
ছবি: সংগৃহীত
গত কয়েক মাস ধরে টানাপোড়েনের পর অবশেষে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে খনিজ সম্পদ নিয়ে একটি চুক্তি সই হয়েছে, যা নতুন করে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে— যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য কি ইউক্রেনকে সাহায্য, না তার বিপুল খনিজ সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা?
চুক্তির আওতায় দুই দেশ মিলে একটি পুনর্গঠন বিনিয়োগ তহবিল গঠন করবে, যার মূল উদ্দেশ্য রাশিয়ার আগ্রাসনে বিপর্যস্ত ইউক্রেনের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করা। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি শুধুই অর্থনৈতিক সহায়তা নয়— বরং ইউক্রেনের মূল্যবান খনিজ সম্পদে মার্কিন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার এক কৌশলী কূটনৈতিক চাল।
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট চুক্তিটিকে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি হিসেবে তুলে ধরলেও, বাস্তবতা হলো চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের গ্রাফাইট, টাইটানিয়াম ও লিথিয়ামের মতো বিরল খনিজ সম্পদের খনি ব্যবহারের সুযোগ পেয়ে গেছে। এই খনিজগুলো নবায়নযোগ্য জ্বালানি, প্রতিরক্ষা খাত এবং ভারী শিল্পে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বে বিরল খনিজ পদার্থের বড় অংশ চীনের নিয়ন্ত্রণে, যার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ চলছে। ঠিক এই সময়েই ইউক্রেনের মতো খনিজসমৃদ্ধ দেশকে কৌশলগতভাবে কাছে টেনে নেওয়াটা নিছক কাকতালীয় নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ইউক্রেনের ফার্স্ট ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার ইউলিয়া সভিরিদেঙ্কো জানিয়েছেন, এই চুক্তিতে খনিজ, তেল ও গ্যাস খাতের প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত থাকবে, তবে সম্পদের মালিকানা ইউক্রেনেরই থাকবে। তবুও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে— যদি মালিকানাই থাকে, তবে এতটা দ্বিপাক্ষিক নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন কেন?
চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে নতুন করে সামরিক সহায়তা, বিশেষ করে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ করবে। তবে এই সামরিক সহায়তা যেন একধরনের বিনিময়মূল্য হয়ে উঠছে, যার বদলে আমেরিকা পাচ্ছে ইউক্রেনের মূল্যবান খনিজসম্পদে প্রবেশাধিকার।
এদিকে, মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি মার্জোরি টেলর গ্রিন চুক্তিটিকে সরাসরি ইউক্রেনের ওপর মার্কিন দখলদারিত্ব হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, “আমরা কি এখনও ইরাক যুদ্ধ থেকে কিছুই শিখিনি? সেখানে যেমন মিথ্যা ছড়িয়ে আগ্রাসন চালানো হয়েছিল, এখানেও তেমনি বিপন্ন একটি দেশের দুর্বলতাকে পুঁজি করে কাজ হাসিল করা হচ্ছে।”
তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, “আমরা কেন নিজেদের দেশে বিরল খনিজ উত্তোলন করি না? কেন অন্য দেশের খনিজের পেছনে এতটা আগ্রহ?”
গত বৃহস্পতিবার দুই মাসের টানাপোড়েন শেষে চূড়ান্তভাবে এই চুক্তিতে সই হয়। চুক্তির ফলে ইউক্রেন আশা করছে, যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতি রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থন অব্যাহত রাখবে। তবে কিয়েভে অনেকে মনে করছেন, এ একপাক্ষিক সম্পর্ক— যেখানে আমেরিকা বন্ধু সেজে তার কৌশলগত স্বার্থই রক্ষা করছে, ইউক্রেনের প্রকৃত কল্যাণ নয়।
এই চুক্তি ঘিরে সমালোচনা বাড়ছে এবং প্রশ্ন উঠছে— চতুর মার্কিন নীতির ফাঁদে পা দিয়ে ইউক্রেন কি নিজের ভবিষ্যৎ সম্পদ নিরাপত্তা খোয়াচ্ছে?
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/9FIRqkUTJy8?si=6O7hul4E_ronDCZe
এম.কে.