
আসন্ন ঈদুল ফিতরকে টার্গেট করে এ বছরও রাজধানীর ডেমরায় জাল টাকা চক্রের কারবারিরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডেমরা থানা পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার এক দম্পতিকে গত শুক্রবার (৯ মে) বিকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ তাঁদের কাছ থেকে সোয়া ৮ লাখ টাকার জাল টাকার নোট উদ্ধার করেছে।
গত ৮ মে বৃহস্পতিবার ডেমরা থানা পুলিশ স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে প্রথমে লাবনী বেগমকে (৩২) আটক করে। এ সময় তার ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে এক হাজার ও পাঁচশ টাকার তিনটি জাল নোট উদ্ধার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে রসুলনগরের ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে তার স্বামী রাজন শিকদারকে (৩৩) আটক করা হয়।
সেখান থেকে এক হাজার টাকার ৭৬৪টি এবং পাঁচশ টাকার ১১৯টি জাল নোট মিলিয়ে মোট ৮ লাখ ২৩ হাজার ৫০০ টাকার জাল নোট উদ্ধার করা। এ সময় উদ্ধার করা হয় নগদ ৫৯ হাজার টাকা। তারা দু’জনই মুন্সীগঞ্জের টংগীবাড়ী উপজেলার পাঁচগাঁও গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। বর্তমানে ডেমরার রসুলনগর এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন ওই দম্পতি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, বাজারে বিভিন্ন কেনাকাটার কেন্দ্রে চক্রটি সক্রিয়ভাবে জাল নোট ছড়িয়ে দিচ্ছে, যা সাধারণ ব্যবসায়ী এবং ভোক্তাদের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করেছে। এদিকে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরে জাল টাকা তৈরি ও বাজারজাতকরণে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলেও জাল টাকার উৎস সম্পর্কে তারা কৌশলে এড়িয়ে গেছে। তবে সামনে পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হচ্ছে এ চক্রের অন্যান্য সদস্যরা।
ডেমরা থানার এসআই রাজিব সনেট জানান, তাদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫-ক(খ) ধারায় নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। তাদের নামে পূর্বেও একাধিক মামলা রয়েছে। ওই দম্পতিকে আটকের পর স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে ডেমরা থানা এলাকায় পুলিশের তৎপরতা আরো বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ওই জাল টাকা চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে। তাই এখানে তেমন একটা সুবিধা করতে পারবে না ওইসব চক্র।
সারুলিয়া বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, এই ঈদের মৌসুমে আমরা নগদ লেনদেনে বেশি ঝুঁকিতে থাকি। এখন প্রতিটি নোট খুঁটিয়ে দেখতে হচ্ছে।
সূত্রে জানা যায়, এক লাখ টাকার জাল নোট বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকায়। ছড়িয়ে পড়া এসব জাল টাকার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতা-বিক্রেতারা। তাদের মাঝে দেখা দিচ্ছে এক ধরনের আতঙ্ক। এমন পরিস্থিতিতে এ চক্রের তৎপরতা রুখতে সক্রিয় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও।
সূত্রে আরও জানা গেছে, জাল টাকা তৈরির পর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে চক্রের সদস্যরা। প্রিন্টার ও অন্যান্য সরঞ্জামের সহায়তায় বিশেষ ধরনের কাগজে নিখুঁতভাবে জাল টাকা তৈরি করছে চক্রের সদস্যরা। এমনকি আসল টাকায় যে রং পরিবর্তনশীল কালি, অসমতল ছাপা, নিরাপত্তা সুতা ও জলছাপ রয়েছে একইভাবে বিশেষ পদ্ধতিতে জাল টাকায়ও জলছাপ ও নিরাপত্তা সুতার ব্যবহার এবং অনেক ক্ষেত্রে অসমতল ছাপাও দেওয়া হচ্ছে।
এসব জাল টাকা সহসাই যে কারও পক্ষে চেনা কঠিন। জাল টাকা ছড়িয়ে দিতে বিভিন্ন ধাপে কাজ করে চক্রের সদস্যরা। এরা বিভিন্ন সময় জাল টাকা ও তৈরির সরঞ্জামসহ গ্রেফতার হলেও জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের একই কাজ শুরু করেছে।
এ বিষয়ে ডেমরা থানার ওসি মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, দেশের কোনো ধরনের উৎসব শুরুর আগে সক্রিয় হয়ে ওঠে জাল টাকার কারবারিরা। এবার ঈদের আগেও চক্রের সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে। এ চক্রের সদস্যদের প্রায়ই গ্রেফতার করা হয়।
তারপরও তারা জামিনে বেরিয়ে ফের একই অপকর্মে লিপ্ত হয়। চক্রের সদস্যরা তিনভাগে বিভক্ত থাকেন। একটি চক্র টাকা তৈরি করে। অপর চক্রটি পাইকারি হারে টাকা কিনে নিয়ে যায়। সর্বশেষ চক্রের সদস্যরা তা মাঠপর্যায়ে ছড়িয়ে দেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে আরও কয়েকটি চক্রকে সন্দেহ করে ডেমরা থানা এলাকায় ইতিমধ্যে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ডেমরা থানা এলাকায় জাল নোটচক্রের সদস্যরা যদি সক্রিয় থাকে তাহলে পুলিশের হাতে তারা ধরা পড়বেই।
আফরোজা