
জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয়
জলবায়ুর অস্বাভাবিক পরিবর্তনে পুরো বিশ্ব পরিবেশের চরম বিপর্যয় এরমধ্যে ঘটেছে। এখন বিশ্বে ভয়াবহ এক আতঙ্ক জলবায়ু পরিবর্তন। এর পিছনে প্রাকৃতিক কারণের তুলনায় মানবসৃষ্ট কারণই মুখ্য। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মানুষসহ সকল প্রাণী জগতের জীবনচক্রে মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অধিক তাপমাত্রায় মেরু অঞ্চলের বরফ গলছে, বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। বিজ্ঞানীদের ধারণা ২০৫০ সালের মধ্যে উপকূলে ১৮% ভূমি সমুদ্র গর্ভে চলে যাবে। জি-৮ ভুক্ত দেশগুলো উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সঙ্গে তারা গ্রীন হাউস গ্যাস সৃষ্টির কারণ হচ্ছে।
এখনই আমাদের এসব মোকাবেলায় শক্ত হাতে কাজ করতে হবে। কৃষি বনায়ন বৃদ্ধি ও গ্রীন হাউস গ্যাস হ্রাস করতে হবে। কারখানার নানাবিধ দূষণ রোধ করতে হবে। যানবাহনের দূষণ রোধে সোলার প্যানেলের ব্যবহার বাড়ানো, সামাজিক বনায়ন সৃষ্টি করা এবং তা বৃদ্ধিতে সবাইকে সচেতন করতে হবে। ভূ-উপরিস্থ পানির দূষণ রোধ ও ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং বর্জ্য পদার্থকে পুনঃব্যবহার এর উপযোগী করে তুলতে হবে। আমাদের পৃথিবীকে সুন্দর রাখতে, আমাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী টিপু আগরওয়াল মনে করে, পরিবেশ ও জলবায়ুর ওপর প্রভাব কতটা বিধ্বংসী হতে পারে তার প্রমাণ সাম্প্রতিক সময়ে সমগ্র পৃথিবীব্যাপী তা-ব চালানো মহামারী করোনাভাইরাস। কিন্তু, মানব সমাজ এখনও তার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারছে না। মানুষ প্রতিনিয়ত যেভাবে এই দুটি বিষয়ের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে সেভাবে প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠছে। এর ফলস্বরূপ একদিকে দ্রুত পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে অপরদিকে গলতে শুরু করেছে মেরু অঞ্চলের বরফ, যার ফলে ভারসাম্য হারাচ্ছে আমাদের ধরিত্রী।
ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, দাবানলের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সবচেয়ে বেশি। তীব্র গরম আর শীত, অসময়ে বর্ষা, বন্যা প্রতিনিয়ত হয়েই যাচ্ছে। এসব সবকিছুর জন্য আমরাই দায়ী। অকারণে বৃক্ষ নিধন, আবাসিক এলাকায় শিল্প কারখানার স্থাপন, ধারণ ক্ষমতার অধিক জনসংখ্যা, যানবাহনের কাল ধোঁয়া, অধিক রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যাবহারসহ বিবিধ। তাই, সময় হয়েছে এখনই বিশ্ববাসীকে একত্রিত করে এই জাতীয় সমস্যাকে প্রতিরোধ করা এবং আগামী প্রজন্মের জন্য বসবাসযোগ্য পৃথিবীর বির্নিমাণ করা।
স্মৃতি চক্রবর্তী নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি মনে করেন, বৈশ্বিক জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে পৃথিবী এখন বিপর্যয়ের সম্মুখীন। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে আখ্যায়িত মানবগোষ্ঠীর কিছু অমানবিক কাজের ফলেই জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে খুব দ্রুত। সম্প্রতি, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের তা-ব শেষ হতে না হতে বাংলাদেশের সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে স্মরণকালে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা অনেক বার্তাই দিয়ে যায়। দেশে ক্রমাগত বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা।
উপকূলীয় অঞ্চল তো বটেই এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ছে পুরোদেশেই। মানবিক বিপর্যয় তো ঘটছেই তার সঙ্গে শিক্ষার্থীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মানুষ তাদের কার্যকলাপ এখনই শুধরে না নিলে সামনে আরও বিশাল বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে। যেহেতু আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামীর কর্ণধার, তাই পৃথিবী রক্ষার সবার আগে তাদেরই জাগতে হবে। সচেতনতার পাশাপশি পরিবেশ ঠিক রাখার কাজটিও করে যেতে হবে।
যেমন বনায়ন করতে হবে তেমন দূষণ রোধ করতে হবে। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ভূমিকা পালন করতে হবে। অভিভাবকদেরও আগত প্রজন্মের কথা ভেবে সেভাবে চলতে হবে এবং পরিবেশ রক্ষায় নিজে যেভাবে উদ্বুদ্ধ হবে তেমনি অন্যকেও করবে। আসুন, সুস্থ সুন্দর পৃথিবী গড়ি, পৃথিবীকে বসবাসের যোগ্য রাখি।
গণবিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লাবণ্য কুমারী রাজবংশী মনে করে, একবিংশ শতাব্দীতে এসে সবচেয়ে বেশি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই জলবায়ু পরিবর্তন। কেননা এর ফলে দ্রুত পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেরু অঞ্চলের বরফ গলে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। হুমকির মুখে পড়েছে সমুদ্র তীরবর্তী দেশগুলো। ঝড়, বন্যা, নদী ভাঙন, ঘূর্ণিঝড়, সুনামি, জলোচ্ছ্বাস, দাবানলের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এছাড়াও ভূমিকম্প, এসিড বৃষ্টি, গ্রিন হাউস গ্যাস, বৈশ্বিক উষ্ণতা, খরা, জলাবদ্ধতা ও পানি বৃদ্ধি এবং লবণাক্ত মাটির পরিমাণ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। সৃষ্টির সেরা জীবদের নিকৃষ্ট কাজের ফলেই পরিবর্তিত হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। এখনই সময় বৃক্ষ নিধন, অধিক জনসংখ্যা, যানবাহন ও ইটভাটার কালোধোঁয়া, শিল্প কারখানার বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের। এছাড়াও রক্ষা করতে হবে প্রাণ-প্রকৃতিকে। পরিবেশের ক্ষতিকর বিষয়গুলো এড়িয়ে চলার সময় এসে গেছে। সভ্যতার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে দূষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে সারাবিশ্বকে একসঙ্গে।
নানান উদ্যোগ, পরিকল্পনা, শত শত সংগঠন তবুও জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানো যাচ্ছে না। কারণ মানবজাতি একদিকে পরিবেশের ওপর আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনে কথিত নানান পদক্ষেপ। ফলে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছেই।
অধিক জনসংখ্যা এবং ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর একটি, বাংলাদেশ। এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের অস্তিত্ব সঙ্কটের কারণ হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পরিবেশ দূষণ দায়ী। তাই পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে কঠোর হতে হবে। পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করতে পরিকল্পিত শিল্পায়ন ও নগরায়ণ, বনাঞ্চল সৃষ্টি, পরিবেশ সংরক্ষণ, নদী-খাল দখল ও দূষণমুক্ত করতে হবে। ভবিষ্যত প্রজন্মকে একটি সুস্থ পরিবেশ উপহার দিতে হলে জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর বিকল্প নেই।