
এ সময়ে ও গরমের শুরুতে ডায়রিয়ার মতো জলবসন্ত বা চিকেন পক্স একটি অতি সংক্রমণক্ষম ভাইরাসজনিত রোগ। শিশুদের এ রোগটি হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকলেও যে কোন বয়সী ব্যক্তি এতে আক্রান্ত হতে পারেন। ছোঁয়াচে এ রোগের প্রাদুর্ভাব এই সময় বেশি হলেও মোটামুটি সারা বছরে রোগ হতে দেখা যায়।
যেভাবে বুঝবেন চিকেন পক্স রোগের শুরুতে শরীর ম্যাজম্যাজ, হালকা ব্যথা, অল্প জ্বর থাকবে, গায়ে ছোট ছোট বিচি বা র্যাশ উঠবে। সাধারণত এ র্যাশ বুকে-পিঠে দেখা যায়, তবে সারা শরীরেই উঠতে পারে। এ র্যাশগুলোতে পানি থাকে, দেখতে অনেকটা ফোসকার মতো।
করণীয় আক্রান্ত রোগীকে আলাদা ঘরে রাখতে হবে। হাঁচি, কাশি, থালাবাসন, কাপড়-চোপড়ের মাধ্যমে এ রোগ ছড়াতে পারে বলে রোগী স্পর্শ করে এমন সবই অন্যদের থেকে পৃথক করে দিতে হবে। কুসুম গরম পানিতে গোসল করা ভাল। মাছ-মাংস, ডিম-দুধ সবই খাওয়া যাবে। পুষ্টিকর খাবার খেলে আরোগ্য সহজ হবে। তবে এমন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে যা থেকে রোগীর আগে শরীরে এ্যালার্জি বা চুলকানি হতো। শারীরিক দুর্বলতা কমাতে এ সময় বেশি করে তরল খাবারসহ ভিটামিন ও মিনারেলযুক্ত খাবার খেতে হবে। চিকেন পক্স খোঁটা যাবে না। খুঁটলে স্থায়ীভাবে দাগ বসে যাবে। ছয় মাসের মধ্যে দাগ এমনিতেই চলে যায়। এজন্য মুখে ডাবের পানি বা প্রসাধনী ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।
চিকিৎসা সঠিক নিয়ম মেনে চললে ১০১৫ দিনেই পক্স ভাল হয়ে যায়। বাইরে বের না হওয়া ভাল। এতে বাইরের বাতাসে পক্স শুকাতে দেরি হতে পারে। চিকেন পক্সে সাধারণত বিশেষ কোন ধরনের ওষুধ প্রয়োজন হয় না। চুলকানির জন্য এ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ এবং যাতে অন্য কোন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ না ঘটে সেজন্য এ্যান্টিসেপটিক দেয়া যেতে পারে। জ্বর, শরীর ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল এবং সারা শরীরে লোপিও ক্যালাসিন লোশন লাগানো যায়। এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। পক্স হওয়ার ৫-৬ দিন পর থেকে নিমপাতা ও হলুদ একসঙ্গে বেটে পুরো শরীরে মেখে ৪-৫ দিন গোসল করাতে হবে। এ ছাড়াও কিছুদিন পানিতে নিমপাতা সিদ্ধ করে গোসল করিয়ে দিন। পরিষ্কার কাপড় পরাতে হবে এবং র্যাশ ঝরা শুরু করলে এগুলো যেখানে-সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে জমা করুন। খোসা এমনিতেই না উঠলে নখ দিয়ে ওঠানোর চেষ্টা করা উচিত নয়। এতে শরীরে দাগ হতে পারে।
চিকেন পক্স হলে কি করবেন, কি করবেন না?
এ সময়েই চিকেন পক্স বা জল বসন্ত ফুটে ওঠে অনেকের ত্বকেই। আবহাওয়া পরিবর্তনের এ সময়ে শরীরে বাসা বাঁধে বিভিন্ন অসুখ। যার মধ্যে জলবসন্ত বা চিকেন পক্স উল্লেখযোগ্য।
যদিও দেশে চিকেন পক্স নিয়ে অনেকের মধ্যেই ভ্রান্ত সব ধারণা আছে! সেসব বিষয় না মেনে বরং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত। এর পাশাপাশি কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখেতে হবে।
চিকেন পক্স হলে কি করণীয়
হ এ সময় রোগীর শরীর ঠা-া রাখা উচিত। তাই গোসল করা জরুরী। তবে অতিরিক্ত ঠা-া পানিতে কখনও গোসল করবেন না।
হ নিমপাতা ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে বেশি উপকার মিলবে। নিমের এ্যান্টিসেপ্টিক উপাদান পক্স নির্মূল করতে সাহায্য করে।
হ সময় বার বার জ্বর হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই প্রাপ্তবয়স্করা প্যারাসিটামল খেতে পারেন। তবে ছোটদের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকরে পরামর্শ নিন।
হ ব্যথার হাত থেকে নিস্তার পেতে রোগীর শরীর ঠা-া জলে মুছিয়ে দিন, এতে ত্বকে খানিকটা হলেও আরাম মিলবে।
হ একই সঙ্গে প্রতিদিন দুবেলা করে জামা-কাপড় বদলানো উচিত। তাহলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে।
হ এ সময়ে সুতি ছাড়া অন্য কাপড়ের পোশাক পরবেন না, তাতে চুলকানি বা অস্বস্তি বেড়ে যেতে পারে।
হ পক্সে চুলকানি হলে কখনও নখ লাগাবেন না। ফলে ত্বকে স্থায়ীভাবে পক্সের দাগ থেকে যেতে পারে। আবার তা থেকে সংক্রমণও ছড়াতে পারে। তাই শিশুদের শরীরে পক্স হলে তাদের নখ ছোট করে কেটে দিন।
হ চুলকানি কমাতে অলিভ অয়েল বা ক্যালামাইন লোশন লাগান, আরাম পাবেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ খান এবং পক্সের ওপর এ্যান্টিবায়োটিক মলমও লাগাতে পারেন।
চিকেন পক্স হলে কোন্ খাবারগুলো খাবেন না?
হ চর্বিজাতীয় খাবার যেমন- মাখন, তেল, বাদাম, পনির, নারিকেল বা চকোলেট জাতীয় খাবারে অতিরিক্ত ফ্যাট থাকে, যা পক্সের প্রদাহ বাড়িয়ে দিতে পারে।
হ অতিরিক্ত তেল-মসলাযুক্ত খাবার খাবেন না। আর বসন্ত হলে মুখের ভেতরেও ক্ষত সৃষ্টি হয়, এতে ঝাল লাগলেই প্রদাহ বেড়ে যাবে।
হ আখরোট, চিনাবাদাম, কিশমিশের মতো খাবার অর্গিনিন নামে এক প্রকার এ্যামাইনো এসিড থাকে, যা চিকেন পক্সের জীবাণুর বংশবিস্তার করে। এমনিতে এই এসিড শরীরের পক্ষে ভাল হলেও বসন্তের সময় তা একেবারেই খাবেন না।
চিকেন পক্স হলে কি খাবেন?
হ এ সময় রোগীকে বেশি ক্যালোরি, ভিটামিন ও মিনারেলসমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে। তবে মুখে স্বাদ আনতে পাতলা স্যুপও খাওয়াতে পারেন রোগীকে।
হ ইলিশ-চিংড়ি জাতীয় মাছ ছাড়া যে কোন মাছের পাতলা ঝোল আর ভাতও খেতে পারবে রোগী। তবে তার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
হ এ সময়ে ডাল খাওয়া খুবই উপকারী। বিশেষ করে ডালের পানি যদি চুমুক দিয়ে খাওয়ানো যায়, তাহলে শরীর খুব ঠা-া থাকে।
হ এ সময়ে রোগীকে ফলের রসও খাওয়াতে পারেন, এটি শরীরে পুষ্টি জোগাবে। তবে লেবুর রস খাওয়া যাবে না। কারণ এতে থাকে উচ্চমাত্রায় সাইট্রিক এসিড, যা মুখের ভেতরে ক্ষতস্থানে জ্বালা-যন্ত্রণার কারণ হতে পারে, ত্বকে ছত্রাক বা যে কোন সংক্রমণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শে মলম ও ওষুধ ব্যবহার করুন। মনে রাখতে হবে চর্মরোগের ওষুধ যখন বিপদেরও কারণ যদি বা না ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করা হয়।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক
চর্ম, যৌন ও এ্যালার্জি রোগ বিভাগ
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
চেম্বার : ডাঃ জাহেদস হেয়ার এ্যান্ড স্কিনিক, সাবামুন টাওয়ার, পান্থপথ মোড়, ঢাকা। মোবাইল : ০১৫৬৭-৮৪৫-৪১৯ ও ০১৭৩০-৭১৬-০৬০