
ছবি : সংগৃহীত
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সাম্প্রতিক সামরিক উত্তেজনা এখন এক নতুন রূপ নিয়েছে—ড্রোন যুদ্ধ। সীমান্তে মুখোমুখি সংঘাতের বাইরে এখন এই দুই প্রতিবেশী দেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছড়িয়ে পড়েছে আকাশে। পাল্টাপাল্টি ড্রোন হামলার মাধ্যমে একে অপরকে সামরিক শক্তির জানান দিচ্ছে তারা। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর এই সংঘাতে প্রতিদিন নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে, যেখানে ড্রোন ব্যবহারের কৌশল ও ক্ষমতা একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
২০২৪ সালের সামরিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ড্রোন ভান্ডার থাকা দশটি দেশের তালিকায় ভারতের অবস্থান ষষ্ঠ। ভারতের সেনাবাহিনীর হাতে বর্তমানে রয়েছে মোট ৬২৫টি ড্রোন। এই ড্রোনগুলোর বেশিরভাগই ইসরাইল থেকে আমদানি করা হলেও দেশটি নিজস্ব প্রযুক্তিতেও উন্নতি করেছে। ভারতের ড্রোন বহরে রয়েছে কামিকাজি ড্রোন, যা লয়টারিং মিউনিশিয়ান নামেও পরিচিত। আকারে ছোট হলেও এগুলো অত্যন্ত কার্যকর; ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম এবং ১০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে পারে। ভারতের হাতে আরও রয়েছে পানছি, নিঃশান্ত এবং নেত্রার মতো নজরদারি ও রিয়েল টাইম চিত্র ধারণকারী ড্রোন, যেগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। এছাড়া ইসরাইলি প্রযুক্তিতে নির্মিত হারফ ড্রোনও ভারতের ড্রোন ভান্ডারকে আরও শক্তিশালী করেছে।
পাকিস্তানও ড্রোন প্রযুক্তিতে পিছিয়ে নেই। দেশটির ড্রোন ভান্ডারে রয়েছে তুরস্কের বিখ্যাত বায়রাকতার টিবি-টু এবং অত্যাধুনিক আকিনজি ড্রোন। আকিনজি ড্রোনটি সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার ফুট উচ্চতায় উঠতে পারে এবং ঘণ্টায় ৩৬১ কিলোমিটার বেগে চলতে পারে। এটি টানা ২৪ ঘণ্টা আকাশে অবস্থান করতে সক্ষম, যা দীর্ঘস্থায়ী নজরদারি ও আক্রমণের জন্য কার্যকর। পাকিস্তানের ড্রোন সংগ্রহে আরও রয়েছে তুরস্কের আঙ্কা এবং চীনের উইংলুং ড্রোন, যেগুলো বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ড্রোনগুলোর মধ্যে গণ্য হয়।
তবে সামরিক খাতে ব্যয়ের দিক থেকে ভারত পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে। ভারত যেখানে বছরে প্রায় ৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সামরিক খাতে ব্যয় করে, সেখানে পাকিস্তান ব্যয় করে মাত্র ৭ বিলিয়ন ডলার। এই বাজেট ব্যবধান প্রযুক্তিগত আধুনিকতা এবং ড্রোন সংখ্যাতেও প্রতিফলিত হয়।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ভারত ও পাকিস্তান বর্তমানে এক নতুন ধরনের যুদ্ধ কৌশলে প্রবেশ করেছে, যার নাম ড্রোন যুদ্ধ। এই প্রতিযোগিতা শুধু আকাশেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি পুরো দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করছে এবং ভবিষ্যতের যুদ্ধ পরিকল্পনায় প্রযুক্তির গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তুলছে।
আঁখি