
শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালায় মঞ্চস্থ দ্রৌপদী পরম্পরা নাটকের দৃশ্য
পুরুষশাসিত সমাজে নারীরা যেন চিরকালীন নির্যাতিতা। সেই নির্যাতিতা নারীর প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরটি হয়ে উঠল পৌরাণিক চরিত্র দ্রৌপদী। নাটকের আশ্রয়ে সমকালের আয়নায় রূপায়ণ ঘটে প্রাচীন আমলের দ্রৌপদীর। তাকে উপজীব্য করে উচ্চারিত হয় নারীর দীর্ঘশ্বাসমাখা অপ্রিয় সত্য কথন। মহাভারতের কেন্দ্রীয় চরিত্রকে নিয়ে নির্মিত থিয়েটারের নাটক দ্রৌপদী পরম্পরা।
এ নাটকের মাধ্যমে মহাভারতের দ্রৌপদী পরিভ্রমণ করে মর্ত্যলোকে। দলের ৪০তম প্রযোজনাটির রচনার পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছেন প্রবীর দত্ত। শনিবার বৈশাখী সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে নাটকটির ৫৭তম মঞ্চায়ন হয়। প্রযোজনা প্রসঙ্গে নাট্যকার ও নির্দেশক প্রবীর দত্ত বলেন, মহাভারতে দ্রৌপদীর অনুচ্চারিত কথাগুলোকেই বলার চেষ্টা করেছি এ নাটকে।
মহাভারতের সেই সময়ের প্রেক্ষাপটের সঙ্গে বর্তমানকে মিলিয়ে নারীর না বলা বা অপ্রকাশিত কথাগুলো বলাই এ নাটকের মূল উদ্দেশ্য। নাটকে দ্রৌপদীর কথোপকথনের মাধ্যমে না বলা কথাগুলো জানার পাশাপাশি প্রশ্ন জাগিয়ে তোলে দর্শক মনে।
মহাভারতে দ্রৌপদী যে কথাগুলো বারংবার বলতে চেয়েও বলতে পারেনি সে কথাগুলো প্রতিবাদী কণ্ঠে উচ্চারণ করে নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র দ্রৌপদী। অপ্রিয় হলেও নাটকের আশ্রয়ের অপ্রিয় সত্য কথাগুলোকে যুক্তি সহকারে বলে যায় দ্রৌপদী। মহাভারতের সময়ে তাকে যেভাবে নিগৃহীত হতে হয়েছে সেই চিত্র উন্মোচনের মাধ্যমে অব্যক্ত ও অপ্রিয় সত্য কথাগুলোই উঠে আসে নাটকে।
নাট্যকার মহাভারতের আলোকেই দ্রৌপদীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করলেও আখ্যানটি বিস্তৃত হয় মহাভারত থেকে সমকালীন সময় পর্যন্ত। সমাজ, ধর্ম ও রাজনীতির বহুমাত্রিক রূপের সম্মিলনে কাব্যিক ঢঙে দৃশ্যকাব্য নির্মাণের চেষ্টা করা হয়েছে। যে জীবনদর্শনের আদর্শে মহাভারতের দ্রৌপদী সমকালের আয়নায় ধরা দেয় মহাভারতী হয়ে এবং মহাভারতে তার না বলা কথাগুলো বলে যায় অকপটে। নাট্যকার নাটকে মহাভারতের আলোকেই দ্রৌপদীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করছেন।
দ্রৌপদী পরম্পরা মূলত মহাভারতকে উপজীব্য করে দ্রৌপদী চরিত্রকে অবলম্বনের মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়েছে এক গভীর জীবনদর্শন। যে দর্শনের আলোকে মহাভারতের দ্রৌপদী সমকালের আয়নায় ধরা দেয় এবং তার না বলা কথাগুলো বলে যায় নির্ভীকভাবে।
এ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন তাহমিনা আক্তার, আকেফা আলম, ইউশা আনতারা প্রপা, রফিকুল ইসলাম, তৌহিদুল ইসলাম বাদল, শাহরিয়ার ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির, শংকর চন্দ্র সরকার, লেনিন ফিরোজী, রাব্বানী ও প্রবীর দত্ত। মঞ্চ পরিকল্পনা করেছেন রফিক উল্ল্যাহ। পোশাক পরিকল্পনা করেছেন ড. আইরিন পারভীন লোপা। সংগীত পরিকল্পনা করেছেন শিশির রহমান। আলোক পরিকল্পনায় ছিলেন শামীমুর রহমান।