিষিদ্ধ সংগঠন এবং এর নেতা হাফিজ সাঈদ বর্তমানে "সন্ত্রাসে অর্থায়ন" মামলায় ৩১ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন।

জইশ-ই-মুহাম্মদ (JeM)
জইশ-ই-মুহাম্মদ গঠিত হয় ২০০০ সালের দিকে, এর প্রতিষ্ঠাতা মাসুদ আজহার। ১৯৯৯ সালে ভারতীয় একটি বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনার পর ভারত তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

২০০১ সালে ভারতীয় পার্লামেন্টে হামলার পেছনে এই গোষ্ঠীকে দায়ী করা হয়। ২০১৯ সালে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় ৪০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হন, যেটির দায় JeM স্বীকার করে।

ভারতের দাবি, JeM এখনও পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের বাহাওয়ালপুরে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

হিজবুল মুজাহিদিন (HuM)
১৯৮৯ সালে কাশ্মীরি নেতা মুহাম্মদ আহসান দার হিজবুল মুজাহিদিন গঠন করেন। এই গোষ্ঠী ভারত-শাসিত কাশ্মীরের স্বাধীনতার বদলে পুরো কাশ্মীরকে পাকিস্তানে যুক্ত করার দাবি করে।

২০১৬ সালে হিজবুলের জনপ্রিয় কমান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে কাশ্মীরে। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র এই গোষ্ঠীকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।

হিজবুলের সাবেক কমান্ডার রিয়াজ নায়িকু ২০১৮ সালে আল জাজিরাকে বলেন, “ভারতের দখলদারি পরিস্থিতিই আমাদের সহিংস প্রতিরোধে বাধ্য করেছে। আমাদের একটাই দাবি—স্বাধীনতা।”

তিনি আরও বলেন, “পাকিস্তান আমাদের নৈতিক ও আদর্শিক বন্ধু কারণ তারাই আন্তর্জাতিক পরিসরে আমাদের অধিকারের কথা বলেছে।”

সূত্র: আল জাজিরা

মুমু

আরো পড়ুন  

×