ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কাঁকড়ার জন্য বিখ্যাত ক্রিসমাস দ্বীপ

সোহেল রানা

প্রকাশিত: ১৫:১০, ৩ জুন ২০২৩; আপডেট: ২০:০৯, ৩ জুন ২০২৩

কাঁকড়ার জন্য বিখ্যাত ক্রিসমাস দ্বীপ

দল বেঁধে সমুদ্র তটে যাচ্ছে লাল কাঁকড়া

লাল কাঁকড়া জন্য বিখ্যাত ক্রিসমাস দ্বীপ। প্রতি বছর ডিম পাড়ার মৌসুমে সমুদ্র থেকে উঠে আসে হাজার হাজার লাল কাকড়া। এ সময় দ্বীপটি কাকড়াদের দখলে থাকে। দ্বীপটি ভারত মহাসাগরে অবস্থিত। দ্বীপটির উপকূলের দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৩ কিলোমিটার। 

জাভা ও সুমাত্রা থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে ক্রিসমাস আইল্যান্ড। দ্বীপটি অস্ট্রেলিয়ার অধীনে। দেশটির পারথ থেকে ১৬৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ১৩৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দ্বীপটিতে বাস করেন প্রায় দু’হাজার অধিবাসী।

ক্রিসমাস আইল্যান্ডে ঝাঁকে ঝাঁকে লাল কাঁকড়াক্রিসমাস দ্বীপটির অনাবিল সৌন্দর্যের আকর্ষণে ছুটে আসেন দেশ বিদেশের পর্যটকেরা। সমুদ্রের কিনারে প্রবাল প্রাচীর ও সামুদ্রিক গুহা। এসবের টানে পর্যটকরা নেমে পড়েন ঘন নীল জলে। দ্বীপের মূল আকর্ষণ হলো- লাল কাঁকড়া। 

ক্রিসমাস আইল্যান্ডের অন্য নাম লাল কাঁকড়ার দ্বীপ। জঙ্গল থেকে সমুদ্র তটের দিকে তাদের বার্ষিক অভিযানের জন্য কাঁকড়ারা বিখ্যাত। এই দ্বীপে বর্ষা আসে অক্টোবর-নভেম্বরে। তখন জঙ্গল ছেড়ে সমুদ্রের দিকে এগিয়ে যায় প্রায় পাঁচ কোটি লাল কাঁকড়া।

জঙ্গল থেকে বেরিয়ে কাঁকড়াগুলি প্রতিবছরই নির্দিষ্ট কিছু পথ দিয়ে সমুদ্রে যাওয়া আসা করে। তাই কাঁকড়াদের সাগর অভিযানকালে, ওই পথগুলিতে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। কোনো কোনো জায়গায় বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়। কাঁকড়াদের চলাচলে সুবিধার জন্য কৃত্রিম সেতু বানিয়ে দেওয়া হয়।

কাঁকড়ার ছবি উঠাচ্ছেন এক ফটোগ্রাফারপুরুষ কাঁকড়ারা সবার আগে জঙ্গল থেকে সমুদ্র সৈকতে পৌঁছে যায়। সমুদ্রতটের বালি খুঁড়ে অস্থায়ী বাসা বানায়। বাসা বানানো হয়ে গেলে, দল বেঁধে সমুদ্র সৈকতে আসে নারী কাঁকড়ারা। গোটা সমুদ্র তটের রঙ হয়ে যায় লাল। এরপর কয়েক সপ্তাহ ধরে চলে পাঁচ কোটি কাঁকড়ার প্রজনন পর্ব। 

প্রজনন পর্ব শেষ হওয়ার পর, পুরুষ কাঁকড়ারা আবার দলবেঁধে জঙ্গলে, নিজেদের বাসায় ফিরে যায়। স্ত্রী কাঁকড়ারা সমুদ্র সৈকতের অস্থায়ী বাসায় অপেক্ষা করে শুভমুহুর্তের জন্য। প্রায় দুই সপ্তাহ পর স্ত্রী কাঁকড়ারা সাগরের অগভীর জলে ডিম পেড়ে ফিরে যেতে শুরু করে জঙ্গলে।

ডিম ফুটে জন্ম নেয় কোটি কোটি শিশু কাঁকড়া। পরিণত হওয়ার জন্যশিশু কাঁকড়াগুলি কিছুদিন থেকে যায় সমুদ্র সৈকতে। জল থেকে খুঁজে নেয় খাবার। এই সময় প্রচুর শিশু কাঁকড়া পাখিদের খাদ্যে পরিণত হয়। তিন চার সপ্তাহ পরে নবীন কাঁকড়ারা দল বেঁধে ফিরে যেতে শুরু করে জঙ্গলে। যেখানে আছে ওদের বাবা-মায়েরা। 

সমুদ্র তীরে যাচ্ছে কাঁকড়ার দলজঙ্গলে প্রবেশ করে নিজেরাই গর্ত খুঁড়ে বানিয়ে নেয় নিজেদের বাসা। তিন বছর জঙ্গলে থাকবে তারা। পরিণত হয়ে, তিনবছর পর তারাও যোগ দেবে বার্ষিক সাগর অভিযানে। অংশ নেবে সৃষ্টির মহাযজ্ঞে।  

দ্বীপটির বেশিরভাগ বাসিন্দা এশিয়ার মানুষ। কয়েক পুরুষ আগে চীন, ভারত ও মালয়েশিয়া থেকে, ভাগ্যান্বেষণে এসেছিলেন এই দ্বীপে। তারা আর ফিরে যাননি নিজেদের দেশে। দ্বীপের অধিবাসীদের বেশিরভাগই বাস করেন দ্বীপের উত্তরদিকে। সেখানে আছে দ্বীপের রাজধানী ফ্লাইং ফিশ কোভ।

তথ্য সূত্র: ফেসবুক, গুগল ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।

×