ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

ভারতের মিডিয়া বাংলাদেশ নিয়ে কেন এতো চটকদার খবর? মিললো যে সব তথ্য

অনলাইন রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪

ভারতের মিডিয়া বাংলাদেশ নিয়ে কেন এতো চটকদার খবর? মিললো যে সব তথ্য

ভারতীয় মিডিয়া

বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে একের পর এক ভুয়া খবরও ছড়াচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে, আবার সেগুলিই স্থান পাচ্ছে ভারতের নানা খবরের কাগজ-টিভিতে। বাংলাদেশের হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারির পর থেকে ভারতের মূলধারার গণমাধ্যমগুলিতে এক ধরণের ‘যুদ্ধং দেহি’ মনোভাব দেখা যাচ্ছে। প্রতিবেদনের ভাষা, উপস্থাপনা এবং তথ্য যাচাই না করেই তা প্রকাশ করা হচ্ছে ভারতের এক শ্রেণীর গণমাধ্যমে। 

গণমাধ্যমের একাধিক বিশ্লেষক বলছেন, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের গণমাধ্যমে একটা বিরোধিতার সুর দেখা যাচ্ছিল। তবে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারির পরে তা চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। হাজার হাজার হিন্দুকে বাংলাদেশে হত্যা করা হচ্ছে, হিন্দু নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে’ এধরণের বাক্য প্রায়শই শুনতে পাওয়া যাচ্ছে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারির বিরুদ্ধে ভারতে সংগঠিত বিক্ষোভগুলি থেকে।

বিশ্লেষকরা বলছেন প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক ভাষণ, কাগজ-টিভির প্রতিবেদন এবং সামাজিক মাধ্যম সব মিলিয়ে যে আখ্যান তৈরি করা হচ্ছে ভারতে, তা দেশটির হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে অনেক সাধারণ মানুষও বিশ্বাস করে ফেলছেন।

ভারতের তথ্য যাচাই ও ভুয়া খবরের খোঁজ দেয় এরকম একটি ওয়েবসাইট ‘অল্ট নিউজ’ গত কয়েকদিনে বাংলাদেশ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি খবর খুঁজে পেয়েছে, যেগুলিতে ‘বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপরে আক্রমণ’ হচ্ছে বলে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়েছে। এইসব ভুয়া টুইট বা ফেসবুক পোস্টগুলিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে সেভ বাংলাদেশি হিন্দুজ’ বা ‘অল আইজ অন বাংলাদেশি হিন্দুজ’ অথবা ‘প্রে ফর বাংলাদেশি হিন্দুজ’। আরও একটি বাক্য এধরনের ভুয়া পোস্টগুলিতে দেখা গেছে, যার মোটামুটি বাংলা অনুবাদ হল জিহাদিরা বাংলাদেশের হিন্দুদের কেটে ফেলছে অথচ বিশ্ব একেবারে চুপ করে আছে।

অল্ট নিউজের সম্পাদক প্রতীক সিনহা বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপরে হামলা হচ্ছে এটাও যেমন ঘটনা, তেমনই এটাও সত্য যে বহু ভুয়া খবর, অসত্য তথ্য সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করা হচ্ছে মূলত দক্ষিণপন্থী সামাজিক মাধ্যমগুলোতে। এর মধ্যে অনেক ভুয়া তথ্যই আবার মূলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হচ্ছে- এটা আমরা দেখতে পাচ্ছি।

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কয়েকটি ভিডিও একসঙ্গে জুড়ে একটি পোস্ট করেছিলেন, যার মধ্যে অল্ট নিউজ দেখতে পেয়েছে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ওই প্রথম ভিডিওটিও। এই টুইটের ডেস্ক্রিপশনে তিনি লিখেছিলেন যে কীভাবে সনাতনী হিন্দুদের ওপরে আক্রমণ হচ্ছে। তিনি অবশ্য ‘জিনোসাইড’ বা গণহত্যা যে এই ঘটনাগুলিকে এখনও বলা যায় না, সেটাও লিখেছিলেন।

আবার এরকমও ভিডিও দেখা গেছে, যেখানে একটি অগ্নিকান্ডে দেখানো হয়েছে। বলা হচ্ছে চট্টগ্রামের একটি হিন্দু বসতিতে আগুন দেওয়ার কথা। ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ডে প্রথম কয়েক সেকেন্ড সম্ভবত ‘হিন্দি’তে কথা বলা হচ্ছে এবং তার পরের অংশটিতে খুবই শান্ত স্বরে বর্ণনা দেওয়া হচ্ছে অগ্নিকান্ডের। ওই একই ভিডিও অন্তত দুটি ভিন্ন ভয়েস ওভার সহ যে শেয়ার করা হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে, তা বিবিসি বাংলা দেখেছে। ভিডিওটি শেয়ার হওয়ার পরে সেটি অন্তত একটি বাংলা টিভি চ্যানেল দীর্ঘক্ষণ ধরে তা দেখিয়েছে।
 
‘নেটওয়ার্ক ১৮’-এর পূর্বাঞ্চলীয় সম্পাদক মি. মজুমদার বলছিলেন, “কোনও তথ্য বা ভিডিও পেলে সেটা যাচাই বাছাইয়ের ব্যাপারটাই এখন উঠে গেছে। আমরা যে সাংবাদিকতার শিক্ষা পেয়েছি, ২৫-৩০ বছর ধরে কাজ করছি, তাদের সঙ্গে এখনকার সাংবাদিকদের কাজের ধরণটাই বদলে গেছে। এরা যে কোনও ঘটনা ঘটলে সেটা যাচাই না করেই অন্য চ্যানেলে দেখতে পেলেই তা চালিয়ে দেয়। ব্রেকিং নিউজের প্রতিযোগিতা চলছে এটা! কে কত আগে সেনসেশন তৈরি করতে পারবে, সেই লড়াই চলছে চ্যানেলগুলোর মধ্যে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে যা সংবাদমাধ্যমে দেখানো হচ্ছে, তা সত্যিই সাংবাদিকতা নয়, বলছিলেন মি. মজুমদার।

বিভিন্ন ভারতীয় টিভি চ্যানেলে উঁচু গলায়, চিৎকার করে কথা বলে বাংলাদেশ সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলি পরিবেশন করা হচ্ছে, যেন একটা যুদ্ধ বেঁধেছে বাংলাদেশের সঙ্গে! সেই ‘যুদ্ধে’ একদিকে বাংলাদেশের হিন্দুরা, অন্যদিকে মুসলমানরা – এমনভাবেই পরিবেশন করা হচ্ছে খবর।

শহীদ

×