ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

হ্যারি পটার -পরশপাথরের পঁচিশ বছর

প্রকাশিত: ২০:৫৯, ১৭ মে ২০২৪

হ্যারি পটার -পরশপাথরের পঁচিশ বছর

.

আশ্চর্য এক মায়াজাল বিস্তার করেছিল হ্যারি পটার। তার অমোঘ আকর্ষণ উপেক্ষা করতে পারেনি -এর দশকের কিশোর-কিশোরীরা। দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেল পঁচিশ বছর। আজও কাহিনীগুলো বিশ্বের অসংখ্য মানুষের হাতে-হাতে মুখে-মুখে ফেরে।

লিখেছেন সৌভিক চক্রবর্তী

গভীর রাত। গ্রিফিন্ডর হাউসে সবাই ঘুমোচ্ছে, কেয়ারটেকার আর্গাস ফিলচ আর তার পোষা বিড়াল মিসেস নরিস ছাড়া গোটা স্কুলচত্বরে কেউ জেগে কি-না সন্দেহ। তবু সাবধানের মার নেই, তাই সদ্য উপহার পাওয়াইনভিজিবিলিটি ক্লোকগায়ে জড়িয়ে নেয় ১১ বছর বয়সী ছেলেটা। বন্ধু রনকে ডাকে না ইচ্ছে করেই, পায়ে পায়ে পৌঁছে যায় কয়েক রাত আগে খুঁজে পাওয়া আয়নাটার কাছে। অদ্ভুত সেই আয়না, কিন্তু ওর তাতে ভ্রক্ষেপ নেই। আয়নার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে একটাই উদ্দেশ্যে মৃত বাবা-মাকে দুই চোখ ভরে দেখবে বলে। যাদের শৈশবেই হারিয়েছে , যাদের মুখগুলো পর্যন্ত মনে করতে পারে না ঠিকমতো, সেই জেমস আর লিলি পটার-কে আয়নায় নিজের দুইপাশে দেখতে পায় ছেলেটা। এই দৃশ্য ওর কাছে নেশার মতো, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সুখের চেয়ে কিছুমাত্র কম নয়।

সম্পূর্ণ অলিক, অথচ প্রচন্ডভাবে কাক্সিক্ষত সেই প্রতিবিম্বের মায়ায় ক্রমশ জড়িয়ে যাচ্ছে ছেলেটা, এমন সময় পেছন থেকে কারওর গলা শোনে ও। ফিরে দেখে, স্কুলের হেডমাস্টার অ্যালবাস ডাম্বলডোর এসে উপস্থিত হয়েছেন সেখানে। অত রাতে হ্যারিকে (Harry Potter) বাইরে দেখেও উত্তেজিত হন না তিনি, বরং শান্তভাবে উচ্চারণ করেন সাবধানবাণী। যে জাদু আয়নার আহ্বানে ধরা দিয়েছে ছেলেটা তার নামমিরর অফ এরিসেদ’; যে এর সামনে দাঁড়ায় তার হৃদয়ের তীব্রতম চাহিদা, গভীরতম ইচ্ছেকে প্রতিবিম্ব আকারে ফুটিয়ে তোলাটাই এর ধর্ম। আর সে কারণেই এই আয়না অতি বিপজ্জনক। সে যা দেখছে তা আদতেই মরীচিকা- এই বোধ একসময় হারিয়ে ফেলে দর্শক, যুক্তি-বুদ্ধি খুইয়ে উন্মাদ হয়ে পড়ে অচিরেই। অসম্ভবকে পেতে বদ্ধপরিকর কত মানুষের জীবন যে এরিসেদ-এর আয়নার জন্য নষ্ট হয়েছে, তার খতিয়ান দিতে দিতে বিষণ্ণ হয়ে আসে ডাম্বলডোর-এর গলা।

সেই মুহূর্তে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যায় ছেলেটার কাছে। বোঝে, এরিসেদ-এর আয়না এক মোহফাঁদ। নিশ্চিন্ত হই আমরাও; এই নিশিডাক অবশ্যই জয় করবে ছেলেটা, নায়কোচিতভাবে বেরিয়ে আসবে এরিসেদ-এর অজগরী মায়া কাটিয়ে। যে সাধারণ কেউ নয়, হ্যারি পটারদ্য বয় হু লিভড’ (Harry Potter)

১৯৯৭ সালের ২৬ জুন, এক অনামা ব্রিটিশ মহিলা জোয়ান রোওলিংয়ের ছোটদের ফ্যান্টাসি উপন্যাসহ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ফিলোজফারস স্টোনপ্রকাশিত হল ইংল্যান্ডের ছোটমাপের প্রকাশনা সংস্থাব্লুমসবেরিথেকে। তারপর যা ঘটল, তাকে ম্যাজিক ছাড়া আর কীই বা বলা যায়? ‘বয় উইজার্ডহ্যারি- কাহিনী দারুণভাবে দাগ কাটল শিশু-কিশোরদের মনে, অল্প সময়েই রোওলিংয়ের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল ব্রিটেনজুড়ে।

প্রশংসার ঝড় উঠল বড় সংবাদপত্রের রিভিউ কলামগুলোতে, সমালোচকরা একবাক্যে স্বীকার করলেন সিএস লিইউস-এরক্রনিকলস অফ নার্নিয়া: দ্য লায়ন, দ্য উইচ অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ড্রোব’-এর পর ছোটদের জন্য এত ভালো ফ্যান্টাসি ইংরেজি ভাষায় আসেনি।নেস্টলে স্মার্টিজ বুক প্রাইজপুরস্কারে ভূষিত হলেন রোওলিং। যেব্লুমসবেরি’ ‘ফিলোজফারস স্টোন’-এর জন্য মাত্র ২৫০০ পাউন্ড অগ্রিম দিয়েছিল লেখিকাকে, তারাই সিরিজের পরবর্তী বইয়ের বরাত পেতে বিশাল অঙ্কের সম্মান-দক্ষিণার বিনিময়ে চুক্তি সই করল তাঁর সঙ্গে। এগিয়ে এল আমেরিকান পাবলিশিং প্রতিষ্ঠানস্কলাস্টিক’, এক লাখ ডলার দিয়ে কিনে নিল বইটার বিদেশ স্বত্ব। পেছনে ফিরে তাকানো কাকে বলে, ভুলে গেলেন রোওলিং।

×