ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

হঠাৎ ঘাড়ে ব্যথার প্রতিকার: দ্রুত আরাম পেতে যা করবেন

প্রকাশিত: ০৮:১৮, ১৮ জুন ২০২৫

হঠাৎ ঘাড়ে ব্যথার প্রতিকার: দ্রুত আরাম পেতে যা করবেন

সংগৃহীত প্রতীকী ছবি

হঠাৎ ঘাড়ে ব্যথা খুবই সাধারণ একটি সমস্যা, যা সাধারণত ভুল ভঙ্গিতে ঘুমানো, দীর্ঘক্ষণ একই ভঙ্গিতে বসে কাজ করা, হঠাৎ ঘাড় বাঁকানো বা মানসিক চাপের কারণে হতে পারে। এই ব্যথা তীব্র হতে পারে এবং ঘাড় নড়াচড়া করা কঠিন করে তোলে। তবে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করে এবং সতর্কতা অবলম্বন করে দ্রুত এই ব্যথা থেকে আরাম পাওয়া সম্ভব। যদি ব্যথা তীব্র হয় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

দ্রুত আরামের জন্য যা করবেন:

১. বিশ্রাম:

  • ঘাড়ে ব্যথা হলে প্রথমেই পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। যে কাজগুলো ঘাড়ে চাপ সৃষ্টি করে, সেগুলো থেকে বিরত থাকুন। ঘাড়কে খুব বেশি নড়াচড়া না করে শিথিল রাখার চেষ্টা করুন।

২. ঠান্ডা ও গরম সেঁক:

  • প্রথম ২৪-৪৮ ঘণ্টা (ঠান্ডা সেঁক): ব্যথার শুরুতে এবং যদি ফোলা বা প্রদাহ থাকে, তবে ঠান্ডা সেঁক ব্যবহার করুন। একটি কাপড়ে মোড়ানো বরফের প্যাক বা ঠান্ডা জলের বোতল ১৫-২০ মিনিটের জন্য আক্রান্ত স্থানে লাগান। এটি রক্তনালীকে সংকুচিত করে ফোলা এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে। দিনে কয়েকবার এটি করতে পারেন।
  • ৪৮ ঘণ্টা পর (গরম সেঁক): যদি ব্যথা পেশী শক্ত হওয়ার কারণে হয় এবং ফোলা না থাকে, তবে গরম সেঁক ব্যবহার করুন। গরম ভেজা তোয়ালে, হিটিং প্যাড বা গরম জলের বোতল ১৫-২০ মিনিটের জন্য ঘাড়ে লাগান। গরম সেঁক পেশী শিথিল করে এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে ব্যথা উপশম করে। গরম পানিতে গোসল করাও উপকারী হতে পারে।

৩. হালকা স্ট্রেচিং বা ব্যায়াম:

  • ব্যথা কিছুটা কমলে ঘাড়ের হালকা স্ট্রেচিং করুন। ধীরে ধীরে ঘাড়কে একপাশ থেকে অন্যপাশে ঘোরান, উপর-নিচ করুন এবং কানকে কাঁধের কাছাকাছি আনার চেষ্টা করুন। তবে কোনো ব্যথা হলে তাৎক্ষণিকভাবে থামুন। জোর করে কোনো নড়াচড়া করবেন না।

৪. সঠিক ভঙ্গি:

  • ঘুমের ভঙ্গি: ঘুমানোর সময় ঘাড় যেন সোজা থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন। খুব উঁচু বা অতিরিক্ত নরম বালিশ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। একটি মাঝারি উচ্চতার বালিশ ব্যবহার করুন যা আপনার ঘাড়ের প্রাকৃতিক বক্রতা বজায় রাখে। চিত হয়ে ঘুমানো বা পাশ ফিরে ঘুমানো ঘাড়ের জন্য ভালো। পেটে ভর দিয়ে ঘুমানো এড়িয়ে চলুন।
  • বসার ভঙ্গি: কম্পিউটার বা ডেস্কের সামনে দীর্ঘক্ষণ কাজ করার সময় সঠিক ভঙ্গিতে বসুন। আপনার চোখ যেন মনিটরের সমান্তরালে থাকে এবং ঘাড় যেন সামনের দিকে ঝুঁকে না যায়। প্রতি ৩০-৪০ মিনিট পরপর উঠে দাঁড়ান এবং হালকা স্ট্রেচিং করুন।

৫. ব্যথানাশক ওষুধ:

  • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওভার-দ্য-কাউন্টার ব্যথানাশক ওষুধ যেমন - প্যারাসিটামল, আইবুপ্রোফেন (NSAIDs) সাময়িক ব্যথা উপশমে সাহায্য করতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

৬. ম্যাসাজ:

  • আক্রান্ত স্থানে হালকা ম্যাসাজ করলে পেশী শিথিল হয় এবং ব্যথা কমে। ম্যাসাজের জন্য সরিষার তেল বা নারকেল তেল সামান্য গরম করে ব্যবহার করতে পারেন। তবে তীব্র ব্যথা বা প্রদাহ থাকলে ম্যাসাজ এড়িয়ে চলুন।

৭. মানসিক চাপ কমানো:

  • মানসিক চাপ পেশী শক্ত করে ঘাড়ের ব্যথা বাড়াতে পারে। যোগা, মেডিটেশন বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।

কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন?

যদি ঘাড়ের ব্যথা:

  • তীব্র হয় এবং ঘরোয়া প্রতিকারেও ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে না কমে।
  • হাতে ঝিনঝিন করা, অসাড়তা বা দুর্বলতার সাথে থাকে।
  • বাহু বা পায়ে ছড়িয়ে পড়ে।
  • জ্বর, মাথাব্যথা বা ঘাড় নাড়াতে না পারার মতো অন্য কোনো উপসর্গের সাথে দেখা যায়।
  • কোনো আঘাত, পড়ে যাওয়া বা দুর্ঘটনার পর হয়।

এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন, কারণ এটি আরও গুরুতর কোনো সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।

সাব্বির

×