ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২

যুদ্ধের জন্য প্রস্তত পাক-ভারত সীমান্তের বাসিন্দারাও, প্রস্তুত করছেন বাঙ্কার

প্রকাশিত: ১৮:২৮, ৩ মে ২০২৫; আপডেট: ১৮:২৮, ৩ মে ২০২৫

যুদ্ধের জন্য প্রস্তত পাক-ভারত সীমান্তের বাসিন্দারাও, প্রস্তুত করছেন বাঙ্কার

ছবি: সংগৃহীত

গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার পর থেকেই নিয়ন্ত্রণরেখার (লাইন অব কন্ট্রোল) দুই পাশে বসবাসকারী মানুষদের মধ্যে গভীর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সীমান্তঘেঁষা গ্রামগুলোর সাধারণ মানুষ যেন প্রতিদিনই যুদ্ধ শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন।

ভারতশাসিত কাশ্মীরের চুরান্দা গ্রামের এক স্কুলশিক্ষক ফারুক আহমেদ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ক্লাসে আসছে ঠিকই, কিন্তু অভিভাবকদের মধ্যে প্রবল উৎকণ্ঠা কাজ করছে। পেহেলগামের ঘটনার পর সীমান্তের দুই পাশের মানুষই ভাবছেন, যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষ শুরু হতে পারে।”

উল্লেখ্য, কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এর আগেও দুই দফায় যুদ্ধ হয়েছে এবং সীমান্তে প্রায়ই সংঘর্ষ লেগেই থাকে। ফলে এ অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে এক ধরনের স্থায়ী আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

পেহেলগামের হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত। যদিও পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, ভারত যেন পাকিস্তানে হামলার অজুহাত না খোঁজে—এমন সতর্কবার্তাও দিয়েছে ইসলামাবাদ।

চুরান্দা গ্রামে ভারতীয় ও পাকিস্তানি সেনারা তাদের নিজ নিজ অবস্থানে সক্রিয় রয়েছে। স্থানীয় প্রবীণদের ভাষ্য, বিগত কয়েক দশকে গোলাগুলিতে অন্তত ১৮ জন গ্রামবাসী নিহত হয়েছেন।

এই গ্রামের ২৫ বছর বয়সী যুবক আব্দুল আজিজ বলেন, “এই গ্রামে দেড় হাজার মানুষ থাকেন এবং ছয়টি বাঙ্কার রয়েছে। দুই পক্ষই একে অপরকে হুমকি দিচ্ছে। পরিস্থিতি যেকোনো সময় খারাপ হয়ে যেতে পারে। তখন আমরা কোথায় যাব? আমরা আতঙ্কে আছি, কারণ অতীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই গ্রামই।”

সুরক্ষা ও খাদ্য মজুতে প্রস্তুতি নিয়েছেন অপর প্রান্তের মানুষও

নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের চাকোঠি গ্রামের বাসিন্দারাও আতঙ্কে দিন পার করছেন। পাহাড়ের ঢালে নিরাপদ আশ্রয়স্থল তৈরি করছেন তারা।

২২ বছর বয়সী ফয়জান আনায়াত জানান, গোলাগুলি শুরু হলেই স্থানীয়রা বাঙ্কারে আশ্রয় নেন। তার প্রতিবেশি মোহাম্মদ নাজির বলেন, “আমরা ভয় পাই না। আমাদের প্রত্যেক ছেলেমেয়ে প্রস্তুত রয়েছে।”

সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফ্ফরাবাদে ১০০ কোটি রুপি জরুরি তহবিল গঠন করা হয়েছে। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে দুই মাস চলার মতো খাদ্য, পানি ও স্বাস্থ্যসেবা সামগ্রী পাঠানো হয়েছে।

এছাড়া সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় ওই অঞ্চলের সব মাদ্রাসা আগামী ১০ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হলে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা দ্রুত মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ইতোমধ্যে সরিয়ে আনা হয়েছে। পাশাপাশি উদ্ধারকারী ও সিভিল ডিফেন্স বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে।

পাকিস্তান রেড ক্রিসেন্টের কাশ্মীর শাখার প্রধান গুলজার ফাতিমা বলেন, উত্তেজনা বাড়লেই তারা জরুরি চিকিৎসা ও ত্রাণসামগ্রীসহ কর্মীদের মোতায়েন শুরু করেন।

তিনি জানান, যদি ভারত হামলা চালায়, তবে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছাকাছি এলাকা থেকে প্রচুর মানুষকে সরিয়ে নিতে হবে। এজন্য তারা অন্তত ৫০০ পরিবারের জন্য তাঁবু, ওষুধ, রান্নার সামগ্রীসহ একটি পূর্ণাঙ্গ ত্রাণশিবির প্রস্তুত রাখছেন।

আসিফ

×