
.
বেলস পালসি কী
বেলস পালসি বলতে মুখের পেশির প্যারালাইসিস বোঝায়। বেলস পালসিতে পেশিগুলোর অস্থায়ী দুর্বল বা পক্ষাঘাত ঘটে। যখন আংশিক বা সম্পূর্ণ প্যারালাইজড হয়ে যায় তখন ফেসিয়াল প্যারালাইসিস বা বেলস পালসি বলে। হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাসের ও হার্পিস জোস্টার ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে বেলস পালসি হয়। এছাড়া সারকোডোসিস, লাইম ডিজিজের কারণেও বেলস পালসি হতে পারে। শীতের পরে গরম অথবা গরমের পর শীতকালে ভাইরাসের বংশ বৃদ্ধি ও সংক্রমণ বেশি হয়।
যে কোনো বয়সের নারী-পুরুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে তরুণদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। বেলস পালসি দুইভাবে হতে পারে। এক. মুখের এক পাশ কপাল থেকে শুরু করে একদম থুতনি পর্যন্ত যদি প্যারালাইজড হয়ে যায়। এই অবস্থাকে লোয়ার মোটর নিউরন টাইপ অব ফেসিয়াল পালসি বলে। দুই. কপালের অংশ বাদে চোখ থেকে নিচের অংশ প্যারালাইজড হলে সেটাকে আপার মোটর নিউরন টাইপ অব ফেসিয়াল পালসি বলে।
লক্ষণ
মুখ যে কোনো একদিকে বাঁকা হয়ে যাবে। ডান দিকে বেলস পালসি হলে মুখ বাম দিকে এবং বাম দিকে হলে ডান দিকে বাঁকা হবে। এক চোখ বন্ধ হলে অন্যটি বন্ধ হবে না। খাবার খেতে গেলে বেলস পালসিতে আক্রান্ত পাশের খাবার আটকে থাকবে। খাবার চিবিয়ে খেতে পারবে না, খাবার আটকে যাবে। কুলি করতে গেলে মুখের একপাশ দিয়ে পানি বের হয়ে যাবে।
রোগ নির্ণয়
একজন নিউরো বিশেষজ্ঞ রোগী দেখে ও রোগের ইতিহাস জেনে রোগ নির্ণয় করবেন। শুধু মুখই আক্রান্ত না অন্য কোথাও হয়েছে এটা দেখবেন। অন্য কোথাও যেমন হাত পা আক্রান্ত হলে সেটা মাইল্ড স্ট্রোকের লক্ষণ ধরতে হবে। কারণ বেলস পালসি নির্ণয় করতে ডাক্তারি পরীক্ষা লাগে না। যাদের ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে তাদের বেলস পালসি হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এ জন্য বেলস পালসি রোগীদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ আছে কিনা শুরুতেই দেখে নিতে হবে।
চিকিৎসা
ফেসিয়াল নার্ভ আক্রান্ত হলে এই রোগ হয়। এতে ফেসিয়াল নার্ভ ফুলে যায়। এই ফুলা কমানোর জন্য স্বল্প মেয়াদি হাই ডোজের স্টেরয়েড দেওয়া হয়। এতে দ্রুত ফেসিয়াল নার্ভের ফুলা কমে যায়। ফলে তার উপসর্গও দ্রুত কমতে থাকে। এন্টিভাইরাল ড্রাগও আছে এসমস্যায়। ওষুধের চেয়ে মূল চিকিৎসা হচ্ছে ফিজিওথেরাপি। ফিজিওথেরাপি ও যথাযথ ওষুধে রোগী এক মাসের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। বয়স্কদের সুস্থ হতে সময় লাগে। ৯০ শতাংশ পুরোপুরি সুস্থ হয়। ১০ শতাংশের ক্ষেত্রে কিছু দুর্বলতা থাকে। যেমন, মুখ কিছুটা বাঁকা থেকে যেতে পারে। তবে দীর্ঘ সময় ধরে ফিজিওথেরাপি দিতে পারলে সে পুরোপুরি ঠিক হয়ে যাবে। সঠিক চিকিৎসা পেতে হলে অবশ্যই মেডিসিন নিউরোলজিস্টদের কাছে যেতে হবে।
লেখক : অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতাল।
চেম্বার : পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লি, শাখা -২ (৫ম তলা) মোহাম্মদপুর শ্যামলী, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের বিপরীতে ঢাকা। মোবাইল : ০১৭৯৮৫৬০০৪৪, ০১৮৬৫৪৪৪৩৮
প্যানেল