ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১

রাবিতে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে লাল কার্ড প্রদর্শন

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী

প্রকাশিত: ১৭:১৮, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪; আপডেট: ১৭:২০, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪

রাবিতে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে লাল কার্ড প্রদর্শন

রাবিতে পোষ্যকোটা বাতিলের দাবিতে লালকার্ড প্রদর্শন করা হয়। ছবি: জনকন্ঠ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) এবার পোষ্য কোটাকে ‘লাল কার্ড’ দেখিয়ে বিক্ষোভ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। রবিবার ( ৮ ডিসেম্বর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে পোষ্য কোটাকে ‘লাল কার্ড’ দেখিয়ে বিক্ষোভ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।

 

কর্মসূচি থেকে আগামীকাল সোমবার  ( ৯ ডিসেম্বর)   বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার মুক্তমঞ্চে শিক্ষকদের সঙ্গে পোষ্য কোটার যৌক্তিকতা নিয়ে উন্মুক্ত বিতর্কের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

এ সময় তারা, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘কোটা না মেধা,  মেধা মেধা’,  ‘জনে জনে খবর দে, পোষ্য কোটার কবর দে’, ‘মেধাবীদের একশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।

কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া মোহাম্মদ মেশকাত চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় পাশ মার্ক ৪০। সেখানে পাশ মার্কেরও অর্ধেক ১৯.৫০ নম্বর পেয়ে এক শিক্ষকের ছেলেকে পোষ্য কোটায় ভর্তি হয়েছে। দেখা গেছে পরে তাকে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় ৩.৭০ নাম্বার দেওয়া হয়েছে। তাহলে আমরা এটাকে পোষ্য কোটা বলতে রাজি না। এটা হচ্ছে কিছু অযোগ্য মানুষদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বানানোর মেশিন। সে মেশিনটাকে আমরা বিলুপ্ত করতে চাই। পোষ্য কোটার ক্ষেত্রে যেকোনো আলোচনায় যেতে আমরা রাজি না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমাদের অপশন পোষ্য কোটা পুরোপুরি বাতিল।’

বিক্ষোভ কর্মসূচিতে রাবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন,  ‘পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে আজকে আমরা রেড কার্ড প্রদর্শন করলাম। আগামীকালের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় যদি তারা তাদের পোষ্য কোটার পক্ষে যুক্তি দেখাতে পারে তাহলে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা পোষ্য কোটাকে মেনে নিব। আর যদি কোন যুক্তি দেখাতে না পারে তাহলে সেখান থেকে পোষ্য কোটার বাতিল ঘোষণা করতে হবে। জুলাই অভুত্থানের মাধ্যমে আমরা ফ্যাসিস্ট একটা সরকারের পতন ঘটিয়েছি। পোষ্য কোটা নিয়ে তালবাহনা করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পতন ঘটাতে ১০ মিনিটের বেশি সময় আমরা নিব না।’

শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে সংহতি জানান আইন বিভাগের অধ্যাপক মোর্শেদুল ইসলাম পিটার। এসময় তিনি বলেন, ‘১৯৯৩ সালে তৎকালীন যে উপাচার্য ছিলেন তার ছেলেকে ৩৭ মার্কও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নেওয়া হয়নি। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ন্যূনতম মার্ক  ৪০। পরবর্তীতে দেখা গেছে ২২, ২৫, ২৮, ৩২ এবং ৪০ পায়না এমন ছাত্র-ছাত্রীদের কোটায় ভর্তি করা হয়েছে। পরে এসব ছাত্রছাত্রীরা সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টে যেয়ে ফার্স্ট-ক্লাস ফার্স্ট এবং সেকেন্ড হয়েছে। কিভাবে হয়েছে? তেল দিয়ে। এদেরকেই পরবর্তী সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই কারণে আমি চাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন শিক্ষকের ছেলে বা মেয়ে কোটায় ভর্তি হোক।'

এর আগে, গত ১৪ নভেম্বর রাবির ভর্তি পরীক্ষায় তিন শতাংশ পোষ্য কোটা রেখে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেদিন রাতেই এই কোটা বাতিলের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর উপাচার্যের আশ্বাসে অনশন ভাঙেন তারা।

পরে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দীনকে সভাপতি করে ২০ সদস্যের কোটা পর্যালোচনা কমিটি গঠিত হয়। তবে এ কমিটি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেও কার্যকারী কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। সর্বশেষ শনিবার রাত পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়ার পরও প্রশাসনের সিদ্ধান্ত না আসায় এ বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেন শিক্ষার্থীরা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইন্সটিটিউটের প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

তাবিব

×