ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ডিএনএ ফাঁস করলো প্রাচীন প্রেমের গল্প!

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৭:২৪, ২৮ মে ২০২৫

ডিএনএ ফাঁস করলো প্রাচীন প্রেমের গল্প!

ছবি: সংগৃহীত

মানবজাতির ইতিহাসে এক যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। সাইবেরিয়ার একটি গুহা থেকে পাওয়া এক কিশোরীর হাড় পরীক্ষায় জানা গেছে, তার মা ছিলেন নিয়ানডারথাল প্রজাতির এবং বাবা ছিলেন ডেনিসোভান। দুই ভিন্ন মানব প্রজাতির এই সন্তানের নাম দেওয়া হয়েছে ডেনিসোভা ১১, যিনি বিজ্ঞানীদের মতে, ডেনিসোভা ১১ একমাত্র প্রাচীন পরিচিত ব্যক্তি যিনি এমন দুটি আলাদা প্রজাতির (নিয়ানডারথাল, ডেনিসোভানদের) মানুষের মিলনে জন্ম নিয়েছেন।

ডেনিসোভা ১১ নামের এই কিশোরীর একটি হাড় পাউডার করে তার *ডিএনএ বিশ্লেষণ* করা হয়। ফলাফল অবাক করে দেয় বিজ্ঞানীদের। ডিএনএ-তে দেখা যায়, তার মা ছিলেন নিয়ানডারথাল আর বাবা ডেনিসোভান। এমন সংমিশ্রণ পৃথিবীতে এটাই প্রথম এবং একমাত্র প্রমাণিত ঘটনা।

নিয়ানডারথাল: দক্ষ শিকারি যন্ত্র প্রস্তুতকারী

নিয়ানডারথালরা (Homo neanderthalensis) ইউরোপ পশ্চিম এশিয়ায় বসবাস করত প্রায় ৩০ হাজার বছর আগেও। তারা কঠিন জলবায়ু বরফযুগ পার করে বিভিন্ন এলাকায় বাস করত এবং জটিল যন্ত্র তৈরি শিকার করতে পারত।

ডেনিসোভান: রহস্যময় প্রাচীন মানব

ডেনিসোভানদের (Homo sapiens denisova) সম্পর্কে জানা খুবই কম। বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত তাদের কেবল সাইবেরিয়ার ডেনিসোভা গুহা থেকেই পেয়েছেনতাও অল্প কয়েকটি হাড় দাঁতের টুকরো। তাদের চেহারা, ভাষা বা জীবনযাপন কেমন ছিলতা এখনো অজানা।

মেয়েটি মারা যায় প্রায় ৫০ হাজার বছর আগে, মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল আনুমানিক ১৩ বছর। তবে তার জীবনযাত্রা বা মৃত্যুর কারণ এখনো রহস্যই রয়ে গেছে।

গবেষণায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসেনিয়ানডারথালদের গমনাগমন সম্পর্কে। আগে ধারণা ছিল, তারা নিজেদের নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু ডেনিসোভা ১১-এর ডিএনএ বলছে, তার মা আসলে পশ্চিম ইউরোপ থেকে এসেছিলেন, যা পূর্বাঞ্চলের নিয়ানডারথালদের তুলনায় আলাদা।

কেন গুরুত্বপূর্ণ এই আবিষ্কার?

* এটি প্রমাণ করে, প্রাচীন মানব প্রজাতির মধ্যে যোগাযোগ মিলনের ঘটনা ঘটে থাকত।

* আধুনিক মানুষের জিনেও নিয়ানডারথাল ডেনিসোভানদের কিছু অংশ এখনো বহমান।

* মানুষ কীভাবে বিবর্তিত হয়েছে, সে ইতিহাসে এটি এক চমকপ্রদ অধ্যায়।

ডেনিসোভা ১১ কেবল একটি প্রত্নতাত্ত্বিক হাড় নয়। তিনি একটি জীবন্ত প্রমাণ, যে মানুষ কখনোই বিচ্ছিন্ন ছিল নাভিন্নতা থেকেই জন্ম নেয় নতুন ইতিহাস, নতুন উত্তরাধিকার। হয়তো আজও আমাদের শরীর বহন করছে সেই গল্পেরই কিছু জিনগত চিহ্ন।

মুমু

×