
বসন্তের কৃষ্ণচ‚ড়ার রক্তিম আভা না ফুরাতেই গ্রীষ্ম তার ফলের ডালা নিয়ে হাজির হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ক্যাম্পাসের প্রতিটি আঙিনায় এ সময় দেখা যায় আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, জামরুল, কাউ, কামরাঙাসহ নানা ফলের সমারোহ। উত্তরাঞ্চলের লালচে দোঁআশ মাটি থাকায় জাতীয় ফল কাঁঠালের বেশ ভাল ফলন হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ থেকে শুরু করে সমাজবিজ্ঞান চত্বর, বোটানিক্যাল গার্ডেন, পুরাতন কলা কিংবা প্রান্তিক সবখানে পাকা কাঁঠালের মিষ্টি সৌরভ। ফলের রাজা আমও এ প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই। বসন্তের শুরু থেকেই প্রতিটি আঙিনায় আমের মুকুল দেখা দেয়। বৈশাখী ঝড়ে শিক্ষার্থীরা আম কুড়ানোয় মেতে উঠে।
ফলের ঋতুতে ক্যম্পাসের প্রতিটি আঙিনায় যেন উৎসবের আমেজ বয়ে যায়। মৌসুমি ফলের স্বাদ নিতে কোন বাধা নেই। দুপুরবেলার রোদে কারো কাঁচা-আম খেতে ইচ্ছে হলো; ব্যস, গাছ থেকে পেড়ে এনে নুন-মরিচ দিয়ে মাখিয়ে নিলেই হলো। কিংবা জামের স্বাদ নিতে কেউ কেউ উঠে যায় মগডালে। জমে উঠে ছোট-খাটো আড্ডা। পুরো গ্রীষ্মজুড়ে গাছপাকা ফলের কোন কমতি নেই। গ্রীষ্মের দাবদাহে একটু শীতল পরশ পেতে দর্শনার্থীরাও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন। অতিথিপরায়ণ এ প্রাঙ্গণ তাদের দখিনা বাতাসে পাকা ফলের সৌরভ দিয়ে বরণ করে নেয়।
করোনা মহামারী এ বাহারি ফলের মৌসুমের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। জৈষ্ঠ্যের আগমনে আম-জাম -কাঁঠাল পাকতে শুরু করেছে। কিন্তু উৎসবের অতিথিরাই তো অনুপস্থিত। তাই এবারের ফলের মৌসুমকে বরণ করে নিতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব। আয়োজন করলো ‘মৌসুমী ফল উৎসব’।
কি ছিল না এই বাহারি ফল উৎসবে! ক্যাম্পাসের পাকা কাঁঠাল থেকে শুরু করে আম, জাম, লিচু, আনারস, পেঁপে, করমচাসহ প্রায় সব ধরনের মৌসুমী ফল। আয়োজনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সপ্তম ছায়ামঞ্চকে সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। বিকেল হতেই একে একে উপস্থিত হন জাবি প্রেসক্লাবের সাবেক ও বর্তমান সদস্যবৃন্দ। ছায়ামঞ্চের বেদীতে জমে উঠে আড্ডা। সাবেক সদস্যরা তাদের সোনালি অতীতের স্মৃতিচারণ করছিলেন আর নবীনরা শুনছিলেন প্রাণভরে। ছায়ামঞ্চের পাকুড় গাছে রঙিন কাপড় লাগিয়ে বর্ণিল করে সাজানো হয়। দুজন পথচারী যাচ্ছিলেন পাশের রাস্তা দিয়ে। তারাও শামিল হলেন আয়োজনে। জাবির পরিবেশটাই এমন। চেনা-অচেনা সবাইকে আপন করে নেয় পরম মমতায়।
জাবি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান বলেন, ‘ফলের মৌসুমে ক্যাম্পাস নাজে নানা জাতের ও স্বাদের ফলে। বাজারে এসব ফল পাওয়া গেলেও ক্যাম্পাসের ফলের সঙ্গে শিক্ষার্থীর এক আত্মিক বন্ধনে বাঁধা। সবাই মিলে উৎসবের সঙ্গে ফল খাওয়ার যে আনন্দ তা ছড়িয়ে দেয়ার জন্যই এ আয়োজন। বন্ধু-বান্ধব, পরিবার, সংগঠন সব জায়গায় মৌসুমি ফলকে নিয়ে যে উৎসবে মেতে উঠা যায় এ প্রচেষ্টাই ছিল আমাদের।’ বর্ষার আগমনী বৃষ্টি আর নতুন কিশলয়ের রঙে প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে ক্যাম্পাসে। শিক্ষার্থীরাও অনেকেই চলে আসতে শুরু করেছেন। কিন্তু কোথাও যেন এক শূন্যতা! মহামারী কাটিয়ে সুস্থ হয়ে উঠুক পৃথিবী, সচল হোক প্রিয় আঙিনা; এ প্রত্যাশাই যেন সকলের।