
ছবি: জনকণ্ঠ
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বালুরচর ইউনিয়নের চান্দেরচর, খাসকান্দি ও মদিনাপাড়া এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে পুদিনাপাতা—একটি সুগন্ধি, ওষুধিগুণসম্পন্ন ভেষজ উদ্ভিদ। শুধু রমজান মাস নয়, বরং বছরজুড়েই এই এলাকার পুদিনা বাজারে থাকে তুমুল চাহিদায়। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও যাচ্ছে এই মাটি ও ঘামের সুঘ্রাণ মিশে থাকা পাতা।
স্থানীয় চাষি মো. আমির হোসেন জানান, “আমরা প্রায় ৪০-৫০ বছর ধরে পুদিনা চাষে জড়িত। এই মৌসুমে আমি ৯০ শতক জমিতে চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বাজারজাতকরণ ভালো হচ্ছে। সবচেয়ে ভালো দামের সময় রমজান, তবে সারা বছরই পাতা বিক্রি হয়।”
চাষি মো. সুন্দর আলী জানান, “চাষ ভালো হয়েছে। পরিবেশ অনুকূল থাকলে ভালো লাভ হয়। তবে রাস্তার দুরবস্থার কারণে আমরা অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হই। পুদিনা তোলার তিন-চার ঘণ্টার মধ্যে বাজারে না পৌঁছালে তা নষ্ট হয়ে যায়।”
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আবু সাঈদ শুভ্র বলেন, “সিরাজদিখানে বাণিজ্যিকভাবে পুদিনা চাষ একমাত্র বালুরচরের চান্দেরচর ও আশপাশের এলাকাতেই হয়। আনুমানিক পাঁচ থেকে ছয় হেক্টর জমিতে এই চাষ হয়। অন্যান্য এলাকায় যারা চাষ করেন, তা শুধু ছাদবাগান বা টবে সীমাবদ্ধ।”
সুগন্ধি এই পাতাটি শুধু স্বাদ বা ঘ্রাণেই সীমাবদ্ধ নয়, এতে রয়েছে অসাধারণ স্বাস্থ্যগুণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, পুদিনা—
-
হজমে সহায়ক: এটি পাচনতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বদহজম, গ্যাস, বমি বমি ভাব কমাতে সাহায্য করে।
-
শ্বাসপ্রশ্বাসে উপকার: ঠান্ডা, সর্দি ও অ্যাজমার উপশমে ব্যবহৃত হয় পুদিনা। এর মেনথল উপাদান শ্বাসনালী খুলে দেয়।
-
মাথাব্যথা কমায়: পুদিনার তেল বা পাতার রস কপালে মালিশ করলে মাথাব্যথা উপশম হয়।
-
মুখের দুর্গন্ধ দূর করে: এটি প্রাকৃতিক মাউথফ্রেশনার হিসেবে কাজ করে, মুখের জীবাণু দূর করে।
-
ত্বকে উপকারী: ব্রণ ও ফুসকুড়ি দূর করতে পুদিনার পেস্ট ব্যবহার করা হয়।
-
রক্ত পরিষ্কার করে: নিয়মিত সেবনে শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়।
-
মানসিক প্রশান্তি আনে: পুদিনার ঘ্রাণ স্নায়ুকে শান্ত করে, ঘুম ভালো হয়।
রমজানে ইফতারিতে যেমন এটি শরবত বা সালাদে ব্যবহার হয়, তেমনি সারা বছর পুদিনা চা, পানীয় ও ভেষজ ওষুধ তৈরিতে বহুল ব্যবহৃত হয়।
চাষিরা বলেন, সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ, সহজ শর্তে ঋণ ও রাস্তা উন্নয়নের ব্যবস্থা হলে এই চাষ আরও প্রসার লাভ করবে। তখন পুদিনা হতে পারে এই অঞ্চলের অন্যতম রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্য।
প্রাকৃতিকভাবে অনুকূল আবহাওয়ার সাথে স্থানীয় মানুষের শ্রম ও নিষ্ঠা মিলিয়ে চান্দেরচরের পুদিনাপাতা হয়ে উঠেছে এক সম্ভাবনাময় কৃষিপণ্য। প্রয়োজন শুধু একটু দৃষ্টি—সরকারি, বেসরকারি ও নীতিনির্ধারকদের।
মুমু ২