ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২

বিদ্যুৎ বিভাগের পরিপত্র

সকল সরকারি অফিসসহ বিভিন্ন স্থাপনার ছাদে সোলার প্যানেল বসানো হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:৫৩, ৮ জুলাই ২০২৫

সকল সরকারি অফিসসহ বিভিন্ন স্থাপনার ছাদে সোলার প্যানেল বসানো হবে

৬ মাসের মধ্যে সোলার প্যানেল স্থাপন করা হবে

সব সরকারি অফিস, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও হাসপাতালে আগামী ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে সোলার প্যানেল স্থাপন করা হবে। সরকারি অফিসে ক্যাপেক্স এবং স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও হাসপাতালে ওপেক্স মডেলে বিনিয়োগ করা হবে। এক্ষেত্র প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো ব্যয় বহন করতে হবে না।
সোমবার এক পরিপত্রে সরকারের এই পরিকল্পনা তুলে ধরেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। পরিপত্রে বলা হয়েছে, জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচির আওতায় সরকারি অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য স্থাপনার ছাদে সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে আগামী ডিসেম্বর মধ্যে দেশের জাতীয় গ্রিডে প্রায় ৩,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সংযুক্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা ২০২৫ অনুযায়ী সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ২০ শতাংশ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে পূরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
বর্তমানে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের মাত্র ৫.৬ শতাংশ (১.৫৬৩.৭ মেগাওয়াট) সৌর বিদ্যুৎ থেকে উৎপাদিত হচ্ছে, যা প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। ভারতে সৌর বিদ্যুৎ থেকে ২৪ শতাংশ, পাকিস্তানে ১৭.১৬ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কায় ৩৯.৭ শতাংশ বিদ্যুৎ আসে।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৫৬ শতাংশ বিদ্যুৎ আসে প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে, যার মজুত দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ বিভাগ ‘জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচি’ প্রণয়ন করেছে।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ভবনের ছাদে (ভাড়া করা স্থাপনা ব্যতীত) সোলার প্যানেল স্থাপন করা হবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ক একটি ওয়েবভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন চালু হয়েছে। এই অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ছাদের আয়তন বিবেচনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির বিবরণ ও প্রাক্কলিত ব্যয় জানা যাবে। এই প্রক্রিয়ায় নেট মিটারিং পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ বিল সমন্বয় করা হবে। 
একইভাবে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও হাসপাতালে ওপেক্স মডেলে বিনিয়োগের মাধ্যমে সোলার প্যানেল স্থাপন করা হবে। যেখানে প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো ব্যয় বহন করতে হবে না। ফলশ্রুতিতে, প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয় হবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেমগুলো ব্যাটারিবিহীন ও গ্রিডে সংযুক্ত হবে। তবে চাহিদার ভিত্তিতে কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য স্থাপনায় ব্যাটারি যুক্ত হতে পারে। নেট মিটারিং পদ্ধতিতে সিস্টেমগুলো পরিচালিত হবে। প্রতি তিন মাস অন্তর গ্রিডে সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ এবং গ্রিড থেকে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ সমন্বয় করে গ্রাহককে বিল দেওয়া হবে।
ছাদের আয়তনভেদে সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেমগুলো ১০ কিলো-ওয়াট থেকে কয়েক মেগাওয়াট হবে। এই কার্যক্রমের ফলে সরকার আশা করছে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের জাতীয় গ্রিডে প্রায় ৩,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হবে। এর ফলে শুধু বিদ্যুতের সরবরাহই বাড়বে না, পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি ও পরিবেশের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
উল্লেখ্য, ২০২৫-২৬ বাজেটে সোলার প্যানেল, ইনভার্টার ও ব্যাটারির কর হ্রাস করে ১ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়াও, সোলার থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য ১০ বছরের আয়কর অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
এ কর্মসূচির মাধ্যমে দেশে বার্ষিক প্রায় ৪,২০০ কোটি টাকা অর্থসাশ্রয় হবে বলে বিদ্যুৎ বিভাগের পরিপত্রে বলা হয়েছে।
উৎপাদিত বিদ্যুতের আর্থিক মূল্য দাঁড়াবে প্রায় ২৫,২০০ কোটি টাকা। এছাড়া, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমবে বছরে প্রায় ১৮ লক্ষ টন। যার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমদানিকৃত জ্বালানির ওপর নির্ভরতা অনেকাংশে কমবে। এই উদ্যোগের ফলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ বছরে প্রায় ২৫ লাখ টন হ্রাস পাবে; যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও সংহত করবে।
এছাড়াও, কার্বন ক্রেডিট বিক্রির মাধ্যমে বছরে প্রায় ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
এ ছাড়া আরও বলা হয়েছে, জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচির বাস্তবায়নে প্রায় নতুন ১ লাখ কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে। এই কর্মসূচি নতুন বাজার সৃষ্টি করবে, দেশের তরুণ ও দক্ষ জনশক্তির জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সামগ্রিকভাবে, এ কর্মসূচি বিদ্যুৎ খাতে গতি আনবে, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাবে, পরিবেশ রক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে। বিশেষত, নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা দ্রুততম সময়ে অর্জনের ক্ষেত্রে এই কর্মসূচি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

প্যানেল হু

×