
শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে রবিবার মঞ্চস্থ ‘দ্বীপ’ নাটকের দৃশ্য
সকল বৈষম্য দূর করে সমতার সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখেন অনেকেই। অন্তরে লালন করেন শোষণমুক্ত রাষ্ট্র গড়ার আদর্শ। শ্রেণিহীন সমাজ বা রাষ্ট্র গড়ার প্রত্যয়ে হয়ে ওঠেন বিপ্লবী। সেই সুবাদে স্বপ্নবাজরা বেছে নেন খর¯্রােতা বিপ্লবের পথ। কিন্তু কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছুনোর আগেই ব্যক্তি স্বার্থ ও লোভের বশবর্তী হারিয়ে যায় আদর্শিক অবস্থান। দেখা দেয় সততার ঘাটতি। নড়ে যায় আদর্শের খুঁটি।
আর এমনই এক আদর্শচ্যুত মানুষের গল্পময় নাটক দ্বীপ। রবিবার বৈশাখী সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে নাট্যতীর্থের প্রযোজনাটির ১২৩তম প্রদর্শনী হয়। উপমহাদেশের বরেণ্য অভিনেতা ও নাট্যকার উৎপল দত্ত রচিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন নাটকটির তপন হাফিজ।
আদর্শচ্যুত হয়ে মানুষ কিভাবে মানুষের ক্ষতি করে সে কথাই উঠে এসেছে নাটকের পরতে পরতে। এ বিষয়ে নির্দেশক তপন হাফিজ বলেন, আমরা আদর্শগতভাবেই শ্রেণি সংগ্রাম ও বিপ্লবের কথা বলি অথবা একটি শ্রেণিহীন সমাজের স্বপ্ন আঁকি। তা এক সময় ব্যক্তির সুখ-দুঃখ ছাড়িয়ে সর্ব মানবের সুখ-দুঃখের মহাকাব্য হয়। সেখানেই ধরা দেয় সব মানুষের মঙ্গল। এমন একটি সমাজের স্বপ্ন দেখে না কে?
কিন্তু যখনই ব্যক্তি মানুষটি তার সুখ-বৈভব নিয়ে আবির্ভূত হয় তখনই তার আদর্শচ্যুতি ঘটে। এই আদর্শচ্যুতি শুধু ব্যক্তি মানুষকে নয়, সমগ্র সমাজের ক্ষতি করে। একজন মানুষ পৃথিবীর তাবৎ কিছুকে ফাঁকি দিতে পারে কিন্তু নিজেকে ফাঁকি দিতে পারে না। নিজেকে ফাঁকি দিলেও একদিন তাকে নিজের কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হয়। সে গল্পই বলা হয়েছে এই নাটকে।
প্রযোজনাটির এক বিপ্লবী ও আদর্শে অনড় চরিত্র মিলন সরকার। সবাইকে সে নতুন সমাজের স্বপ্ন দেখায়। সেই নতুন সমাজের স্বপ্নে বিভোর হয়ে বিপ্লবীদের দলে ভেড়ে জনার্দন মল্লিক, কপিলনাথ ও ইউনুছ মোহাম্মদ। কিন্তু মিলন সরকার তার আদর্শের জায়গা থেকে সরে এসে ব্যক্তি সুখের স্বার্থে ইয়েলো বা হলুদ সাংবাদিকতা শুরু করে। সুপ্রিয়াকে নিয়ে পড়ে থাকে আমোদ-প্রমোদে। ভোগ-বিলাসে কেটে যায় নিশিদিন।
অন্যদিকে মিলন সরকারের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে জনার্দন, কপিল ও ইউনুছ প্রাণ হারায়। কিন্তু মিলন সরকারের নতুন সমাজ গড়ার যে প্রত্যয় তা লোভ নামক ইন্দ্রিয়ের জাঁতাকলে পড়ে মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে চালায়। সুপ্রিয়াকে বিয়ের প্রলোভনে ফেলে চলতে থাকে তার স্বেচ্ছাচারী কর্মকা-।
কিন্তু এক সময় মিলন সরকারকে নিজের কাঠগড়াতে দাঁড়াতে হয়। তার স্বপ্নদৃশ্যের মধ্য দিয়ে বিবেক নামক সত্তাটি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। তার ভেতরের অসাধুতার উত্তর বেরিয়ে আসে। মিলন পতিত হয় গহিন নিকষ কালো অন্ধকারে। সেখান থেকে ফেরার কোনো পথ থাকে না।
দ্বীপ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাদিয়া ইসলাম শান্তা, তপন হাফিজ, শামসুর রহমান পেরু, মাহমুদুর রহমান, শুভ প্রমুখ। ঠা-ু রায়হানের আলোক পরিকল্পনা মঞ্চ পরিকল্পনা করেছেন ফয়েজ জহির। আবহ সংগীতে ছিলেন একে আজাদ ও পোশাক পরিকল্পনায় কাজী শিলা।