ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণে চীন শীর্ষে

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ৩১ জানুয়ারি ২০১৮

বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণে চীন শীর্ষে

বিশ্বে বিদ্যুতচালিত গাড়ির জগতে অদ্বিতীয় নাম টেসলা। টেসলা কোম্পানি এমন গাড়ি উৎপাদনে বছরের পর বছর ধরে শীর্ষস্থানটি দখল করে আছে। কিন্তু ইদানীং টেসলাকে এই অবস্থান ধরে রাখতে প্রবল বেগ পেতে হচ্ছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ঐতিহ্যবাহী মোটরগাড়ি কোম্পানিগুলোও বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে এবং তাদের এ সংক্রান্ত প্রযুক্তির বিকাশে বিলিয়নকে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। অনেকের হয়ত জানা নেই যে বেশকিছু চীনা কোম্পানিও বৈদ্যুতিক গাড়ি বানাচ্ছে এবং বছরে হাজার হাজার এমন গাড়ি বাজারে ছাড়ছে। সুতরাং বৈদ্যুতিক গাড়ি আর টেলসার একার নয়। বর্তমানে বিশ্বে যত যাত্রীবাহী যান আছে তার এক শতাংশেরও কম বিদ্যুতচালিত গাড়ি। ২০৪০ সালে রাস্তায় নামা যাবতীয় গাড়ির এক-তৃতীয়াংশই হবে এমন গাড়ি। এই গাড়ি নির্মাণে কোন্ দেশ আধিপত্য করবে সেটা গাড়ি তৈরির লড়াইয়ের দ্বারাই নির্ধারিত হবে। বর্তমানে চীন এদিক থেকে সবার আগে এগিয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্ড মোটর কোম্পানির নির্বাহী চেয়ারম্যান উইলিয়াম সি ফোর্ড জুনিয়র সম্প্রতি সাংহাইয়ে বলেন, এটা পরিষ্কার যে চীন বৈদ্যুতিক গাড়ির উন্নয়নে নেতৃত্ব দেবে। চীন এই শিল্পে বিপুল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করেছে। বৈদ্যুতিক গাড়ি কিনতে চীন সরকার ক্রেতাদের গাড়ি প্রতি ১৫ হাজার ডলারের ভর্তুকি দিয়ে থাকে, গাড়ি নির্মাতাদের মধ্যে যারা বৈদ্যুতিক গাড়ি বানায় না তাদের প্রচলিত গাড়ি বিক্রি বাধাগ্রস্ত করার হুমকি দেয় এবং সারাদেশের মহাসড়ক নেটওয়ার্কে চার্জিং স্টেশনের মতো বৈদ্যুতিক গাড়ির অবকাঠামোয় অর্থায়ন করে থাকে। গত ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে চীন দারুণ পরিবেশ দূষণ করে থাকে এমনি ধরনের ৫শ’রও বেশি মডেলের গাড়ির উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস পত্রিকার এক বিশ্লেষণ থেকে জানা যায় যে, ২০২০ সালের পূর্ববর্তী অর্ধ দশকে চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ির ভর্তুকির পেছনে ৬ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করার কথা। এই ভর্তুকি সুবিধাকে কাজে লাগিয়েই বিওয়াইডি অটো, গ্রেটওয়াল মোটর ও লাইফান অটোর মতো চীনা মোটরগাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো ২০২০ সালে বার্ষিক ৪৫ লাখেরও বেশি বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। অন্যদিকে একই সময় টেসলা প্রায় ১০ লাখ গাড়ি বানাতে পারবে বলে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির তথ্যে জানা গেছে। এ পর্যন্ত চীনের বৈদ্যুতিক গাড়িগুলো বহুলাংশে উন্নয়নশীল বিশ্বের উপযোগী পণ্য হিসেবে রয়ে গেছে। অন্যদিকে টেসলা ইউরোপের বাজারে ব্যবসা পেয়েছে। তবে চীনের মোটরগাড়ি নির্মাতারা সম্প্রতি বিশ্ববাজারে তাদের পরিধিকে প্রসারিত করার উদ্যোগ জোরদার করে তুলেছে এবং অন্তত পক্ষে একটি কোম্পানি জিএসি মোটর আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গাড়ি বিক্রির পরিকল্পনা নিয়েছে। টেসলা কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও এলোন মুস্ক বলেন, ‘কখনও কখনও মানুষের এই ধারণা হয় যে, টেকসই জ্বালানির উন্নয়নে চীন হয় ইচ্ছা করেই গড়িমসি করছে নয়ত কোন না কোনভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পেছনে পড়ে থাকছে। কিন্তু তা ঠিক নয়। বরং তারা এক্ষেত্রে এ যাবত বিশ্বের সবচেয়ে মারমুখী ভূমিকা নিয়েছে। ওদিকে টেসলা কোম্পানির অবস্থা কি রকম? টেসলার সাম্প্রতি তথ্য উপাত্ত দেখে মনে হবে বিশ্বকে বৈদ্যুতিক গাড়ির যুগে উত্তরণ ঘটানোর স্বপ্নকে থমকে পড়েছে। গত বছর কোম্পানিটি ৩৫ হাজার ডলার দামের মডেল ও গাড়ির ডেলিভারি দিতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেয়েছে। এলোন মুস্ক অবশ্য বলেছেন যে টেসলা ব্যাটারি তৈরি সংক্রান্ত অভ্যন্তরীণ কিছু বিলম্বের কারণে এমনটি ঘটেছে। তবে সামাজিক মাধ্যমগুলোকে খদ্দেরদের নানা রকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে দেখা গেছে এবং কোম্পানি ঘোষণা করছে গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে রেকর্ড পরিমাণ লোকসান হয়েছে এবং সেটা ৬০ কোটি ডলারেরও বেশি। টেসলা বলেছে এ বছরের মাঝামাঝি তারা প্রতি সপ্তাহে ৫ হাজার সংখ্যক মডেল ও গাড়ি বানাবে। এর আগে তাদের গত বছরই ওই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর কথা ছিল। অন্যদিকে তথ্য পরিসংখ্যানে জানা যায় যে চীনে ২০১৭ সালে ৭ লাখ বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি হয়েছে। ২০৪০ সাল নাগাদ বিশ্বে যত গাড়ি বিক্রি হবে তার মধ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ির হার হবে ৫৪ শতাংশ। চলমান ডেস্ক সূত্র : টাইম
×