ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গ্রাহককে পাঠাতে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশ

এসএমএস পাঠাতে খরচ ৬০ কোটি টাকা!

প্রকাশিত: ০৯:৩৭, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

 এসএমএস পাঠাতে খরচ ৬০ কোটি টাকা!

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বীমা গ্রাহকদের প্রিমিয়ামের টাকা পরিশোধ সংক্রান্ত তথ্য এসএমএস’র (মুঠোফোনে খুদে বার্তা) মাধ্যমে দেয়ার লক্ষ্যে ইউনিফাইড মেসেজিং প্লাটফর্ম বা ইউএমপি’র উদ্যোগ নিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। এ জন্য প্রতিটি পলিসির বিপরীতে বছরে ৩২ টাকা চার্জ গুণতে হবে বীমা কোম্পানিগুলোকে। এর সঙ্গে ভ্যাট-ট্যাক্স মিলিয়ে প্রতিটি গ্রাহককে মেসেজ পাঠাতে বছরে খরচ হবে ৪০ টাকা। সে হিসাবে ৩২টি লাইফ বীমা কোম্পানির বছরে খরচ দাঁড়াবে ৬০ কোটি টাকা। এমনই এক নির্দেশনাবলী অনুসরণে সম্প্রতি বীমা কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিয়েছে আইডিআরএ। কর্তৃপক্ষ বলছে, উন্নত গ্রাহকসেবা, ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনায়ন, এজেন্ট কর্তৃক প্রিমিয়াম আহরণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে বীমা কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থা সুদৃঢ় করার অংশ হিসেবে ইউনিফাইড মেসেজিং প্লাটফর্ম বা ইউএমপি’র উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বেসরকারী একটি প্রতিষ্ঠানকে এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আইডিআরএ’র বলছে, ইউএমপি’র মাধ্যমে প্রত্যেক বীমা গ্রাহককে এসএমএস’র মাধ্যমে লেনদেনের নোটিফিকেশন পাঠানো হবে। এর ফলে স্বচ্ছতা ও আস্থা অনেকাংশেই প্রতিষ্ঠিত হবে, যা দ্বারা বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি উপকৃত হবে। ইউএমপি বাস্তবায়নের কারণে গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে কোম্পানিগুলোকে পৃথকভাবে কোন যন্ত্রপাতি স্থাপন করতে হবে না। ফলে খরচ কমে আসবে এবং তামাদি পলিসিও উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে। ইউনিফাইড মেসেজিং প্লাটফর্ম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বীমা কোম্পানিগুলোকে তাদের পলিসি ও পলিসি হোল্ডার সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য নির্ধারিত ফরমেটে ইউএমপি পোর্টালে আপলোড করতে বলা হয়েছে। এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিটি বীমা কোম্পানির দু’জন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেবে আইডিআরএ। আর ইউএমপি’র সেবা সম্পর্কে বীমা গ্রাহকদের সচেতন করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে বীমাকারীদের। বীমা কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, ইতোমধ্যে বেস কয়েকটি কোম্পানি বীমা পলিসির প্রিমিয়ারের বিপরীতে গ্রাহকদের এসএমএস সেবা দেয়া শুরু করেছে। এক্ষেত্রে এসএমএস’র জন্য কোম্পানির যে অর্থ খরচ হচ্ছে, আইডিআরএ তার থেকে কয়েকগুণ বেশি খরচ নির্ধারণ করেছে। ইউএমপি বাস্তবায়নে বীমা কোম্পানিগুলোকে তাদের প্রতিটি পলিসির বিপরীতে ত্রৈমাসিক ভিত্তিক তথা প্রতি ৩ মাসে ৮ টাকা হারে খরচ করতে হবে। পে-অর্ডার অথবা পে-চেকের মাধ্যমে প্রথম মাসের ১ তারিখের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ডিওইআর সার্ভিস লিমিটেড বরাবর এ টাকা পরিশোধ করতে হবে। তবে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে এ টাকা পরিশোধ করতে হবে। বীমা কোম্পানিগুলোর দেয়া তথ্য মতে, দেশে সচল পলিসির সংখ্যা ১ কোটি ৮ লাখ। তবে এই হিসাব ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের। ডিসেম্বর পর্যন্ত পলিসি সংখ্যা সোয়া কোটি থেকে দেড় কোটিতে উন্নীত হবে। এর সঙ্গে যদি ল্যাপস পলিসির হিসাব ধরা হয় তাহলে মেসেজ পাঠাতে হবে প্রায় দেড় কোটি গ্রাহকের কাছে। তাদের হিসাব অনুসারে, প্রতিটি পলিসির জন্য প্রতি ৩ মাসে ৮ টাকা হারে বছরে খরচ দিতে হবে ৩২ টাকা। এর সঙ্গে ভ্যাট-ট্যাক্স মিলিয়ে প্রতিটি গ্রাহককে মেসেজ পাঠাতে বছরে খরচ হবে ৪০ টাকা। সে হিসাবে ৩২টি লাইফ বীমা কোম্পানির বছরে খরচ দাঁড়াবে ৬০ কোটি টাকা। বীমা কোম্পানিগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিটি পলিসি গ্রাহককে সাধারণভাবে বছরে ২ থেকে ২৪টি এসএমএস পাঠানো হয়। অর্থাৎ বাৎসরিক প্রদেয় প্রিমিয়ামের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের আগে প্রিমিয়াম পরিশোধে তাগাদা দেয়ার জন্য একবার এবং প্রিমিয়াম গ্রহণের পর গ্রাহককে তা নিশ্চিত করতে আরেকবার নোটিফিকেশন পাঠানো হয়। একইভাবে ষান্মাসিক প্রিমিয়ামের ক্ষেত্রে বছরে ৪টি, ত্রৈমাসিক প্রিমিয়ামের ক্ষেত্রে ১২টি এবং মাসিক প্রিমিয়ামের ক্ষেত্রে ২৪টি এসএমএস পান বীমা গ্রাহকরা। প্রতিটি এসএমএস পাঠাতে বীমা কোম্পানির খরচ হয় ভ্যাট-ট্যাক্সসহ ৫৭ পয়সা। অর্থাৎ কোন পলিসি গ্রাহককে সর্বোচ্চ সংখ্যক এসএমএস পাঠানো হলেও কোম্পানির খরচ হয় বছরে ১৩ টাকা ৬৮ পয়সা। আর বার্ষিক প্রিমিয়ামের ক্ষেত্রে এই খরচ ১ টাকা ১৪ পয়সা। সার্বিক বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আইডিআরএ’র সদস্য ড. এম মোশাররফ হোসেন বলেন, যারা বলছেন এসএমএস খরচ ১৪ টাকা, এটা ঠিক আছে। কিন্তু এর নিয়মিত ব্যবস্থাপনা এবং ৭৮টি কোম্পানির জন্য ৭৮টি মডিউল তৈরি করা; প্রতিটি বিষয়ে আলাদা আলাদা খরচ আছে। এ খরচ কিন্তু ৩২ টাকার মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত। তিনি আরও বলেন, ব্যাংক এসএমএস’র জন্য প্রতিবছর ১৫০ টাকা নেয়। বীমার প্রতি পলিসিতে নেয়া হবে ৩২ টাকা। এটাই আমরা মেনে নিতে পারছি না।
×