
নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় আসছে বড় রদবদল। সংশোধিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে যোগ হয়েছে নতুন ধারা, বদলানো হয়েছে পুরনো প্রক্রিয়া। বিশেষ করে যৌতুকের দাবিতে স্বামীর বিরুদ্ধে সাধারণ জখমের অভিযোগ এখন আর আগের ট্রাইবুনালে নয়, নিতে হবে সরাসরি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে।
সম্প্রতি সংশোধিত এই আইনে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ১১(গ) ধারা অনুযায়ী যৌতুকের দাবিতে সাধারণ জখম করার মামলাগুলো আর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে নয়, সরাসরি পরিচালিত হবে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। সংশোধনীতে এটিকে একটি 'বড় পরিবর্তন' হিসেবেই আখ্যায়িত করা হয়েছে।
এই অপরাধটি আপদযোগ্য হওয়ায় এতদিন ট্রাইবুনালের বিচারিক সময়ের একটি বড় অংশ এই মামলাগুলোর পেছনেই ব্যয় হতো বলে সুধীজনরা মনে করেন। এখন সেই মামলা সরিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নেয়ার ফলে বিচারপ্রক্রিয়াও দ্রুত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফৌজদারি কার্যবিধি এবং সাক্ষ্য আইন অনুসারে এই মামলাগুলোর কার্যক্রম এখন থেকে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতেই চলবে।
তবে সংশোধনীতে উল্লেখ রয়েছে, ইতোমধ্যে ১১(গ) ধারার আওতায় যেসব মামলা থানায় বা ট্রাইবুনালে চালু হয়ে গেছে, সেগুলো আগের নিয়মেই ট্রাইবুনালে নিষ্পত্তি হবে। সেগুলো আর নতুন করে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বদলি করা যাবে না। সংশোধিত আইনের ধারা ৩৫-এ এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সংশোধিত আইনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে থানায় অভিযোগ গ্রহণ সংক্রান্ত দায়িত্বে। পূর্বের আইনে পুলিশের অফিসার ইনচার্জের (ওসি) ভূমিকাটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল না। তবে সংশোধিত আইনের ২৫(ক) ধারায় বলা হয়েছে, "যদি কোনো অভিযোগকারী প্রাথমিক সাক্ষ্যপ্রমাণসহ থানায় হাজির হন, তবে অফিসার ইনচার্জ তাৎক্ষণিকভাবে অভিযোগটি জিডিভুক্ত করবেন এবং ভিকটিমের চিকিৎসা ও নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।"
এখানেই শেষ নয়, সংশোধনীতে আরও বলা হয়েছে—“অভিযোগকারীকে শুধুমাত্র এই যুক্তিতে ফিরিয়ে দেয়া যাবে না যে ঘটনাটি অন্য থানার ইখতিয়ারভুক্ত। যে থানাতেই অভিযোগ দেয়া হোক না কেন, অফিসার ইনচার্জ বাধ্য থাকবেন অভিযোগকারীর বক্তব্য লিপিবদ্ধ করতে এবং প্রয়োজনে মেডিকেল পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে। এরপর অনতিবিলম্বে কেস ডায়েরি সহ অভিযোগটি উপযুক্ত থানায় পাঠাতে হবে।”
আইনের সংশোধিত ধারা ৩২-এ নির্যাতনের শিকার নারী বা শিশু যদি নিজে বা পুলিশের মাধ্যমে সরকারি হাসপাতালে উপস্থিত হয়, তাহলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাধ্য থাকবে বিনামূল্যে মেডিকেল পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করতে। এ পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মেডিকেল সনদের একটি কপি ভিকটিমকে এবং আরেকটি কপি সংশ্লিষ্ট থানায় সরবরাহ করতে হবে।
এছাড়াও, ধর্ষণের মামলায় ডিএনএ পরীক্ষার বিষয়ে সংশোধিত ৩২(ক) ধারায় বলা হয়েছে—“ডিএনএ ল্যাবগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রিপোর্ট প্রস্তুতের বাধ্যবাধকতা পালন করতে হবে।”
সংশোধিত এই আইনি কাঠামো শুধুমাত্র বিচারপ্রক্রিয়াকে দ্রুততর করাই নয়, অভিযোগ গ্রহণ এবং চিকিৎসা প্রক্রিয়াকে আরও মানবিক ও নির্ভরযোগ্য করতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সূত্র:https://tinyurl.com/mt3y22zv
আফরোজা