
ছবি : জনকণ্ঠ
আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটা তাজাকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কেরানীগঞ্জের গরুর খামারিরা। প্রাকৃতিক উপায়ে খড়, ঘাস, খৈল, ভূষি খাইয়ে গরু মোটা তাজাকরণ করছেন খামারিরা। সেই অনুযায়ী দাম পাবেন কি না তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন খামার মালিকরা।
আজ (১০ মে) শনিবার সকালে কেরানীগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গরুর খামারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রত্যেকটি খামারে পর্যাপ্ত কোরবানির জন্য গরু লালন পালন করা হচ্ছে।
তবে খামারিদের অভিযোগ, বর্তমান গো-খাদ্যের দাম অনেক বেশি। বিশেষ করে ৩৭ কেজি ওজনের এক বস্তা ভূষি ২ হাজার ২০০ টাকা, যা গত বছর ১ হাজার ৭০০ টাকায় ছিল। ১ বস্তা খৈলের দাম ৩৫০০ টাকা, ১ বস্তা ধানের কুড়ার দাম ৯০০ টাকা, ১ কেজি খড় এখন ১৫ টাকা। এভাবে দাম বাড়ায় অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। যদি গো-খাদ্যের দাম খামারিদের নাগালের মধ্যে আসে, তাহলে আগামীতে আরও অনেক নতুন খামার গড়ে উঠবে।
খামার মালিক মন্টু মিয়া ও স্বপন মিয়া বলেন, এ বছর তার খামারে প্রায় ১০টি ষাঁড় গরু লালন-পালন করেছি। একেকটি ষাঁড় এক থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করবো। তবে গো-খাদ্যের মূল্য বেশি হওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে আমাদের খামারে দেশীয় খাবার — সবুজ ঘাস, খড়, ভূষি খাইয়ে পশু লালন পালন করা হয়। এখন বাজারে সঠিক দাম পাওয়ার আশায় আছি।
শরীফ এগ্রোফিডের ম্যানেজার সজীব হাওলাদার জানান, আমরা দেশীয় পদ্ধতিতে গরু লালন পালন করে থাকি। গম, ভুট্টা, খড়, ভূষি ও নিয়ম মাফিক নেপিয়ার ঘাস খাওয়ানো হয়। সারা বছর এই প্রতিষ্ঠানে গরু বিক্রি করা হয়। আমাদের খামারে কোনো মোটা তাজা করণ ওষুধ বা ইনজেকশন ব্যবহার করা হয় না। খামারে প্রায় ৭ হাজার গরু আছে, যার মধ্যে ১ হাজার পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সব সময় পরামর্শ ও সহযোগিতা করে থাকে। আমরা ক্রেতাদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনি খুব সহজে আমাদের খামার থেকে কোরবানির পশু ক্রয় করতে পারেন।
এবার ভারত থেকে গরু না আসলে খামার মালিকরা ভালো মূল্য পাবো বলে আশা রাখছেন।
খামার মালিক তৌহীদ বলেন, যদি ভারত থেকে গরু না আসে, তাহলে আমরা খামার মালিকরা ভালো মূল্য পাবো বলে আশা করছি। আমাদের খামারে আমরা প্রায় ৩০ হাজার গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছি। তবে গো-খাদ্যের দাম কম হলে গরু পালনে আরও খামারির সংখ্যা বেড়ে যেতো।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওষুধ খাওয়ানো গরুর মাংস খেলে মানুষের শরীরে নানা ধরনের রোগ ঢুকে। এতে কিডনির সমস্যাসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ধরনের ওষুধ খেয়ে গরুগুলো রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে মোটা তাজার বিপরীতে অনেক গরুর মৃত্যু হচ্ছে। এতে লাভের তুলনায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অনেক খামারি। অনেকে বাংলাদেশি ভিটামিন খাইয়ে মোটা তাজা করছেন, আবার কেউ ভারতীয় ওষুধ দিয়ে মোটা তাজা করছেন।
এদিকে কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার এলাকার মাঝদিয়া গ্রামের ঘোষপাড়ায়ও অনেক খামারি ৮-১০টি গরু মোটাতাজা করে বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিছু খামারির ধারণা পশু মোটা তাজা করতে সহায়ক হয়, তবে তারা এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জানেন না। আবার অনেক খামারি জেনেই এ পন্থা অবলম্বন করছেন, যাতে পশু মোটা তাজা হলে কিছু বাড়তি টাকা পান।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুস সাত্তার বেগ মোটু ফোনে জানান, কেরানীগঞ্জে এ বছর খামারি ও প্রান্তিক খামারিরা প্রায় ২৫ হাজার গরু দেশীয় পদ্ধতিতে লালন-পালন করছেন। খামারিরা যেন কোনো প্রকার পাম ট্যাবলেট, টেস্টোরেড ও হরমোন ব্যবহার না করেন, সে জন্য আমাদের মেডিক্যাল টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে। তাছাড়া ফার্মেসিগুলোতেও আমাদের নজরদারি রয়েছে, যেন কোনো ফার্মেসি ট্যাবলেট বা ইনজেকশন বিক্রি করতে না পারে।
সা/ই