
বিএসইসিতে অস্থিরতার সপ্তাহে শেয়ারবাজার
এক নির্বাহী পরিচালককে বাধ্যতামূলক অবসর এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের পদত্যাগের দাবিতে অচলাবস্থার সপ্তাহে দেশের উভয় শেয়ারবাজারে মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। যাতে করে বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিও বা বিনিয়োগ কমেছে ১৩ হাজার ২১৭ কোটি টাকা। যে সপ্তাহটিতে লেনদেন কমেছে ৪১ শতাংশ।
গত ৪ মার্চ নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় খন্দকার রাশেদ মাকসুদের কমিশন। এরপরই ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে পড়েছে সংস্থাটির দপ্তর। বুধবারে চেয়ারম্যানসহ কমিশনাররা চারঘণ্টা নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। পরে সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হস্তক্ষেপে তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
এই সময়ে কমিশনের প্রায় ১০ জন কর্মকর্তা আহত হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার সারাদিন অফিস না করলেও শেষ বিকেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে চেয়ারম্যানসহ কমিশনার নিজ কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। এর আগে সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তারা। বিএসইসি ভবনে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, চাপের কাছে মাথা নত করবেন না। চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযান আরও বেগমান হবে।
একই দিন রাতে চেয়ারম্যানের গানম্যান শেরেইবাংলা থানায় ১৬ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এই পরিস্থিতিতে আজ শেয়ারবাজারে আবার লেনদেন শুরু হবে। এদিকে বিএসইসির চলমান পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনাসহ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ঢাকা ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ)।
সার্বিক পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহের বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শুরুতে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৯৫ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। আর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৮২ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিও কমেছে ১৩ হাজার ২১৭ কোটি টাকা বা ২ শতাংশ।
গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ১ হাজার ৮১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৩ হাজার ৫৬ কোটি ১ লাখ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ১ হাজার ২৪২ কোটি ৫১ লাখ টাকার বা ৪১ শতাংশ।
সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৩ পয়েন্ট বা ০.৮৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৫২০৪ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৬ পয়েন্ট বা ০.৫২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১১৬১ পয়েন্টে।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৫টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৮৬টির বা ২১.৭৭ শতাংশের, কমেছে ২৮৯টির বা ৭৩.১৬ শতাংশের এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২০টির বা ৫.০৬ শতাংশের।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গত সপ্তাহে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ১৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকার। সপ্তাহটিতে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৩০ পয়েন্ট বা ০.৮৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৪৫০৩ পয়েন্টে।
সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩২৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৮৫টির দর বেড়েছে, ২১৫টির দর কমেছে এবং ২৯টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।