ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চীনের মহাকাশ স্টেশনে অজানা ব্যাকটেরিয়া

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:৩৬, ২৮ মে ২০২৫

চীনের মহাকাশ স্টেশনে অজানা ব্যাকটেরিয়া

ছবি: সংগৃহীত

চীনের মহাকাশ স্টেশনতিয়ানগং’- আবিষ্কৃত হয়েছে এক অজানা ব্যাকটেরিয়া, যা পৃথিবীতে আগে কখনও দেখা যায়নি।নিয়ালিয়া তিয়ানগোঙ্গেনসিসনামক এই ব্যাকটেরিয়া বিজ্ঞানীদের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। এর বৈশিষ্ট্য অভিযোজন ক্ষমতা অনন্য।

২০২৩ সালের মে মাসে চীনা মহাকাশযান শেনঝো-১৫ মিশনের সময়, তিয়ানগং স্টেশনের আবাসিক মডিউল থেকে সংগৃহীত নমুনা বিশ্লেষণে এই ব্যাকটেরিয়াটি প্রথম শনাক্ত করা হয়। গবেষণার অংশ ছিল ‘China Space Station Habitation Area Microbiome Program (CHAMP)’ এই কর্মসূচিতে দেখা গেছে, তিয়ানগং-এর মাইক্রোবায়োম আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের (ISS) তুলনায় ভিন্ন ধরনের।

মানবদেহ-সংশ্লিষ্ট জীবাণু ছাড়াও এখানে পাওয়া গেছে অনেক অনন্য বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মাইক্রোব, যাদের জিনগত কার্যকরী বৈচিত্র্য রয়েছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো স্পষ্টভাবে স্পেসের চরম পরিবেশ যেমন মাইক্রোগ্র্যাভিটি, উচ্চ রেডিয়েশন, সীমিত স্থান এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কঠোর নিয়মের সঙ্গে অভিযোজিত হয়ে তৈরি হয়েছে।

এই নতুন প্রজাতিটি মাটি-নিবাসী ব্যাকটেরিয়া Niallia circulans-এর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়, যা আগে Bacillus গোত্রে শ্রেণিবদ্ধ ছিল এবং রোগ সৃষ্টির জন্য পরিচিত ছিল। এরা শক্তিশালী স্পোর তৈরি করতে সক্ষমযা কঠিন পরিবেশে টিকে থাকতে সাহায্য করে।

কিন্তুনিয়ালিয়া তিয়ানগোঙ্গেনসিস’-এর সবচেয়ে আলাদা দিক হলোএটি জেলাটিন ভেঙে নাইট্রোজেন কার্বন আহরণ করতে পারে, যা স্পেসে বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, এটি শক্তির অন্যান্য উৎস ব্যবহার করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেযা জীবনের অভিযোজনের দুর্দান্ত নমুনা।

যদিও এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি যে, এই ব্যাকটেরিয়া সরাসরি মহাকাশচারীদের জন্য হুমকি কিনা, তবু এর গঠন জিনগত উপাদান অনেকটা এমন জীবাণুর মতো যা দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষের জন্য মারাত্মক হতে পারে।

এর উপর, স্টেশনে পাওয়া ব্যাকটেরিয়াগুলোর মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের লক্ষণ দেখা গেছে, যা ভবিষ্যতের যেকোনো সংক্রমণ মোকাবেলাকে জটিল করে তুলতে পারে।

শুধু স্বাস্থ্যের দিক থেকেই নয়, এই জীবাণুগুলো যন্ত্রপাতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে, সংবেদনশীল যন্ত্রাংশ নষ্ট করে মিশনের সাফল্যকেই বিপন্ন করতে পারে।

এর আগে NASA- Phoenix Mars Mission-এর প্রস্তুতিমূলক সময়ে পরিষ্কার রুমেও পাওয়া গেছে এমন অজানা জীবাণু, যারা বিষাক্ত পদার্থ কঠিন পরিবেশে টিকে থাকার জন্য বিশেষ জিন বহন করে।

চাঁদ, মঙ্গল তার পরবর্তী অভিযানের জন্য মানুষের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে এই 'স্পেস মাইক্রোবায়োম' বিষয়টি এখন অগ্রাধিকার পাচ্ছে। কারণ, কেবলমাত্র সংক্রমণ প্রতিরোধ নয়, এখন জীবাণুর অভিযোজন বিবর্তনকেও গুরুত্ব সহকারে বিশ্লেষণ করতে হবে।

নিয়ালিয়া তিয়ানগোঙ্গেনসিস’-এর আবিষ্কার আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, মহাকাশের যাত্রায় মানুষ একা নয়। অদৃশ্য এই ক্ষুদ্র জীবাণু হয়তো ভবিষ্যতের মিশনের সাফল্য কিংবা ব্যর্থতার অন্যতম নিয়ামক হতে পারে।

মুমু

×