রোদে ভেজা সকালের মতোই প্রাকৃতিক, ভিটামিন ‘ডি’ আমাদের শরীরের জন্য এক অমূল্য উপাদান। হাড় শক্ত রাখা থেকে শুরু করে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানো পর্যন্ত প্রতিদিনের সুস্থতায় এটি নীরবে কাজ করে যায়। কিন্তু আজকের ব্যস্ত জীবন, ইনডোরে বসে কাজ, সানস্ক্রিনে ঢাকা ত্বক কিংবা অস্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাসে এই দরকারি ভিটামিনের ঘাটিতে ভুগছে বিশ্বজুড়ে প্রায় ১০০ কোটির বেশি মানুষ।
ভিটামিন ডি-এর ঘাটির লক্ষণ সবসময় খুব স্পষ্ট নয়। কখনও তা প্রকাশ পায় ত্বকে হালকা চুলকানির মাধ্যমে, কখনও বা পায়ের ক্লান্তি, ব্যথা বা দুর্বলতায়। এই ছোট ছোট সংকেতগুলো আগেভাগে চিনে নিতে পারলেই বড় জটিলতা এড়ানো যায়। চলুন জেনে নিই, ভিটামিন ডি-এর অভাব ত্বক ও পায়ে কীভাবে জানান দেয়।
ক্ষত শুকাতে দেরি হচ্ছে?
ছোটখাটো কাটাছেঁড়া বা ঘা শুকাতে বেশি সময় নিচ্ছে? বারবার ইনফেকশন হচ্ছে? এসবই হতে পারে আপনার শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটির ইশারা। কারণ, এই ভিটামিন ত্বকের কোষ পুনর্গঠনে এবং ক্ষতস্থানে নতুন টিস্যু তৈরিতে সহায়তা করে। যদি দেখেন একটা ছোট ক্ষতও দীর্ঘদিন ভাল হচ্ছে না, তাহলে সেটা অবহেলা না করে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।
ত্বক কেন এত চুলকাচ্ছে বা রুক্ষ?
হয়তো নতুন কোনো লোশন ব্যবহার করছেন, ভাবছেন সেটার প্রতিক্রিয়াতেই চুলকানি হচ্ছে। কিন্তু প্রতিদিনের মতোই লোশন ব্যবহার করেও যদি ত্বক চুলকায়, শুষ্ক হয় বা আঁশযুক্ত হয়ে যায়, তাহলে সেটা হতে পারে ভিটামিন ডি-এর ঘাটির অন্যতম সাধারণ লক্ষণ। এই ভিটামিন আমাদের ত্বককে আর্দ্র রাখে, বাইরের ধুলাবালি বা অ্যালার্জেন থেকে রক্ষা করে। ঘাটির কারণে ত্বকের স্বাভাবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে।
ত্বকে প্রাণ নেই, উজ্জ্বলতা হারাচ্ছে?
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হঠাৎ মনে হচ্ছে ত্বকটা যেন বিবর্ণ লাগছে? আগের সেই প্রাণ বা উজ্জ্বলতা যেন আর নেই? পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি না থাকলে এমনটা হতেই পারে। এটি মেলানিন উৎপাদনে সহায়তা করে, যা ত্বকের স্বাভাবিক রঙ ও প্রাণবন্ত ভাব ধরে রাখতে সাহায্য করে। যারা দীর্ঘ সময় ঘরের ভেতরে থাকেন বা গাঢ় ত্বকের অধিকারী, তাদের মধ্যে এই লক্ষণ আরও বেশি দেখা যায়।
সিঁড়ি ভাঙতে কষ্ট হচ্ছে? চেয়ার থেকে উঠতেও সমস্যা?
দিনের শেষে একটু হাঁটতেই পায়ে ব্যথা? বা সিঁড়ি উঠতে গিয়ে হাঁপিয়ে যাচ্ছেন? মনে হচ্ছে পেশিতে শক্তি নেই? এসবই হতে পারে পায়ে ভিটামিন ডি ঘাটির ইঙ্গিত। এই ভিটামিন শুধু হাড় নয়, পেশি শক্ত রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ। এর অভাবে পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে, হাড়ে ব্যথা শুরু হয়, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে পায়ের গঠনেও বিকৃতি দেখা দিতে পারে।
অকারণ ঘাম? বিশেষ করে মুখ বা মাথায়?
ঠান্ডা আবহাওয়া, অথচ মাথা ঘেমে একাকার? বিশেষ করে মুখে ঘাম হচ্ছেই? এটা হতে পারে ভিটামিন ডি ঘাটির সূচনালগ্নের একটি ইঙ্গিত, যেটা আমরা সাধারণত পাত্তা দিই না। এই ভিটামিন শরীরের ঘামগ্রন্থি নিয়ন্ত্রণে রাখে, তাই ঘাটির কারণে ঘামের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়।
ভিটামিন ডি-এর অভাব আমাদের শরীরকে ধীরে ধীরে দুর্বল করে তোলে নীরবে, নিঃশব্দে। অথচ আমাদের ত্বক ও পা সেই ঘাটির প্রথম সংকেত পাঠাতে শুরু করে অনেক আগেই। শুধু দরকার, সেই সংকেতগুলো চিনে নেওয়ার চোখ।
সূর্যের আলোকে ভয় না পেয়ে বরং সকালের কিছুটা সময় রোদে হাঁটা, খাদ্যতালিকায় ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার রাখা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ এই সামান্য অভ্যাসগুলোই পারে আপনাকে বড় অসুস্থতার হাত থেকে রক্ষা করতে।
সুস্থ থাকতে হলে শরীরের কথা শুনুন। কারণ অনেক সময় আমাদের শরীরই আমাদের সবচেয়ে বড় সতর্কবার্তাটি দেয়।
সূত্র:https://tinyurl.com/deyvxrnx
আফরোজা
