ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পকলায় আরণ্যকের রাজনেত্র নাটকের তৃতীয় মঞ্চায়ন

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:০৫, ৬ অক্টোবর ২০২২

শিল্পকলায় আরণ্যকের রাজনেত্র নাটকের তৃতীয় মঞ্চায়ন

শিল্পকলায় মঞ্চস্থ রাজনেত্র নাটকের দৃশ্য

ছুটির দিনে যেন ডানা মেলেছিল উৎসবের রংটি। শাখা-প্রশাখায় প্রসারিত হয়ে সেই বর্ণিলতা ছড়িয়েছিল রাজধানীর নাট্যাঙ্গনেও। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার তিনটি মিলনায়তনেই মঞ্চস্থ হয়েছে নতুন কিংবা পুরনো নাটক। বেইলি রোডের মহিলা সমিতিতেও হয়েছে নাট্য প্রদর্শনী। সেই সুবাদে বুধবার বিজয়া দশমীর দিনে অনেকেরই সুন্দরতম সময় কেটেছে মঞ্চনাটক দেখে।

শারদীয় সন্ধ্যায় নাট্যপ্রেমীদের কাছে বিশেষ আকর্ষণ ছিল সম্প্রতি মঞ্চে আসা আরণ্যক প্রযোজিত রাজনেত্র নাটকটির প্রতি। জনতাকে উপেক্ষা করে রাজ্য শাসনের গল্পময় প্রযোজনাটির তৃতীয় প্রদর্শনী হয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে। রচনার পাশাপাশি  নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন হারুন রশীদ।
রাজশাসনের ইতিবৃত্ত উঠে এসেছে নাটকের ঘটনাপ্রবাহে। যেখানে প্রজার প্রতি উদাসীন থাকেন রাজা। ভোগ-বিলাস আর বিত্ত-বৈভবে ডুবে থাকা রাজামশাই হারিয়ে ফেলেন স্বাভাবিক বোধ। নিজ  রাজ্য এবং রাজ্যের মানুষকে তিনি  দেখেন ভিন্ন  দৃষ্টিতে। সেই দেখায় ধরা দেয় না প্রকৃত বাস্তবতা। আসলে রাজা ঠিক এভাবে দেখেন না বরং তাকে দেখানো হয় রাজসভার সভাসদগণের উপনেত্রে।

রাজার চোখে পরিয়ে দেয়া হয় রাজনেত্র নামের এক রঙিন চশমা। ওই চশমায় সভাসদগণ তাকে যেভাবে দেখান, সেভাবেই  দেখেন রাজা। একপর্যায়ে এই শৃঙ্খল ভাঙতে চান রাজা। নিজের রাজ্য আর প্রজাদের তিনি দেখতে চান নিজ নয়নে, খোলা চোখে। রাজার এমন অভিপ্রায়ে বাদসাধেন সভাসদগণ। তাদের অভিমত, এটা একেবারেই সমুচিত কাজ হবে না। রাজাকে সাবধান করে দিয়ে তারা মত  দেন- এভাবে দেখলে রাজ্যহারা হতে পারেন রাজা। অতঃপর নিরাপত্তার অজুহাতে প্রাসাদের বাইরে যেতে  দেয়া হয় না রাজাকে।

কার্যত গৃহবন্দী হয়ে পড়েন রাজা। শুরু হয় নতুন ষড়যন্ত্র। ঘটনাক্রমে যুক্ত হয় বিশাখা নামের এক প্রান্তিক নারী। রাজাকে প্রাসাদপ্রাচীরে ব্যস্ত রাখতে চক্রান্ত করে এই নারীর সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয়। এদিকে বিশাখা রাজাকে বুঝতে  চেষ্টা করেন। রাজা যখন জীবনের স্বাভাবিকতা দেখা এবং নিজ চোখে প্রজাদের অবস্থা দেখার আকুতি জানান তখন রাজার প্রতি মমতার হাত বাড়িয়ে  দেন বিশাখা।

তার হাতে হাত  রেখে রাজা চলে যান প্রকৃতি ও মানুষের কাছে। অন্যদিকে এই সুযোগটিকে কাজে লাগায় রাজসভার আমাত্যবৃন্দ। উপনেত্র ছাড়া রাজার জনপদে যাওয়া এবং খালি চোখে মানুষকে দেখার অভিযোগ তুলে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় রাজাকে। স্থলাভিষিক্ত হন নতুন রাজা।
আরণ্যকের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্্যাপনের এ নাটকে দলের নবীন-প্রবীণ নাট্যকর্মীদের সম্মিলন ঘটেছে।
এমনি এক গল্প নিয়ে আরণ্যক নাট্যদল মঞ্চে এনেছে নতুন প্রযোজনা ‘রাজনেত্র’। নাটকটির রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন হারুন রশীদ। গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মূল মিলনায়তনে নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হয়। দলের ৪০ জন মঞ্চশিল্পী  পারফর্ম করেছেন এই নাটকে।

বিভিন্ন চরিত্রে রূপ দিয়েছেন রুবলী চৌধুরী, ফজলে রাব্বাী, রণধীর বড়ুয়া, ইশতিয়াক হোসেন, তাসমী চৌধুরী, শেখ জিয়াদুল হক, কামরুল হাসান, সাবিকুন্নাহার কাঁকন, লায়লা বিলকিস ছবি, নুসরাত আজম, রিয়া চৌধুরী,  রূপন হালদার, মাজহারুল ইসলাম জুয়েল, সৈয়দ মুরাদ হোসেন, ইশতিয়াক আহমেদ, রুহুল আমিন, শহানা শারন, নূরজাহান আক্তার প্রমুখ। ঠাণ্ডু রায়হানের আলোক পরিকল্পনায় প্রযোজনাটির কোরিওগ্রাফি করেছেন স্রোতা শাহরিন।

×