ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

রাবিতে "জ্বালানি সুবিচারে বাংলাদেশ" শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

লুবনা শারমিন,রাবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ১৪:৩৪, ১০ মে ২০২৫; আপডেট: ১৪:৫৬, ১০ মে ২০২৫

রাবিতে

ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে 'জ্বালানি সুবিচারে বাংলাদেশ' শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার সকাল ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডীনস্ কমপ্লেক্সে 'জ্বালানী ও সামাজিক সুবিচার ফোরাম' এর আয়োজনে এই আলোচনা সভা শুরু হয়। 

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন। এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব। সভায় ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ছাত্র উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম কনকের সঞ্চালনায় প্রধান আলোচক হিসেবে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানী উপদেষ্টা এম শামসুল আলম ও ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আলোচনা করেন।

প্রধান আলোচকের বক্তব্যে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, বাংলাদেশে জ্বালানি সুবিচার সংকট কেবল একটি কারিগরি সমস্যা নয়— এটি অধিকার, সাম্য ও সুশাসন ব্যবস্থার প্রশ্ন। এটি আমাদের ভাবতে বাধ্য করে যে, কীভাবে জ্বালানি উৎপাদন, আমদানি, বণ্টন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়। যা সব নাগরিকের প্রয়োজন ও মর্যাদাকে প্রতিফলিত করে। সরকার অবকাঠামো ও সংযোগে অগ্রগতি অর্জন করলেও গঠনগত সমস্যাগুলো এখনো রয়ে গেছে। দুর্নীতি, ব্যয়বহুল সেবা, পরিবেশ ধ্বংস ও বর্জনমূলক নীতি সেইসব মানুষকে প্রান্তিক করে দিচ্ছে, যাদের জন্য জ্বালানি উন্নয়ন বা রূপান্তর হওয়া উচিত। নইলে সে রূপান্তর ন্যায্য হয় না, জ্বালানি সুবিচার ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।

বাংলাদেশকে একটি সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ কেন্দ্রীয়, জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর, প্রভাবশালী গোষ্ঠী-নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় এগিয়ে যাবে, নাকি একটি ন্যায্য, গণতান্ত্রিক ও টেকসই জ্বালানি রূপান্তরের পথে হাঁটবে, যেখানে জনগণ ও প্রকৃতি অগ্রাধিকার পাবে—তা নিয়ে এখন একটি সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এখনই সময়-একটি কর্মপন্থা গ্রহণের, যা ন্যায্যতা, স্বচ্ছতা, অংশগ্রহণ ও দীর্ঘমেয়াদি সহনশীলতার নীতিতে পরিচালিত হবে। কেবল তখনই বাংলাদেশে সত্যিকারের সুবিচারের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।

ক্যাব প্রস্তাবিত বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি ২০২৪ সেই নির্দেশনা দেয়। এজন্য কেবল দরকার বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ক্ষমতায়ন করা, যাতে তারা জ্বালানি রূপান্তরে সুশাসন ও সুবিচার প্রতিষ্ঠায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারে- এই লক্ষ্যে কর্মপন্থা গৃহীত হতে হবে। জ্বালানি খাতের দুর্নীতি দূর করা, গণবান্ধব জ্বালানি রুপান্তর নীতির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা, এবং ন্যায়সঙ্গত জাতীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করা- এসবই জনগণ চায়।

আরেক আলোচক ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই উন্নয়নের জন্য জ্বালানি ন্যায্যতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার জরুরি। জনগণের অংশগ্রহণ এবং স্বচ্ছতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এছাড়া জ্বালানির অধিকার রক্ষা এবং জ্বালানি ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে নাগরিক আন্দোলন গড়ে তোলারও আহ্বান জানান তিনি।

উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, জ্বলানি নিয়ে যদি কথা বলতে হয় তাহলে এখানে সমাজ, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে জ্ঞান থাকার দরকার আছে। জ্বালানি মানুষের অধিকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাই এটা নিয়ে ব্যাপক আলোচনার দরকার আছে। মানুষের সঙ্গে আইনের দিক থেকেও এই সমস্যার সমাধানে অনেক ভূমিকা আছে। তবে শুধুমাত্র একা আইনজীবী, পরিবেশবিদ, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি এই সমস্যার সমাধান দিতে পারবে না। এই সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ যারা আছেন সকলের সমন্বিত চেষ্টার প্রয়োজন। আমি মনে করি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম আলোচনা আরও হবে। যেখানে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেবেন। 

সভায় অধ্যাপক আ-আল মামুন বলেন, পঞ্চাশের দশকের পরে যখন পুজিবাদ অনেক আগ্রাসী। সেই সময় থেকে এনার্জির চাহিদা বহুত পরিমাণে বেড়ে যাচ্ছে। পঞ্চাশের দশকে সারা পৃথিবীতে মধ্যবিত্ত যা ছিল তার ২০ বছর পরে দ্বিগুন হয়েছে। এইসময়ে পৃথিবীতে মধ্যবিত্ত অনেক বড় একটি অংশ, যেটাকে আমরা 'গ্লোবাল মিডিলক্লাস বলি। এই গ্লোবাল মিডিলক্লাসের এনার্জির চাহিদা অনেক বেশি। এই গ্লোবাল মিডিলক্লাস যে পরিমাণে এনার্জি খরচ করে এবং যেভাবে মার্কেটটাকে টিকিয়ে রাখে, সেই মার্কেটেরই পাহারাদার বা লাভবান হলো বিভিন্ন এনার্জি কোম্পানি এবং সরকার। 

এনার্জি খাতের তাৎপর্য তুলে ধরে তিনি বলেন, এনার্জি খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত। সেইসঙ্গে আমাদের জীবনের জন্য অত্যন্ত সহিংস খাত। এনার্জি খাতের দুর্নীতি এবং রাজনীতি বর্তমানে বৈশ্বিক রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। একই সঙ্গে এনার্জির সংকটে আমরা দেখতে পেয়েছি কিভাবে মধ্যবিত্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন পুরো সভ্যতা জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর দাড়িয়ে আছে। কিন্তু আমাদের উপমহাদেশে হরণ করার দর্শন ১৬শতক থেকে গড়ে উঠেছিল। সেই দর্শনেই আমরা এখনও আছি। এই এনার্জি খাত একটা প্রধান খাত হতে মাত্র ১০বছর সময় লেগেছে। তাই এখন যদি আমরা এনার্জির গল্প, ন্যায্যতার গল্প যদি না নিয়ে আসতে পারি, তাহলে চলবে না। আমাদের কী দায় এবং দায়িত্ব সেটা ভালো করে বুঝতে হবে।'

বক্তব্য শেষে অধ্যাপক আ-আল মামুন ক্যাবের পাশাপাশি ক্যাম্পাসে এ বিষয়ে সতন্ত্র একটি প্লাটফর্ম এবং সেই প্লাটফর্মের আহ্বায়ক হিসেবে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দারকে আহ্বায়ক এবং ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনককে সদস্য সচিব করে একটি কমিটি গঠনের সুপারিশ করেন। এসময় বিভিন্ন  বিভাগ ও ইন্সটিটিউটের শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
 

আলীম

×