
জমি কিনেছেন, রেজিস্ট্রি করিয়েছেন, সব কাগজপত্র আপনার হাতে এরপরও যদি একদিন জানতে পারেন আপনার সেই জমি আরও দু’জনের কাছে বিক্রি হয়েছে, তাহলে কেমন লাগবে?
সাভারে ঘটে যাওয়া এমনই এক ঘটনায় জমি কিনে বিদেশ থেকে ফিরে আসা এক ব্যক্তি যখন ঘর তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখনই সেখানে হাজির হন আরও দুই ‘মালিক’। হাতে তাদেরও রয়েছে রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত দলিল! ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই আলোড়ন পড়ে স্থানীয় এলাকায়। তদন্তে উঠে আসে ভয়াবহ প্রতারণার চিত্র একই জমি তিনবার বিক্রি করেছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র।
এই ঘটনার মতো দেশের বিভিন্ন এলাকায় এমন প্রতারণা এখন বাস্তবতা। জমি কিনে নিশ্চিন্ত হওয়ার সুযোগ কমে যাচ্ছে দিনে দিনে। কারণ দলিল, খতিয়ান, নামজারি সব ঠিকঠাক থাকলেও সেটিই যে ভুয়া নয়, তা নিশ্চিত না হলে আপনার স্বপ্নের জমিই হয়ে যেতে পারে দুঃস্বপ্ন।
এই চক্রগুলো পুরনো বা পরিত্যক্ত জমি বেছে নেয়। তৈরি করে জাল দলিল, জাল খতিয়ান, এমনকি সাজানো সাক্ষ্য। কখনও কখনও রেজিস্ট্রার অফিসের অসাধু কর্মচারীদের সহায়তায় পুরো প্রক্রিয়াকে ‘বৈধরূপে’ উপস্থাপন করে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, একবার এই ফাঁদে পা দিলে বের হতে বছর চলে যায়, টাকা যায় লাখ লাখ, মানসিক যন্ত্রণা তো আছেই। সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো, আইনের চোখে যার দখলে জমি, তাকেই মালিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফলে আপনার কাছে দলিল থাকলেও, সেই জমি শেষমেশ হয়তো আপনার নয়।
সরকারের পক্ষ থেকে চালু হয়েছে ই-নামজারি, অনলাইন খতিয়ান যাচাইয়ের মতো উদ্যোগ। কিন্তু সিস্টেম যদি দুর্বল থাকে, আর চক্র যদি শক্তিশালী হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ থাকে সামান্যই।
এ কারণে শুধু দলিল নয়, জমি কেনার আগে যাচাই-বাছাই, রেকর্ড ঘেঁটে দেখা, সাব-রেজিস্ট্রার অফিস থেকে সত্যতা নিশ্চিত করা এবং একজন দক্ষ আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়াই হতে পারে নিরাপদ পথ।
কারণ জমি শুধু মাটি নয়, এ এক জীবনের সঞ্চয়। আর সেই সঞ্চয় যদি কারও প্রতারণায় হারিয়ে যায়, তার চেয়ে নির্মম কিছু আর হয় না।
সূত্র:https://tinyurl.com/237e3c6y
আফরোজা