
সম্প্রতি প্রকাশিত এক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় উঠে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য। সেখানে দেখা গেছে, এমনকি বয়স বাড়লেও নিয়মিত হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার শরীরচর্চা।যেমন জোরে হাঁটা বা ধীরগতির দৌড়,মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে দারুণভাবে সহায়ক হতে পারে। মাত্র কয়েক মিনিটের এমন ব্যায়ামেই বাড়ে মস্তিষ্কের প্রসেসিং স্পিড, উন্নত হয় মেমোরি ও মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, নিয়মিত ‘হাফ-অ্যান্ড-পাফ’ ধরনের শারীরিক কার্যকলাপ হতে পারে বয়সকালীন স্মৃতিভ্রংশ প্রতিরোধে এক শক্তিশালী হাতিয়ার!হৃদস্পন্দন বাড়ে এমন হালকা ব্যায়ামেই বয়স বাড়ার পরও ব্রেন থাকবে তরতাজা ও সক্রিয়!
অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাডভেন্টহেলথ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, জোরে হাঁটা, লঘু জগিং বা পানির মধ্য দিয়ে হাঁটার মতো মাঝারি থেকে তীব্র মাত্রার ব্যায়াম মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা বাড়াতে সক্ষম। বিশেষ করে বয়স ৬৫ বছরের ওপরে যারা, তাদের ‘প্রসেসিং স্পিড’, ‘ওয়ার্কিং মেমোরি’ এবং ‘এক্সিকিউটিভ ফাংশন’-এ তাৎপর্যপূর্ণ উন্নতি দেখা গেছে।
৫ মিনিটেই বদলে যাচ্ছে মস্তিষ্কের অবস্থা!
গবেষণায় সবচেয়ে বড় চমক এসেছে একটি তথ্য থেকে,যারা আগে মোটেও শারীরিকভাবে সক্রিয় ছিলেন না, তারা দিনে মাত্র পাঁচ মিনিট মাঝারি বা বেশি তীব্রতার ব্যায়াম করলেই মস্তিষ্কে আশ্চর্যজনক উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। গবেষকেরা বলছেন, শরীর একটু কষ্ট পেলেই মস্তিষ্ক যেন পুরস্কার দেয়—এই ব্যায়ামের ফলেই বুদ্ধি, পরিকল্পনা, মনোযোগ ও স্বল্পমেয়াদি স্মৃতিশক্তি অনেকাংশে বাড়ে।
এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন ৬৫ থেকে ৮০ বছর বয়সী ৫৮৫ জন প্রবীণ, যারা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘IGNITE’ ট্রায়ালে অংশ নিয়েছিলেন। তাদের ঘুম, অলস সময়, হালকা এবং ভারী ব্যায়ামের সময় ভাগ করে বিশ্লেষণ করা হয়। দেখা যায়, যাদের মধ্যে বেশি ‘হাফ ধরা’ ধরণের ব্যায়ামের সময় ছিল, তাদের মস্তিষ্ক অনেক বেশি সক্রিয় এবং কার্যকর।
শরীর না চললে মাথাও চলে না
গবেষণার প্রধান লেখক ডা. ম্যাডিসন মেলো বলেন, “দিনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমরা ঘুম, অলস সময় আর ব্যায়ামের মধ্যে সময় ভাগ করি। এর ভারসাম্যটাই ঠিক করে দেয় আমাদের স্বাস্থ্যের মান। আমরা দেখেছি, যারা বেশি গতিশীল, তাদের ঘুমও ভালো হয়। আবার ভালো ঘুমের কারণে পরদিন ব্যায়ামেও আগ্রহ বাড়ে।”
তিনি আরও বলেন, “জোরে হাঁটা বা অ্যারোবিক ধাঁচের ব্যায়াম সরাসরি ‘মস্তিষ্কের গতি’ বাড়া।মানে আপনি কত দ্রুত চিন্তা করেন, কতটা কার্যকরভাবে পরিকল্পনা করতে পারেন এবং কত ভালোভাবে একাধিক কাজে মনোযোগ দিতে পারেন।”
তবে গবেষণাটি জানিয়েছে, এমন ব্যায়ামের অভাবে মস্তিষ্কের এই ক্ষমতাগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে।
বয়স বাড়লেও থেমে যাবে না মস্তিষ্ক
গবেষণার সহ-লেখক ডা. অড্রে কলিন্স বলেন, “দিনে ২৪ ঘণ্টা সময় আমাদের হাতে থাকে,এটাই বাস্তবতা। আর এই সময় কীভাবে ব্যবহার করছি, সেটিই ঠিক করে দিচ্ছে মস্তিষ্ক কতটা ভালো থাকবে।”
তিনি বলেন, “বিশ্বে এখন প্রতি ছয় জনের একজন মানুষ ষাট বছরের বেশি বয়সী। তাই বয়স যতই হোক, যেন সবাই সুস্থভাবে বাঁচতে পারেন, সেটিই এখন জরুরি। আর তার জন্য সবচেয়ে সহজ উপায় হাঁটা শুরু করুন, আর তার সঙ্গে মাথাটাকেও সচল রাখুন।”
সূত্র:https://tinyurl.com/4tdybvt7
আফরোজা