ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লিটনের বনায়নে সবুজ রাজশাহী

ছাতার মতো ছায়া দিচ্ছে ছাতিম

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী

প্রকাশিত: ২১:১২, ২ জুন ২০২৩

ছাতার মতো ছায়া দিচ্ছে ছাতিম

.

রাজশাহী নগরীতে গত পাঁচ বছরে সবুজের মাত্রা বেড়েছে। হয়েছে বায়ু দূষণমুক্ত শহর। এই শহরে এক সময় প্রাচীন আমলের বড় বড় গাছ ছিল। উন্নয়ন নগরায়নের কারণে সে সব গাছ বিলীন হয়েছে অনেক আগেই। তাই বলে থেমে নেই অগ্রযাত্রা।

২০০৮ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এরপরই তিনি পরিবেশের উন্নয়নে সবুজ নগরী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। বহুমুখী উন্নয়ন কর্মকান্ডে মধ্যে নগরীকে সবুজ বেষ্টনী হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। সে যাত্রায় কিছু গাছ লাগানো হয়েছিল। এরপর বছর সিটির দায়িত্বের বাইরে ছিলেন লিটন। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৮ সালে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর নগর বদলে দেওয়ার কাজে সর্বাত্মক মনোনিবেশ করেন তিনি। তারপর থেকে গত বছরে নগরজুড়ে বহুমুখী উন্নয়নের পাশাপাশি সবুজ নগরী হয়ে ওঠে রাজশাহী। জন্য স্বীকৃতিও মিলেছে। এবারও পরিবেশ উন্নয়নে পদক পাচ্ছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) 

রাজশাহী নগরে প্রবেশ করলে এখন যে কারও চোখে পড়বে সারি সারি ছাতিম গাছ। অনেক উপকারী ছায়াদানকারী গাছের নাম ছাতিম। সড়কের দুই পাশে ১০/১৫ হাত দূরে দূরে এসব ছাতিম গাছ বেড়ে উঠেছে গত বছরে মেয়র লিটনের যতেœ পরিবেশবান্ধব মেয়র হিসেবে তাই খ্যাতি পেয়েছেন লিটন। শুধু ছাতিম গাছ নয়, রাজশাহী নগরীর আইল্যান্ড থেকে শুরু করে সবখানে গাছে গাছে ভরেছেন তিনি। বছরের সব মৌসুমেই রাজশাহী নগরীতে ফুল ফুটিয়েছেন লিটন। অবশ্য এর স্বীকৃতি পেয়েছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। টানা তিন দফা পরিবেশ উন্নয়নে জাতীয় পদকও ছুঁয়েছেন লিটন। আগামী জুন পরিবেশ দিবসেও আরেকটি জাতীয় পদক গ্রহণ করবে রাজশাহী সিটি করপোরেশন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ছেলে মেয়েদের নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই শহরে এসেছেন লাখো মানুষ। গত ২৯ মে থেকে শুরু হয়ে মে পর্যন্ত চলে ভর্তি পরীক্ষা। সেই সুবাদে সারাদেশের মানুষের বিচরণ ছিল রাজশাহীতে।

সন্তানদের পরীক্ষা হলে পাঠিয়ে খাঁ খাঁ রোদে না দাঁড়িয়ে একদল অভিভাবককে দেখা গেল নগরীর সারি সারি ছাতিম গাছের সঙ্গে সেলফিতে নিজেদের ধরে রাখছেন মোবাইল ক্যামেরায়। তাদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা জানান, কেউ পটুয়াখালী, কেউ ঢাকা দিনাজপুর থেকে এসেছেন। ইসমত আরা এসেছেন ঢাকা থেকে। তিনি বলেন, রাজশাহী শহরের রূপ দেখে তিনি মুগ্ধ। চারিদিকে সবুজ আর সবুজ। সবুজের ভেতরে ফুটে রয়েছে হরেক রকম ফুল। তার মতে, পরিচ্ছন্নতা সবুজে সত্যি অপরূপা রাজশাহী। রাতের রাজশাহী তাদের আরও ভালো লেগেছে। অনেক ছবিও তুলেছেন। ফোনে ধরে রাখা ছবি দেখিয়ে তিনি বলেন, রাজশাহী অনেক স্মৃতি হয়ে রইল। তার মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেলে প্রায় এই শহরে আসতে হবে। তিনি বলেন, এই ছাতিম গাছগুলো একেবারে ছাতার মতো। প্রতিটি ছাতিম গাছের নিচে শীতল পরিবেশ। এই গরমে অনেক স্বস্তি দিচ্ছে। 

১৫ থেকে ২০ মিটার উঁচু, চিরসবুজ এসব ছাতিম গাছ দেশের অন্য কোথাও সচরাচর দেখা না গেলেও রাজশাহীর মানুষকে ছাতার মতো ছায়া দিচ্ছে এসব সারি সারি ছাতিম গাছ। ক্লান্ত পথচারীরা একটু স্বস্তি পেতে কিছুক্ষণের জন্য হলেও ছাতিমের ছায়াতলে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে স্বস্তির শ্বাস নেন।

রাসিক সূত্র জানায়, মহানগরীর প্রতিটি সড়ক চার লেনের। প্রতিটি সড়কের ডিভাইডারে ফুলের বাগান। একেক সড়কে একেক ফুল। চারদিকে সবুজ গাছগাছালি। প্রতিটি সড়কের ধারে দশ পনেরো মিটার পর ছাতিম তরু এমনভাবে রোপিত হয়েছে যে মনে হবে প্রকৃতির ছাতা। গরমে ছাতিম তরুতলে সাধারণ মানুষ ক্ষণিক আশ্রয়ে স্বস্তি পায়। হালকা বৃষ্টিতে গা ভিজে না। ঋতু পরিবর্তনের সময় সুগন্ধী ছড়ায়। এসব সড়কে সবুজের প্রচ্ছদ।

খায়রুজ্জামান লিটন এখন রাসিকের মেয়র নেই। চলতি মাসে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের জন্য আওয়ামী মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন। তাই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য বিধি সম্মতভাবে পদত্যাগ করেছেন। এখন তিনি সাবেক মেয়র। তবে নগরবাসী তাকে সাবেক ভাবেন না। তারা বলছেন, মেয়র লিটন অনেক পরিশ্রম পরিকল্পনা করে রাজশাহী নগরীকে সবুজের গালিছা বানিয়েছেন। আবারও নির্বাচনে তিনি আসবেন। আবারও নগর পরিচর্যায় মনোনিবেশ করবেন। জন্য পরিক্ষিত নেতাকেই নগরবাসী বেছে নেবেন।

এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান বলেন, আগামীতে নগরী নিয়ে তার অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নগরবাসীর সহযোগিতা দরকার। আগামীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারলে রাজশাহী নগর সৌন্দর্যে, সবুজে আর পরিবেশ উন্নয়নে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ একটি নগরে রূপ দেওয়া হবে। তিনি শুধু আধুনিক নগরী গড়ার চেষ্টা করছেন তা নয়, নগরীকে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে কর্মমুখর করেও গড়ে তুলতে চান।

রাজশাহী মহানগরীর মানুষ আপনাকে পুনরায় নির্বাচিত করলে পরের অধ্যায় কি হবে? এমন প্রশ্নে লিটন বলেন, মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগে রাজশাহীবাসীর ভাবনা এবং উন্নয়নের পরের ভাবনা মিলিয়ে নিলেই উত্তর পাবেন। তবে আগামীতে আরও কি করা যায়, তার রূপরেখা হৃদয়ে লালন করে রেখেছেন। তিনি চান এই নগরী দেশের সেরা নগরীর খাতায় উঠে আসুক। নগরবাসীও তেমনই চান। 

রাজশাহী নগরীর চারদিকে ঘুরে দেখা যায়, শুধু সবুজায়নে নয়, অবকাঠামোগুলো গড়ে উঠেছে আধুনিকতায়। যেখানে প্রজন্মের তরুণ-তরুণী ভিড় করে আগামীর পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন দেখে।

নগরীর শ্রীরামপুর এলাকায় লালনশাহ পার্কে তরুণ-তরুণীদের আড্ডা চলে সব সময়। সেখানে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে। বললেন, রাজশাহী নগর তাদের গর্ব। এখানে বাইরের মানুষ এসে মুক্ত শ্বা নিতে পারেন। লালন শাহ পার্ক, মুক্ত মঞ্চে বসার ট্রেন্ট, টিগ্রোয়েন, আই বাঁধ, পঞ্চবটি বাঁধ, ফুলতলা জাহাজ ঘাট, শ্রীরামপুর এলাকা, রেলগেট থেকে সিঅ্যান্ডবি মোড়, কাশিয়াডাঙ্গা বহরমপুর রেলগেট, ভদ্রা শহীদ কামারুজ্জামান চত্বর, তালাইমারী মোড় থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ, কল্পনা মোড় থেকে কাজলা বিশ্বাবিদ্যালয়সহ আরও অনেক স্থানকে মোহনীয় রূপ দেওয়া হয়েছে। সর্বত্র যেন সুন্দরের বংশীবাদক সুর তুলেছে। আর এই নগরীর উন্নয়নের বংশীবাদকের নাম এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

×