ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ জুলাই ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

ফ্যাটি লিভারে সতর্কতা ও ভালো থাকা

ডা. বুলবুল রহমান

প্রকাশিত: ২০:১৩, ৩০ জুন ২০২৫

ফ্যাটি লিভারে সতর্কতা ও ভালো থাকা

সুস্থ লিভার ও ফ্যাটি লিভার

ফ্যাটি লিভার ডিজিজ কী
বর্তমানে প্রায় প্রতিদিন আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে ১৮ বছরের তরুণ থেকে ৭০ বছরের বয়স্ক মানুষের ফ্যাটি লিভার ডিজিজ রয়েছে রিপোর্ট তাই পাওয়া যায়। বর্তমান বিশ্বে ফ্যাটি লিভার একটি বড় সমস্যা। বাংলাদেশে এ রোগের হার ২৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি ৪ জনে ১ জন আক্রান্ত। অন্যতম কারণ হলো অ্যালকোহল ও নন-আলকোহলিক স্ট্যায়াটো হেপাটাইটিস।
অ্যালকোহলিক লিভার ডিজিজ
মদ্যপান পশ্চিমা দেশে অন্যতম কারণ। অতিরিক্ত মদ্যপান থেকে ৯০ শতাংশ ফ্যাটি লিভার বিকশিত হয় এবং ২৫ শতাংশ অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিস এবং ১৫ শতাংশ লিভার সিরোসিস তৈরি করে। যারা মদ্যপান ছেড়ে দেন তাদের অনেকের ঝুঁকি কমে যায়।
নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ
যাদের মদ্যপানের ইতিহাস থাকে না এবং ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত তারা এই গ্রুপে পড়েন।
যখন লিভারের ৫-১০ পার্সেন্টের বেশি চর্বি জমা হয় তাকে বলা হয় ফ্যাটি লিভার। চাহিদার অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ ও কায়িক পরিশ্রমের অভাব, জিনগত প্রবণতা, ইনসুলিন প্রতিরোধ, জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের কারণে এই রোগ বেশি দেখা যাচ্ছে।
ঝুঁকিতে কারা :
মেটাবলিক সিনড্রোমে যারা ভোগেন
১) পেটের সামনের এলাকার স্ফীত স্থূলতা
২ ) উচ্চ রক্তচাপ
৩) ডায়াবেটিস ও প্রি ডায়াবেটিস
৪) কোলেস্টেরলের অসুবিধা -এলডিএল বেশি এইচডিএল কম ও ট্রাই গ্লিসারাইড বেশি।
নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ এর প্রায় ১০-১৫ শতাংশ নন-অ্যালকোহলিক স্ট্যোয়াটোহেপাটাইটিস (NASH) এ রূপান্তরিত হয়। লিভার কোষগুলো স্ফীত হয়- প্রদাহের সৃষ্টি হয় ও ধ্বংস হয়- পরিবর্তে লিভারে শক্ত টিস্যু জমা হয় (ফাইব্রোসিস) হয়। পুরো লিভার ফাইব্রোসিস হলে সেটাকে সিরোসিস বলে।
ন্যাশ এর লক্ষণ :
১) কোনো লক্ষণ নাও থাকতে পারে।
২) পেটের ডান দিকে উপরের অংশে অস্বস্তি ভাব
৩) ক্লান্তি
৪) দুর্বলতা।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
১) আলট্রাসনোগ্রাম করলে বেশির ভাগ মানুষের এ রোগ নির্ণয় করা যায়। লিভারে ৫-১০ শতাংশ ফ্যাট জমা হলে গ্রেড ১.১০-২৫ শতাংশ জমা হলে গ্রেড ২ ও ৩০ শতাংশের বেশি জমা হলে -গ্রেড ৩ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
২) লিভার ফাংশন টেস্ট (এএসটি ও এএলটি)
৩) ফাইব্রোস্ক্যানের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা। বিশেষ প্রয়োজনে লিভার বায়োপসি করার দরকার হয়।
বর্তমান পৃথিবীতে ও বাংলাদেশে নন-অ্যালকোহলিক স্ট্যায়াটো হেপাটাইটিস (NASH) -সিরোসিস ও ক্যান্সারের লিভার ক্যান্সারের অন্যতম কারণ।
ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসা কি
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে লক্ষণ বেঁধে মেডিসিন খেয়ে ও কিছু পরামর্শ দিক নির্দেশনা বিশেষ করে খাবার দাবারে সচেতন থেকে ভালো থাকা যায়। যদিও কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা কম। তবে জীবন যাত্রার ইতিবাচক পরিবর্তনই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
১) শরীরের ওজন কমানো (কমপক্ষে শতকরা ১০ ভাগ) প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসায়।
২) প্রতিদিন ব্যায়াম করা-অন্তত ৩০ মিনিট দৈনিক একটু জোরে হাঁটা কার্যকর একটি ব্যায়াম ওজন কমানোর জন্য।
৩ ) এলডিএল কোলেস্টেরল ও ট্রাই গ্লিসারাইড সহনীয় পর্যায়ে রাখা।
৪) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
৫ ) অ্যালকোহল পরিহার করা।
৬) বিশ বিশেষ করে ধূমপান পরিহার করুন।
কি খাবেন :
১) শর্করা জাতীয় খাবার যেমন ভাত, রুটি, পাউরুটি, আলু ইত্যাদি পরিমাণে কম খেতে হবে। ২) শাকসবজি, তাজা ফলমূল স্বাভাবিক পরিমাণে খেতে পারবেন।
 ৩) পর্যাপ্ত মাছ (তৈলাক্ত অংশ ছাড়া) খেতে পারবেন। সামুদ্রিক মাছ, ইলিশ মাছ, রূপচাঁদা এবং অন্যান্য মাছ পরিমিত সেবন করুন।
৪) জটিল শর্করা ওটস মিল জবের আটা খাবেন।
কি কম খাবেন
১) চিনি
২) ভাজাপোড়া, চিকেন ফ্রাই, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, যে কোনো ফার্স্টফুড আপনার জন্য ক্ষতিকারক।
৩) লবণ
৪) লাল মাংস-গরু, খাসি ইত্যাদি
৫) কোমল পানীয়, আইসক্রিম, পেস্ট্রি। ইত্যাদি কিছু বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করে যেতে হবে। যদি আগামী দিনগুলোতে আপনি সুস্থ ও নিরাপদ থাকতে চান।

লেখক : সিনিয়র কনসালটেন্ট (বিএইচএমএস) ঢাকা, (বিশেষ প্রশিক্ষণ: ইন্ডিয়া, জার্মান,)
চেম্বার: জার্মান হোমিও হেল্থ ক্লিনিক (মোল্লা ভবন) তৃতীয় তলা। এইচ-২৩, আমতলী, ফ্লাইওভারের পশ্চিম পাশে, এয়ারপোর্ট রোড, ঢাকা। হটলাইন :
০১৭১৪-২৫-১৫-১৫

প্যানেল

×