ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান 

প্রকাশিত: ২৩:৩৬, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

ঢাবির চারুকলায় এখনও বর্ষবরণ উৎসবের রং

গত কয়েকটা দিন ভীষণ আনন্দেই কাটল। ঈদ তো ছিলই, সেই সঙ্গে ছিল পহেলা বৈশাখের আনুষ্ঠানিকতা। বড় দুই উপলক্ষ ঘিরে দারুণ মেতে ছিল রাজধানীবাসী! এবারও ঈদে বহু মানুষ ঢাকা ছেড়ে গিয়েছিল। মোটামুটি ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল রাস্তাঘাট। এ অবস্থায় বর্ষবরণের কী হবে, কতটা হবে তা নিয়ে সংশয় সন্দেহ দেখা দিয়েছিল কারও কারও মনে। এমনকি মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজকরা খুব বড় আকারে কিছু না করার চিন্তা করেছিলেন।

চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেনের সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই দেখা ও কথা হয়েছে আমার। তিনি ঈদের ছুটির কথা বারবারই মনে করিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, তার অধিকাংশ শিক্ষার্থী গ্রামের বাড়ি চলে যাবে। পহেলা বৈশাখের আগে তারা না আসলে বড় কিছু করা মুশকিল হয়ে যাবে। তবে শেষতক উৎসবপ্রিয় বাঙালিরই জয় হয়েছে। এবারও সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক  উৎসবে যোগ দিয়েছিল বিপুল সংখ্যক মানুষ। সূর্যের আলো ফোটার আগেই রমনা বটমূলে সমবেত হয়েছিলেন সব বয়সীর মানুষ।

ছায়ানটের সঙ্গে বছর শুরু করতে পারার আনন্দ দেখেছি তাদের চোখেমুখে। প্রভাতী এই অনুষ্ঠান বাঙালিত্বের বোধকে, দেশপ্রেমকে, সেই সঙ্গে ভেতরের প্রতিবাদী সত্তাকে নতুন করে জাগিয়ে দিয়ে গেছে। আর মঙ্গল শোভাযাত্রার কথা তো বলাই বাহুল্য। সবচেয়ে বড় স্রোতটি নেমেছিল সেখানে। সকাল ৯টা ১৮ মিনিটে পাঁচটি শিল্প কাঠামো নিয়ে চারুকলা অনুষদ থেকে আকর্ষণীয় শোভাযাত্রাটি বের করা হয়। হাজার হাজার মানুষ এতে যোগ দেয়। নারী-পুরুষ-শিশু কেউ বাদ যাননি।

ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ সকলে একত্রিত করেছিল মঙ্গল শোভাযাত্রায়। আয়োজনটি থেকে হাসি আনন্দের পাশাপাশি দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য মঙ্গল কামনা করা হয়। বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন কেমন হয় তা দেখতে উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন বিদেশীরাও। সব জায়গাতেই তাদের উপস্থিতি চোখে পড়েছে। মূল আয়োজনগুলোর পাশাপাশি রাজধানীজুড়েই ছিল বিচিত্র উৎসব অনুষ্ঠান। সব ক’টি মঞ্চ থেকে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে বাঁচিয়ে রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ধর্মীয় উগ্রবাদী মৌলবাদী গোষ্ঠীও কম ঘেউ ঘেউ করেনি। বাঙালির ঐতিহ্য সংস্কৃতির বিরুদ্ধে অপতথ্য ছড়িয়েছে ফেসবুকে ইউটিউবে। উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এমন অপতৎপরতা তো নতুন নয়। ফলে তেমন পাত্তা পায়নি। ঐক্যবদ্ধভাবে অপপ্রচারের জবাব দিয়েছে বাঙালি। এর বাইরে অভিযোগ উঠেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে। সরকারের বিভিন্ন বাহিনী নিরাপত্তার নামে জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছিল।

তাদের বাধার কারণে বহু দূরের পথ হেঁটে উৎসবে যোগ দিতে হয়েছে মানুষকে। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করার সরকারি ঘোষণাও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে এবার। সাংস্কৃতিক জোট উদীচীসহ অনেক সংগঠন রাত ৯টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান চালিয়ে গেছে। সংস্কৃতিকর্মীরা বলছেন, নিরাপত্তার নামে প্রতি বছরই বাড়াবাড়ি করা হচ্ছে। সময় সঙ্কোচনের কথা বলে ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এই করে করে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। আর হতে দেওয়া হবে না। কিন্তু পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি সংস্কৃতিকর্মীদের এই মনোবেদনা বুঝতে সক্ষম? উত্তরটি জানার অপেক্ষায় থাকব আমরাও।   
গরমে চরম অস্বস্তি ॥ ঢাকায় এমনিতেই গরম বেশি। তার ওপর এখন শুরু হয়েছে তাপপ্রবাহ। অসহনীয় গরমে গা ঘামছে তো ঘামছেই। বাসা-অফিস, রাস্তাঘাটÑ স্বস্তি মিলছে না কোথাও। আবহাওয়া অফিস বলছে, দেশের কিছু জায়গায় ইতোমধ্যে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। মৃদু তাপপ্রবাহে তাপমাত্রা থাকে ৩৬ ডিগ্রি থেকে ৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাঝারি তাপপ্রবাহে তাপমাত্রা থাকে ৩৮ ডিগ্রি থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তবে ঢাকায় দেখা যাচ্ছে তাপমাত্রা যা তার চেয়ে অনেক বেশি অনুভূত হচ্ছে। এ কারণে জনজীবন থেকে স্বস্তি উবে গেছে। আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জানিয়েছেন, আগামীকাল শনিবারের পরে গরমের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পাবে। কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি হয়ে যেতে পারে। গরম কমার জন্য যত বৃষ্টি প্রয়োজন ততটার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ফলে সামনের দিনগুলো আরও কষ্টে কাটতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় আরও সতর্ক হতে হবে। সতর্ক না হলে নিশ্চিত বিপদ!

×