
.
রমজানের প্রথম দিনে ছোলা, রসুন, ব্রয়লার মুরগি, আটা ও ময়দার দাম কমলেও বেড়েছে ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ ও আদার। স্থিতিশীল রয়েছে চাল, চিনি, ডাল, ময়দা ও মসলাপাতির দাম। গরু ও খাসির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। শসা ও বেগুনের দাম বাড়লেও লেবু ও টমেটোর কমেছে। মাছ বিক্রি হচ্ছে আগের দামে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার, ফকিরাপুল বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট, রায়ের বাজার সিটি করপোরেশন কাঁচা বাজার ও নিউ মার্কেট কাঁচা বাজার থেকে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। রোজার প্রথম দিন শুক্রবার হওয়ায় সকাল থেকেই বাজারে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এ কারণে সকালের দিকে কিছু পণ্যের দাম বাড়লেও দুপুরের পর চাহিদা কমায় বেশকিছু পণ্যের দাম কমেও গেছে। এ ছাড়া জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সরকারি সংস্থাগুলো বাজার তদারকি করায় পণ্যের দাম নিয়ে কারসাজি করার তেমন সুযোগ পায়নি অসাধু ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া ভোক্তাদেরও একসঙ্গে বেশি করে পণ্য না কেনার বিষয়ে সচেতনতা বেড়েছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে নিত্যপণ্যের বাজারে পণ্যের কোনো সংকট দেখা যায়নি। ক্রেতারা চাহিদা অনুযায়ী পণ্য কিনতে পেরেছেন। এদিন, খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি ছোলায় প্রায় ১০ টাকা দাম কমে মানভেদে ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া কেজিপ্রতি ব্রয়লার মুরগিতে ২০ টাকা কমে খুচরায় বিক্রি হয়েছে ২৪০-২৫০ টাকায়। দাম কমে প্রতিকেজি আটা খোলা ৫৫-৫৮, প্যাকেট আটা ৬৫-৬৮ এবং ময়দা প্যাকেট ৭৫-৭৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে।
তবে দাম বেড়ে প্রতিলিটার সয়াবিন খোলা ১৭০-১৭৫, সয়াবিন তেল পাঁচ লিটারের ক্যান ৮৭০-৮৯০, সয়াবিন তেল প্রতিলিটার বোতল ১৮০-১৮৫, পাম অয়েল খোলা ১২৫-১৩০, পাম অয়েল সুপার ১৩৫-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৩৫-৪০ রসুন ১০০-১৫০ ও আদা মানভেদে ১২০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। সরু মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল মানভেদে ৭৫-৮০, মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা ৫০-৫৬ এবং মোটা মানের স্বর্ণা ও চায়না ইরি ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিকেজি মসুর ডাল মানভেদে ১০০-১৫০, চিনি ১১৫-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। গরুর, মাংস প্রতিকেজি ৭৫০-৮০০, খাসি মানভেদে ১১০০-১১৫০, দেশী মুরগি প্রতি পিস ৪০০-৮০০ এবং সোনালি প্রতিকেজি মানভেদে ৩৮০-৪০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া সব ধরনের মাছের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মুদিপণ্যের ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজার প্রথম দিনেই বেশকিছু পণ্যের দাম কমে গেছে। এর মধ্যে ছোলা অন্যতম। প্রতিকেজি ছোলায় ১০ টাকা কমে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়। শবেবরাতের পর ছোলার দাম বেড়ে গিয়ে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ফকিরাপুল বাজারের মুদিপণ্যের ব্যবসায়ী আব্দুল বাছেদ জনকণ্ঠকে জানান, ক্রেতারা আগেই রোজার পণ্য কিনেছেন। এ কারণে চাহিদা কমায় প্রথম দিনে কিছু পণ্যের দাম কমে গেছে। সামনের দিনগুলোতে পণ্যের দাম আরও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। সম্প্রতি দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছিলেন, মানুষ একটু কম কিনলে রোজার প্রথম দিনেই বেশকিছু পণ্যের দাম কমে যাবে। শুধু তাই নয়, এবার ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত রয়েছে। তাই বাজারে পণ্যের কোনো সংকট তৈরি হবে না। এদিকে বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, দাম বেড়ে প্রতিকেজি বেগুন ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে লেবুর দাম কমেছে। প্রতিহালি লেবু ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। এ ছাড়া টমেটো ৪০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য সবজির দাম মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে।
কাওরান বাজারে ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান ॥ পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রথম দিনই ঢাকার কারওয়ানবাজারে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। শুক্রবার সকালে কাওরান বাজারের কিচেন মার্কেট থেকে এই অভিযান শুরু করা হয়। অভিযান পরিচালনা করেন অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। এ সময় ঢাকা জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তারাও তার সঙ্গে ছিলেন। অভিযান শুরুর আগে মনজুর শাহরিয়ার সাংবাদিকদের বলেন, রমজানে কিছু বিশেষ সবজির দাম বেড়ে যায়। এগুলো আমরা আজকে তদারকি করা হবে। এ ছাড়া মুদি সামগ্রী ও মুরগি নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে কি না সেটি তদারকি করা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য থেকে শুরু করে চাল, মাছ, মাংস, সবজির বাজার তদারকিতে যায় ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।