ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ৩১ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

তিলের সাতকাহন ॥ তিল থেকে যেন তাল না হয়

প্রকাশিত: ২১:৩৩, ২৯ জুন ২০২১

তিলের সাতকাহন ॥ তিল থেকে যেন তাল না হয়

ত্বকের স্বাভাবিক তিলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই প্রিয়ার একটি তিলের জন্য সমরখন্দ-বুখারা বিলিয়ে দিতে চেয়েছেন কবি। কিন্তু তিল কি সব সময় সুন্দর? আমাদের ত্বকে এই তিল কেন থাকে, কখনও অজস্র, কখনও বাড়ে, কখনও কমে, কখনও তিল লাল, কখনও কালো-এতে কোন ধরনের ভয় বা দুশ্চিন্তার কিছু আছে কি? এর কোন চিকিৎসাই–বা দরকার আছে কি না? আসুন জেনে নেই- তিল সমাচার আমাদের গায়ের রং নির্ভর করে ত্বকের বিশেষ কোষ মেলানোসাইটের সংখ্যা ও বিস্তৃতির ওপরে। শরীরের ত্বকে যেখানে একসঙ্গে অনেক মেলানোসাইট একত্রে ক্লাস্টার হিসেবে তৈরি হয় বা জমে যায়, সেই স্থান তিলে পরিণত হয়। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের শরীরে ১০ থেকে ৪০টি তিল থাকা স্বাভাবিক। সাধারণত এগুলো হাত, পা বা উন্মুক্ত স্থানে দেখা যায়, যা সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসে। জন্ম থেকেই তিল থাকে, আবার বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে পারে সংখ্যা। চিকিৎসাবিজ্ঞানে তিলকে বলা হয় নেভি বা নেভাস। তিল ত্বকের কোন ‘রোগ’ নয় তিল খুব বেশি হলে বলা যায়, ত্বকের কোষ গঠনের সমস্যার সঙ্গে এর সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু সেটাও এমন কিছু নয় যে তার জন্য চিকিৎসা নিতে হবে। একটি সাধারণ তিল সাইজে পাঁচ মিলিমিটারের কম হয়ে থাকে এবং এর রং হতে পারে বাদামি, লালচে বা কালো। এর উপরিভাগ মসৃণ আর আকারে বৃত্তাকার বা ভাল। আশপাশের ত্বক থেকে স্পষ্টভাবেই আলাদা, কখনও খানিকটা উঁচু হয়ে থাকতে পারে। বাদামি, কালো বা লালচে কোন তিলই ক্ষতিকর নয় তিল প্রধানত জিনগত কারণে হয়। তা ছাড়া অতিরিক্ত সূর্যালোকে যাওয়া ও রেডিয়েশন থেরাপি দীর্ঘদিন চললেও তিল হতে পারে। কেউ দীর্ঘদিন অন্য কোন রোগের ওষুধ সেবন করলেও এ রোগ হতে পারে। সাধারণত তিল বা আঁচিল শরীরের তেমন কোন ক্ষতি করে না। তাই অযথা এ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করাই ভাল। স্বাভাবিক নিয়মে তিল বা আঁচিল সাধারণত মিলিয়ে যায় না। তবে শরীরের ত্বকের কিছু তিলের পরিবর্তন বা স্ফীতি দেখা দিলে, তার সঙ্গে খাবারে অরুচি, হঠাৎ ওজন হ্রাস, মলত্যাগের অভ্যাসের আকস্মিক পরিবর্তন থাকলে অবহেলা করা ঠিক হবে না। কোন কোন সময়ে পরিবর্তিত তিল ক্যান্সারের আভাস দিতে পারে। লাল তিল বৃত্তান্ত সাধারণভাবে শরীরের যেসব অংশে চামড়ার ঠিক নিচেই শিরা (যেমন ঘাড়, গলা, পিঠ কিংবা বুক) থাকে, সেখানেই এ ধরনের লালচে আঁচিল তৈরি হয়। চলতি কথায় এ–জাতীয় আঁচিলকে রুবি পয়েন্ট বলা হলেও চিকিৎসার পরিভাষায় এর নাম ক্যাম্পবেল দে মরগ্যান স্পট। সাধারণত ত্বকের নিচে অবস্থিত কোন শিরার স্ফীতি ঘটলে ত্বকের ওপর এ রকম আঁচিল তৈরি হয়। ৩০–এর বেশি বয়সে যখন রক্তবাহী শিরা বা ধমনি পাতলা হতে থাকে, তখনই এ ধরনের আঁচিল তৈরির আশঙ্কা বেড়ে যায়। তার অর্থ এই নয় যে এ রকম আঁচিল অল্প বয়সীদের শরীরে দেখা দেবে না। সব বয়সেই শরীরে তৈরি হতে পারে রুবি পয়েন্ট। লাল রঙের আঁচিলগুলো বিনাইন বা নির্বিষ টিউমার। অতিরিক্ত তিল কি ক্যান্সারের লক্ষণ? গবেষকদের মতে, শরীরে তিল বা আঁচিলের সংখ্যা থেকে ত্বকের ক্যান্সারের বিষয়ে ধারণা করা যায়। কিংস কলেজ লন্ডনের গবেষকরা প্রায় আট বছর ধরে নারীদের ত্বকের ধরন, তিল ও আঁচিলের সংখ্যা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জোগাড় করেন। তারা বলছেন, যাদের ডান হাতে ১১টির বেশি তিল বা আঁচিল রয়েছে এবং সারা শরীরে ১০০টির বেশি তিল বা আঁচিল রয়েছে, তাদের মেলানোমার ঝুঁকি বেশি। খুবই বিরল হলেও কিছু তিল থেকে ত্বকের ক্যান্সার মেলানোমা হতে পারে। যদি নিচের পরিবর্তনগুলো লক্ষ্য করে থাকেন, তবে তা চিকিৎসককে জানানো উচিত। তিলের রং হঠাৎ পরিবর্তন হওয়া : তিলের হঠাৎ আকারে অনেক বেড়ে যাওয়া বা ছোট হয়ে যাওয়া, তিলের আকৃতি মসৃণ হওয়া ইত্যাদি পরিবর্তন, তিলের উপরিভাগ যদি শুষ্ক আর মাছের আঁশের মতো খসখসে মনে হয়, চুলকানি দেখা দেয় বা রক্তপাত হয়। অনেকের মুখে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে বাদামি, কালো ও লালচে রঙের তিল হয়ে থাকে। মুখে–গলায় অবাঞ্ছিত ও অজস্র তিলের জন্য মুখের সৌন্দর্য নষ্ট হয়। অনেকে এর সমাধানও খুঁজে থাকেন। তিলের শৈল্যচিকিৎসা তিল যেহেতু এমনিতে কোন ক্ষতি করে না, সৌন্দর্যগত কারণেই এটা অপসারণ করা হয়। বহুল ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি হচ্ছে ইলেকট্রো সার্জারি। এতে একটি যন্ত্রের মাধ্যমে তিলটি সরিয়ে ফেলা হয়। এ ক্ষেত্রে দাগও মিলিয়ে যায় খুব দ্রæত। এ ছাড়া লেজার রিসারফেসিং, ফ্র্যাকশনাল লেজারও ব্যবহার করা হয়। এসব চিকিৎসা অবশ্যই চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে করানো উচিত। ভুল চিকিৎসা এবং ক্ষতিকর বিøচিং এজেন্ট ব্যবহারের কারণে ত্বকে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তিল এড়ানো সম্ভব? নতুন নতুন তিল তৈরি এড়াতে হলে যতটা সম্ভব রোদ এড়িয়ে চলা আর রোদে বের হলে ভাল ব্র্যান্ডের সানবøক ব্যবহার করা উচিত। তা ছাড়া রোদে গেলে ছাতা ব্যবহার করা ভাল। সুষম খাবার খাওয়া ও প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা দরকার। প্রয়োজনে ত্বকের চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। ডাঃ জাহেদ পারভেজ সহকারী অধ্যাপক, চর্ম, যৌন ও এ্যালার্জি রোগ বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, মোবাইল : ০১৭০৭-০১১-২০০, ০১৭৩০-৭১৬-০৬০

আরো পড়ুন  

×