
ছবি: জনকণ্ঠ
১৯৯০-এর দশকে কেট মসের হাত ধরে লাল গালিচায় যাত্রা শুরু করেছিল অতিস্বচ্ছ গাউন; তবে ‘প্যান্টবিহীন’ এই লুক বিষয়টিকে একেবারে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
গত রাতে মডেল কারা ডেলেভিন দীর্ঘ বিরতির পর আবার লাল গালিচায় ফিরলেন, তাঁর চিরাচরিত সাহসী স্টাইলে। লন্ডনের রয়্যাল ফেস্টিভাল হলে ডেভিড অ্যাটেনবরোর নতুন ডকুমেন্টারি ফিল্ম "Ocean"-এর প্রিমিয়ারে হাজির হয়ে তিনি পরেছিলেন রূপালি জালের একটি গাউন। এখান পর্যন্ত সব ঠিকঠাক, পুরোটাই ‘কারা’ স্টাইল। তবে চমক ছিল এক জায়গায়—গাউনের নিচে অন্তর্বাস থাকার কথা যেখানটায়, সেখানে ছিল কৌশলী Trompe l’oeil এমব্রয়ডারি, যা অপটিক্যাল ইলিউশন তৈরি করে।
“এই ধরনের অতিস্বচ্ছ গাউনের নিচে কালো অন্তর্বাস পরার ফ্যাশনের সূচনা মূলত ৯০-এর দশকে কেট মস করেছিলেন,” বলেন রেড কার্পেট স্টাইলিস্ট ক্যাথরিন হেওয়ার্ড। “এটা সাহসী, খোলামেলা। অবশ্যই, ঝরঝরে শরীর থাকলে ভালো লাগে। তবে এর ওপরে স্টাইলিশ গা-ছাড়া ঢঙে গায়ে চাপানো গাঢ় রঙের ব্লেজার থাকলে আসল অংশগুলো ঢাকা পড়ে যায়। এটা সরাসরি যৌন আবেদন নয়, বরং ইঙ্গিতপূর্ণ আবেদন। আত্মবিশ্বাসী দেখায়, আর আত্মবিশ্বাস সবসময় আকর্ষণীয়।”
কারার এই লুক ছিল সাম্প্রতিক একটি ট্রেন্ডকে কিছুটা ‘সফট’ভাবে উপস্থাপন করা—অর্থাৎ স্বচ্ছ পোশাকে ক্রচ অংশ খোলামেলা থাকা। এই ধারা সম্প্রতি বেশ ছড়িয়ে পড়েছে, বিশেষ করে মেট গালার লাল গালিচায়। মে মাসের প্রথম সোমবার এমনিতেই স্বচ্ছ পোশাকের প্রদর্শনী হয়ে ওঠে। ইতিহাসের অনেক আলোচিত গাউনই ছিল তথাকথিত “নগ্ন পোশাক” ১৯৭৪ সালে শেরের বব ম্যাকি ডিজাইন, ২০১৫ সালে বিয়ন্সের চোখধাঁধানো গিভঁশি বডিস্যুট কিংবা ২০১৯ সালে কিম কার্দাশিয়ানের হীরার মতো ঝলমলে মাগলার পোশাক।
এই বছরের গালাও তার ব্যতিক্রম ছিল না, তবে এবার সবার দৃষ্টি কাড়ে স্বচ্ছ অন্তর্বাস বা একেবারেই অন্তর্বাস না পরার ট্রেন্ড। অবাক হওয়ার কিছু নেই। সাম্প্রতিক মৌসুমগুলোতে স্বচ্ছ স্কার্টের নিচে বড় আকারের অন্তর্বাস প্রদর্শনের চল দেখা গেছে লাল গালিচায়। ভ্যালেনটিনো, ইভ সাঁ লরাঁ এবং ক্লোয়ের মাধ্যমে এই ধারা শুরু হয়ে যায়, যার অনুসারী ছিলেন ফ্লোরেন্স পিউ, দুয়া লিপা এবং ভিক্টোরিয়া বেকহ্যামের মতো তারকারা।
তবে এবার ছিল আরও একধাপ এগিয়ে। ম্যাশ স্কার্টের নিচে ব্রিজেট জোনসের ঢিলেঢালা অন্তর্বাস নয়, বরং ছিল লেইসের খোলামেলা অন্তর্বাস কিংবা একেবারে কিছু না পরার নজির।
রাতের সবচেয়ে বিতর্কিত লুকগুলোর একটি ছিল কেপপ তারকা ব্ল্যাকপিঙ্কের লিসার পরা পোশাক। The White Lotus সিরিজের তৃতীয় সিজনে অভিনয়ের মাধ্যমে নতুন করে বিশ্বব্যাপী আলোচনায় আসা লিসা এদিন পরেছিলেন মেট গালার অন্যতম কো-চেয়ার ফ্যারেল উইলিয়ামসের ডিজাইন করা লুই ভুইতনের একটি বিশেষ পোশাক। ব্ল্যাক বিডিং জ্যাকেট, টাইটস আর প্যান্টসের সঙ্গে এমব্রয়ডার করা ছিল তাঁর অন্তর্বাসে। সেখানে আঁকা ছিল নাগরিক অধিকার আন্দোলনের কিংবদন্তি রোজা পার্কসের মুখ।
এর চেয়েও একধাপ এগিয়ে যান অভিনেত্রী হ্যালি বেরি। তিনি নিচের অংশে কোনো অন্তর্বাস পরেননি। তাঁর সাহসী লাকোয়ান স্মিথ গাউনে ছিল উল্লম্ব স্বচ্ছ দাগ, যার ফলে চলাফেরা করলেই দেখা যাচ্ছিল এমন কিছু, যা তিনি হয়তো দেখাতে চাননি। আর তা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অনেকেই এই লুককে “আপত্তিকর ও হতাশাজনক” বলে মন্তব্য করেন।
এই স্বচ্ছ পোশাকের বিবর্তন খুব একটা অপ্রত্যাশিত নয়। কারণ ফ্যাশন সবসময়ই চমকে দেওয়ার নতুন উপায় খুঁজে এসেছে—তেমনি নারীদের শরীরের বিভিন্ন অংশকে তুলে ধরার প্রবণতাও চিরকালীন। ১৭-১৮ শতকে করসেট, ভিক্টোরিয়ান যুগে পা দেখানো, আলেক্সান্ডার ম্যাককুইনের Bumster জিন্স, টম ফোর্ডের জি-স্ট্রিং, কিংবা ভ্যানিটি ফেয়ার অস্কার পার্টিতে জো ক্র্যাভিটজের পেছন-খোলা ইভ সাঁ লরাঁ গাউন। সবই ছিল এই ধারাবাহিকতার অংশ।
শহীদ