
ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ।
কক্সবাজারে চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদন হয়েছে ২২ লাখ ৫১ হাজার ৬৫১ মেট্রিক টন। যা ৬৪ বছরের মধ্যে ২য় সর্বোচ্চ রেকর্ড পরিমাণ লবণ উৎপাদন হয়েছে। এর আগে ২০২৩-২৪ মৌসুমে মোট লবণ উৎপাদন হয় ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন।
বৈরী আবহাওয়া ও বৃষ্টিপাতের কারণে চলতি মৌসুমে বন্ধ হয়ে গেছে লবণ উৎপাদন। ফলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের আগেই শেষ হয়ে গেল লবণ উৎপাদন কার্যক্রম। বিসিক বলছে, চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদনের কার্যক্রম শেষ হয়েছে ১৭ মে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কক্সবাজারের তথ্য মতে, কক্সবাজার সদর, টেকনাফ, রামু, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, ঈদগাঁও এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ৬৯ হাজার ১৯৮ একর জমিতে লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছিল গত বছরের ৪ নভেম্বর থেকে। এসব জমিতে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। আর ১৭ মে পর্যন্ত মৌসুমের ৬ মাসে লবণ উৎপাদিত হয়েছে ২২ লাখ ৫১ হাজার ৬৫১ মেট্রিক টন। ১৮ মে থেকে লবণ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
বিসিকের দেওয়া তথ্য মতে, বর্তমানে উপকূলে চাষিদের কাছে মজুত আছে এ মৌসুমে উৎপাদিত ১৪ লাখ মেট্রিক টনের বেশি লবণ। প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকায়। এ ক্ষেত্রে প্রতি কেজির দাম পড়ে সাড়ে ৬ থেকে ৭ টাকা। যদিও বাজারে প্যাকেটজাত লবণের খুচরা মূল্য ৪০-৪৫ টাকা। প্রতিমণ লবণ উৎপাদনের বিপরীতে চাষিদের খরচ পড়ে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকার মতো। জেলায় প্রায় ৪১ হাজার ৩৫৫ জন প্রান্তিক চাষি, ১ লাখ শ্রমিকসহ অন্তত কয়েক লাখ মানুষ লবণ উৎপাদন, পরিবহণ ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
বিসিক কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল বলেন, চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদন হয়েছে ২২ লাখ ৫১ হাজার ৬৫১ মেট্রিক টন। আর ঘাটতি রয়েছে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৩৪৯ মেট্রিক টন। কিন্তু ঘাটতি লবণ আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই। যেহেতু মাঠ পর্যায়ে চাষিদের হাতে ১৪ লাখ মেট্রিক টন লবণ অবিক্রীত অবস্থায় রয়েছে। যা দিয়ে আগামী ৭ থেকে ৮ মাস দেশের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। তারপর নভেম্বর কিংবা ডিসেম্বর থেকে ফের লবণ উৎপাদন শুরু হবে। তবে আশা করি, চলতি মৌসুমে লবণের দাম নিয়ে চাষিরা অনেক হতাশ ছিল। এখন বর্ষা মৌসুমে লবণের দাম আরও বাড়তে পারে।
কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল উপকূলে গিয়ে দেখা গেছে, বৃষ্টির পানিতে সয়লাব লবণের মাঠ। আগেই চাষিরা মাঠে বিছানো পলিথিন তুলে নিয়েছেন। আর গর্তে মজুদ করা লবণ কোন ধরনের পানি ঢুকেছে কিনা তা দেখছেন চাষিরা।
স্থানীয় চাষি আবদুল হামিদ বলেন, ‘একবার বৃষ্টি হলে টানা সাত থেকে নয় দিন লবণ উৎপাদন বন্ধ থাকে। এবার এপ্রিল মাসের শেষের দিকে এবং মে মাসে মাঝে মাঝে বৃষ্টিপাতের কারণে লবণ উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হয়েছে। যদি বৃষ্টিপাত না হতো আরও আনুমানিক ২০ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন করতে পারতাম। কিন্তু এবছর লবণের দাম নিয়ে খুবই হতাশ।’
বিসিক লবণশিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের মাঠ পরিদর্শক মো. ইদ্রিস আলী বলেন, ‘চলতি মৌসুমে ১৭ মে শেষ হয়েছে লবণ উৎপাদন। এপ্রিল মাসে ভালো আবহাওয়া পাওয়া গেলেও খরতা কারণে কিছুটা লবণ উৎপাদন কম হয়েছে। এরপর কয়েক দফায় বৃষ্টিপাতও হয়েছে। যার কারণে লবণ উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। চাষের জমি এবং চাষি বাড়ার পরও কাঙ্ক্ষিত লবণ উৎপাদন হয়নি কারণ লবণের দাম ছিল নিম্নমুখী। তাই অনেক চাষি মাঠে নামতে দেরি করেছে। আবার অনেকে দ্রুত মাঠ থেকে উঠে গেছে।’
মো. ইদ্রিস আলী আরও বলেন, ‘চলতি মৌসুমে লবণের দাম নিম্নমুখী হওয়ায় চাষিরা লবণ গর্তে মজুদ করে রেখেছে। এখন পর্যন্ত ১৪ লাখ মেট্রিক লবণ মাঠে চাষিরা মজুদ করে রেখেছে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে।’
মিরাজ খান