ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ফ্যাটি লিভারের জন্য দায়ী ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি? বিজ্ঞানীরা জানালেন চমকে দেওয়া তথ্য!

প্রকাশিত: ১৩:০২, ২০ মে ২০২৫; আপডেট: ১৩:০৩, ২০ মে ২০২৫

ফ্যাটি লিভারের জন্য দায়ী ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি? বিজ্ঞানীরা জানালেন চমকে দেওয়া তথ্য!

বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ ফ্যাটি লিভার রোগে ভুগছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD)। আশঙ্কাজনকভাবে, এই রোগটি এখন শিশু ও কিশোরদের মাঝেও ব্যাপক হারে বেড়ে চলেছে। বিভিন্ন কারণেই এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে, তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতির সঙ্গে ফ্যাটি লিভারের সম্পর্ক নিয়ে নতুন প্রশ্ন উঠেছে।

ফ্যাটি লিভার এমন একটি অবস্থা, যেখানে যকৃতে অতিরিক্ত চর্বি জমা হয়। সমস্যাটি সবচেয়ে বিপজ্জনক তখনই হয়ে ওঠে, যখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই রোগের তেমন কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। ফ্যাটি লিভার প্রধানত দুই ধরনের-নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার (NAFLD) ও অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার (AFLD)। যাঁরা অধিক মাত্রায় অ্যালকোহল সেবন করেন, তাঁদের মধ্যে AFLD দেখা যায়। আর যারা অ্যালকোহল খান না বা খুব অল্প খান, তাঁদের মধ্যেই দেখা যায় NAFLD।

যদিও উপসর্গ নাও থাকতে পারে, তবে অনেক সময় কিছু লক্ষণ দেখা যায়, যেমন,নিরবচ্ছিন্ন ক্লান্তি, শরীর দুর্বল লাগা, উপরের ডান পেটে চাপ বা ভারী লাগা, অজানা কারণে ওজন কমে যাওয়া, ত্বক বা চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া (যাকে জন্ডিস বলা হয়), পেট বা পায়ে পানি জমা, চুলকানি, এমনকি মনোযোগে ঘাটতি বা বিভ্রান্তি (যা যকৃতের বিষাক্ততা থেকে হতে পারে)। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ভিটামিন বি১২ বা কোবালামিন মানবদেহে রক্তকণিকা তৈরি, ডিএনএ সংশ্লেষ ও স্নায়ুর কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য। এটি সাধারণত মাংস, ডিম ও দুগ্ধজাত খাদ্যে পাওয়া যায়। ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি হলে একাধিক শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, এবং দীর্ঘদিন চিকিৎসা না হলে তা স্নায়ুতন্ত্রের স্থায়ী ক্ষতিও ডেকে আনতে পারে।

২০২২ সালে একটি গবেষণায় দেখা যায়, ভিটামিন বি১২ ও ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি যেভাবে ফ্যাটি লিভারের জটিল রূপ তৈরি করতে পারে, ঠিক সেভাবেই এই দুটি উপাদানের সাপ্লিমেন্ট তা প্রতিরোধও করতে পারে। বর্তমানে বিশ্বে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় ২৫ শতাংশ NAFLD-এ আক্রান্ত। এই রোগ যখন আরও গুরুতর হয়ে যকৃতের প্রদাহ ও আঁশ গঠনের দিকে যায়, তখন তাকে বলা হয় নন-অ্যালকোহলিক স্টিয়াটোহেপাটাইটিস বা NASH।

বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই জানতেন, NASH রোগীদের শরীরে হোমোসিস্টেইন নামে একটি অ্যামাইনো অ্যাসিডের মাত্রা বেশি থাকে। কিন্তু এটি কীভাবে রোগের গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত, তা পরিষ্কার ছিল না। ডিউক-এনইউএস কার্ডিওভাসকুলার অ্যান্ড মেটাবলিক প্রোগ্রামের গবেষক ড. মধুলিকা ত্রিপাঠী, ড. ব্রিজেশ সিংহ এবং তাঁদের আন্তর্জাতিক গবেষক দল প্রাক-ক্লিনিকাল ও মানব মডেলে প্রমাণ করেছেন, হোমোসিস্টেইন লিভারের গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন 'সিনট্যাক্সিন ১৭'-এর কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। এতে ফ্যাট বিপাক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এবং রোগের অবনতি ঘটে।

তবে গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন বি১২ ও ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট দিলে সিনট্যাক্সিন ১৭ পুনরায় সক্রিয় হয়, অটোফ্যাগি প্রক্রিয়া সচল হয় এবং লিভারের প্রদাহ ও আঁশ পড়ার গতি কমে যায়। গবেষকদের মতে, এই দুটি সহজলভ্য ও নিরাপদ সাপ্লিমেন্ট ভবিষ্যতে NASH প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এমনকি রক্তে ও যকৃতে হোমোসিস্টেইনের মাত্রা নির্ণয় করেও রোগের তীব্রতা বোঝা যেতে পারে।

গবেষণার জ্যেষ্ঠ লেখক প্রফেসর পল এম. ইয়েন বলেছেন, “ভিটামিন বি১২ ও ফলেট, যেগুলোর নিরাপত্তা প্রোফাইল অনেক ভালো এবং যেগুলোকে ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট হিসেবে গণ্য করে মার্কিন এফডিএ, তা যদি NASH প্রতিরোধ ও প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যায়, তাহলে তা শুধু চিকিৎসা ব্যয়ই নয়, বরং পুরো বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যঝুঁকিও অনেকটা কমিয়ে আনবে।”

ডিউক-এনইউএসের সিনিয়র ভাইস-ডিন প্রফেসর প্যাট্রিক কেইসিও বলেন, “বর্তমানে লিভারের শেষ ধাপের রোগীদের একমাত্র চিকিৎসা হলো প্রতিস্থাপন। কিন্তু এই গবেষণা থেকে আমরা আশা করছি, সহজ, সাশ্রয়ী ও সাধারণ একটি পন্থায় লিভারের ক্ষতি রোধ করা কিংবা তা ঘুরিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনে ভিটামিন বি১২ ও ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ,এই সবই হতে পারে আপনার লিভারকে সুস্থ রাখার মূল চাবিকাঠি।

 

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/4nv7ams2

আফরোজা

×