
.
গত ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। যা সেপ্টেম্বরে ছিল এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে খেলাপি ঋণ কমেছে ৯ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা। শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে ৯ শতাংশে। যা আগে ছিল সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ২০২২ সালে ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। এক বছরে হিসাবে খেলাপি ঋণ বেড়েছে শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ। খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, আর্থিক প্রতিবেদন ভালো দেখাতে বছরের শেষ তিন মাসে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ আদায়ে জোর দেয়। যে কারণে প্রতি বছরই সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় ডিসেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ কমতে দেখা যায়। আবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলেরও (আইএমএফ) খেলাপি ঋণ কমাতে শর্ত রয়েছে। সেই শর্ত পরিপালনে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তাই ব্যাংকগুলো আগে থেকেই খেলাপি ঋণ কমাতে প্রস্তুতি নিয়েছে। তারও প্রভাবে কিছুটা কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
৩ মাস পর ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের হিসাবে সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ হাজার কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৯ শতাংশ। অর্থাৎ ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে এসে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমেছে ৯ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। আগের বছরের, অর্থাৎ ২০২২ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। সেই হিসাবে অবশ্য এক বছরে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৪ হাজার ৯৭৭ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে।
সম্প্রতি খেলাপি ঋণ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক রোডম্যাপ বা পথনকশা ঘোষণা করেছে। এই পথনকশা বা রোডম্যাপের মাধ্যমে আগামী ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে ব্যাংক খাতের সার্বিক খেলাপি ঋণ ৮ শতাংশের নিচে নামানো হবে, যা এখন ৯ শতাংশে রয়েছে। আর রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ এবং বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে, যা ডিসেম্বর শেষে যথাক্রমে ২০ দশমিক ৯৯ ও ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ২০ দশমিক ৯৯ শতাংশ। সেপ্টেম্বর শেষে এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ছিল ৬৫ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। তিন মাসে সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে ১৬ কোটি টাকা।
গত বছরের শেষে তিন মাসে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ কমেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮১ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ০৪ শতাংশ। ডিসেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
তিন মাসে কমেছে ১০ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। আর বিদেশী ব্যাংকে ৮৫ কোটি টাকা কমে ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২০১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪ দশমিক ৮২ শতাংশ। তবে বিশেষায়িত ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, খেলাপি ঋণ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি রোডম্যাপ নিয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে পরিচালকদের নীতিমাল কঠোর করা হয়েছে। যাতে ঋণ শৃঙ্খলা বজায় থাকে এবং আমানতকারী ও শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ সংরক্ষণ হয়। আর অডিট কমিটির চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র পরিচালক মধ্যে থেকে থাকতে হবে। এতে করে অডিট কমিটির নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী হবে। এমন পদক্ষেপ আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। ফলে আগামীতে খেলাপি ঋণের লাগাম টানা যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা। তিন মাসে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৫২ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণের স্থিতি রয়েছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকে। ডিসেম্বর শেষে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৯৬ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। রাষ্ট্রমালিকানাধী ব্যাংকের ৩ লাখ ১৩ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা। বিদেশী ব্যাংকের ৬৬ হাজার ৪৫৬ কোটি এবং বিশেষায়িত ব্যাংকের ৪০ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে তথ্য দেয়, বাস্তবে তা আরও বেশি। খেলাপি হওয়ার পরে পুনর্তফসিল করা ঋণও খেলাপি, কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক তা দেখায় না। খেলাপি হওয়ার পরে গ্রাহক উচ্চ আদালতে গিয়ে স্থিতিবস্থার আদেশ নিয়ে আসে। ওই ঋণকেও খেলাপি দেখানো হয় না। আবার কোনো ঋণ খেলাপি হলে অবলোপন করতে পারে বাণিজ্যিক ব্যাংক।