ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যাত্রা শুরু হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের

সৈয়দ জাহিদ হাসান 

প্রকাশিত: ০০:২৭, ২৮ মে ২০২৩

যাত্রা শুরু হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের

হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হকৃবি) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের কৃষি

হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হকৃবি) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের কৃষি, মাৎস্য এবং প্রাণিসম্পদ বিজ্ঞান ও প্রাণী চিকিৎসা অনুষদের প্রথম ব্যাচের ক্লাস শুরুর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা-কার্যক্রম শুরু হলো। প্রথম ক্লাসেই শিক্ষার্থীরা শ্রেণি কক্ষে আধুনিকতার ছোঁয়া পায়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম ক্লাসের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১০ মে) সকাল ১০ টায় হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ভাদৈ এলাকায় স্থাপিত হকৃবির অস্থায়ী ক্যাম্পাসে প্রথম ক্লাস শুরুর আগে শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবদুল বাসেত। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত শিক্ষক, কর্মকর্তাবৃন্দ ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবক উপস্থিত ছিলেন। নতুন পরিবেশে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করল বিশ্ববিদ্যালয়টি। 
অনেক প্রতিবন্ধকতার মাঝেও অবশেষে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যেই ক্লাস শুরু হলো। তবে ক্লাসে যুক্ত হয়েছে আধুনিক সরঞ্জাম। ডিজিটাল মনিটরসহ পরীক্ষা ফি প্রদান ও সকল তথ্য সহজে শিক্ষার্থীদের মাঝে পৌঁছাতে অ্যাপস তৈরি করা হয়েছে। দেশে হকৃবিকে আধুনিক স্মার্ট একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার অঙ্গীকার করেছেন উপাচার্য। 
মোট পাঁচটি অনুষদের মধ্যে বর্তমানে চালু হওয়া ৩টি অনুষদে ৯০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে মোট ১২ জন শিক্ষক রয়েছেন। এছাড়াও ১৩ জন কর্মকর্তা ও ২৩ জন কর্মচারী কাজ করছেন।
কৃষি অনুষদের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী শেখ মার্জিয়া আকতার সোনিয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বপ্নের নাম। যা অনেক আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন। প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী হওয়ায় এত কিছু প্রত্যাশা করিনি, কিন্তু প্রত্যাশা থেকেও অনেক বেশি পেয়েছি। আমরা এন্ড্রয়েড এলইডি স্মার্ট বোর্ডের মাধ্যমে ক্লাস করছি। এ ছাড়াও আমরা ই-লাইব্রেরীর সুবিধা পাচ্ছি। আমার প্রত্যাশা আমার বিশ্ববিদ্যালয়টি খুব দ্রুত দেশের সুনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একটিতে পরিণত হবে।
প্রাণী বিজ্ঞান অনুষদের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. জাহিদুর ইসলাম জাহিদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি হওয়ার পর অনেকেই বলেছিল, ভালো শিক্ষক পাব না, ভালো ক্লাস রুম পাবনা, ভালো একটা ক্যাম্পাস পাব না, কিন্তু এখানে আসার পর থেকে আমার ধারণা বদলে গেছে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পরেও সবার আন্তরিকতায় আমরা মুগ্ধ। পরিচ্ছন্ন একটি ক্যাম্পাস পেয়েছি। তবে একটি হল আর ক্যান্টিন পেলে আমাদের খুব সুবিধা হবে। আশা করছি উপাচার্য স্যারের কাছ থেকে দ্রুতই আমরা ভালো সংবাদ পাব।
হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবদুল বাসেত বলেন, আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকলেও শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে অস্থায়ী ভিত্তিতে দুটি ভবনে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট তৈরি করেছি। শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা একটি অ্যাপস তৈরি করেছি। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা সকল কাজ খুব সহজেই করতে পারবে। এটি মূলত পেপারলেস ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় করার প্রাথমিক ধাপ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের উদ্দেশ্যে হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট অব প্রিসিশন এগ্রিকালচার স্থাপনের অনুমোদন হয়েছে। সবার সহযোগিতায় আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে এগিয়ে নিতে চাই।
বিশ্ববিদ্যালয়টির মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের নবনিযুক্ত প্রভাষক ইফতেখার আহমেদ ফাগুন বলেন, কেবল হবিগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করল। উপাচার্য স্যারের কাছে যে পরিকল্পনা শুনেছি তাতে খুব দ্রুতই স্মার্ট একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হবে হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থীদের সুবিধা বিবেচনায় বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং ধারাবাহিকভাবে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোও পূরণ করা হবে। আমরা শিক্ষকরা চেষ্টা করছি নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে শিক্ষার্থীদের কারিকুলাম ও ব্যবহারিক শিক্ষার সমন্বয় ঘটানোর। এ ছাড়াও শিক্ষার্থীদের মাঠপর্যায়ে নিয়ে ব্যবহারিক বিষয় শেখানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
কৃষি গুচ্ছে থাকা প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হয় এ বছরের শুরুর দিকে। তবে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দেরি হওয়ায় ক্লাস শুরু করতেও হতে কিছুটা দেরি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির। প্রাথমিকভাবে মোট তিনটি অনুষদে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যা পরবর্তী ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি করা হবে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়, নতুন শিক্ষক এবং নতুন শিক্ষার্থী নিয়ে হবিগঞ্জ জেলার কৃষি উন্নয়নে যাত্রা শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। হবিগঞ্জ জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার ফসল এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক, শিক্ষার্থী সহ হবিগঞ্জ জেলার সাধারণ মানুষ চান দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হোক, হবিগঞ্জের কৃষির উন্নয়নে ভূমিকা রাখুক।

×