ছবি :সংগৃহীত
তামিল ও মালায়ালম চলচ্চিত্র ও টিভি ধারাবাহিকে প্রধান ও পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের জন্য খ্যাত প্রবীণ অভিনেতা ও ব্যবসায়ী রাজেশ উইলিয়ামস আর নেই। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সকালে তিনি চেন্নাইয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সকালে হঠাৎ রক্তচাপ কমে যাওয়ায় তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল। পথেই তাঁর মৃত্যু ঘটে। তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন ভাতিজা। তিনি রেখে গেলেন মেয়ে দিব্যা ও ছেলে দীপককে। দীপক ২০১৪ সালে অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ করেন। রাজেশের স্ত্রী জোয়ান সিলভিয়া ভানাথিরায়ার ২০১২ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
রাজেশের মৃত্যুর পর শোক প্রকাশ করেছেন অভিনেত্রী রাধিকা সারথকুমার। টুইটারে তিনি লেখেন, “রাজেশ স্যারের আকস্মিক মৃত্যুতে হতবাক। একসঙ্গে অনেক সিনেমায় কাজ করেছি। সিনেমা ও জীবনের নানা বিষয়ে তাঁর গভীর জ্ঞানের প্রতি শ্রদ্ধা ছিল সবসময়। চলচ্চিত্র জগৎ এক অসাধারণ ব্যক্তিত্বকে হারাল।”
ভারতীয় বিনোদন সংবাদমাধ্যম ‘ফিল্মিবিট’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকালে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে রাজেশকে তড়িঘড়ি করে রামচন্দ্র হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল। সেখানেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
১৯৪৯ সালের ২০ ডিসেম্বর তামিলনাড়ুর মান্নারগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন রাজেশ উইলিয়ামস। ১৯৭৪ সালে কিংবদন্তি পরিচালক কে. বালাচান্দারের ‘আভাল ওরু থোডারকথাই’ সিনেমার একটি ছোট চরিত্রের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় তাঁর। ১৯৭৯ সালে ‘কন্নি পারুভাথিল’ সিনেমায় তিনি প্রথমবার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন।
এরপর দীর্ঘ কয়েক দশকের ক্যারিয়ারে তিনি অসংখ্য দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে—‘আন্ধা ৭ নাট্কাল’, ‘সাথিয়া’, ‘মহানদী’, ‘ভিরুমান্ডি’ প্রভৃতি। কমল হাসান ও বিজয়ের মতো তারকাদের সঙ্গে একাধিকবার স্ক্রিন শেয়ার করেছেন তিনি। চরিত্রাভিনেতা, বাবা বা অভিভাবকের ভূমিকায় তাঁর অভিনয় দর্শকদের হৃদয়ে ছাপ ফেলেছে।
অভিনয়ের পাশাপাশি রাজেশ ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী। তিনি রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একটি ইউটিউব চ্যানেলও পরিচালনা করতেন। পরবর্তী জীবনে জ্যোতিষবিদ্যার প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ জন্মে। তিনি এ বিষয়ে একাধিক বইও রচনা করেন এবং তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে নিয়মিত আলোচনা করতেন।
রাজেশের মৃত্যুতে তামিল চলচ্চিত্র জগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি কাজ করেছেন ‘নরুক্কু নর’, ‘দিনা’, ‘সিটিজেন’, ‘রামানা’, ‘রেড’, ‘সামি’, ‘অঞ্জনেয়া’, ‘কোভিল’, ‘অটোগ্রাফ’, ‘জী’, ‘সিবাকাশি’, ‘তিরুপ্পাথি’, ‘মাস্টার’ ও ‘ইয়াথুম উরে ইয়াভারুম কেলির’ মতো বহু আলোচিত সিনেমায়।
তাঁর মৃত্যুতে দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্র অঙ্গন হারাল এক বহুমুখী প্রতিভাকে, যিনি শুধু অভিনয়েই নন, জীবন ও দর্শনে তাঁর বিশ্লেষণধর্মী দৃষ্টিভঙ্গির জন্যও স্মরণীয় থাকবেন।
সানজানা
