
ভুটানের বিরুদ্ধে গোলের উচ্ছ্বাস বাংলাদেশের তরুণ ফুটবলারদের, রবিবার ভারতের অরুণাচল প্রদেশের গোল্ডেন জুবিলি স্টেডিয়ামে
প্রত্যাশিত জয়ে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশের যুবারা। রবিবার বিকেলে ভারতের অরুণাচল প্রদেশের গোল্ডেন জুবিলি স্টেডিয়ামে আসরের ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে ভুটানকে সহজেই ৩-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
ম্যাচে লাল-সবুজদের হয়ে একটি করে গোল করেন মুর্শেদ আলি, সুমন সরেন ও অধিনায়ক নাজমুল হুদা ফয়সাল। এই জয়ে দুই ম্যাচে একটি করে জয় ও ড্রয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে সেরা চারে খেলা নিশ্চিত হয়েছে বাংলার দামাল ছেলেদের। অন্যদিকে বর্তমানে মালদ্বীপের পয়েন্ট ১। আর ঝুলিতে কোনো পয়েন্ট জমা করতে পারেনি ভুটান।
বাংলাদেশ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ২-২ গোলে মালদ্বীপের সঙ্গে ড্র করে। যে কারণে সেমিফাইনালে উঠতে ভুটানের বিরুদ্ধে জয় প্রয়োজন ছিল। ড্র কিংবা হারলে ভুটান ও মালদ্বীপের মধ্যে মঙ্গলবারের ম্যাচের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হতো। কিন্তু সেই অপেক্ষা করেনি অধিনায়ক ফয়সালের দল। ভুটানিদের ফুটানি দূর করে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে তারা।
এখন মালদ্বীপ ও ভুটানের ম্যাচ ড্র হলে বাংলাদেশ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবে। মালদ্বীপ যদি ভুটানকে হারায় সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের সমান ৪ পয়েন্ট করে হবে। তখন গোল ব্যবধানে গ্রুপসেরা নির্ধারণ হবে। অন্যদিকে ‘বি’ গ্রুপ থেকে নেপাল ও স্বাগতিক ভারতের সেমিফাইনালে খেলা প্রায় নিশ্চিত। যে কারণে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে সেমিতে বাংলাদেশকে ভারত কিংবা নেপালের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।
মালদ্বীপের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচের হতাশা ঝেড়ে ফেলতে ভুটানের বিপক্ষে শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে বাংলাদেশ। ১৩ মিনিটে একক প্রচেষ্টার গোলে দলকে এগিয়ে নেন মুর্শেদ। ডান দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে জায়গা বানিয়ে বাঁ পায়ের বাঁকানো শটে জাল খুঁজে নেন তরুণ ফরোয়ার্ড। গোছালো ফুটবলে ২৭ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে বাংলাদেশ। এই গোলে অবশ্য কিছুটা দায় আছে ভুটানের রক্ষণের।
ডানদিক থেকে মুর্শেদের ক্রস এক ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে চলে যায় অন্য প্রান্তে সুমন সরেনের কাছে। তার শট ঝাঁপিয়েও আটকাতে পারেননি গোলরক্ষক। দুই গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। বিরতির পর আক্রমণের চেয়ে বলের নিয়ন্ত্রণে মনোযোগী ছিল বাংলাদেশ। এই সুযোগে প্রতিপক্ষ একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে। ওই সময় অনেকের মনের কোণে মালদ্বীপের বিরুদ্ধে ম্যাচের স্মৃতি চলে আসে। কেননা ওই ম্যাচে বাংলাদেশ প্রথমার্ধে দুই গোলে এগিয়ে যেয়ে দ্বিতীয়ার্ধে দুই গোল হজম করে। যে কারণে জেতা ম্যাচ ড্রয়ের আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়।
ভুটানের বিরুদ্ধেও প্রথমার্ধে একই ব্যবধানে এগিয়ে থাকে। এরপর কিছুটা রক্ষণাত্মক ফুটবলের কারণে দুশ্চিন্তা ভর করে! তবে ভুটানি ফরোয়ার্ডদের মুন্সিয়ানার অভাবের কারণে এবার আর আক্ষেপে পুড়তে হয়নি বাংলাদেশের। ম্যাচের ৭৩ মিনিটে মুর্শেদের শট এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে কর্নার হয়।
কর্নার ফিস্ট করে ফেরান ভুটান গোলরক্ষক। কিছুক্ষণ পর গোলরক্ষক ইসমাইল হোসেন মাহিনের দৃঢ়তায় গোল হজম থেকে রক্ষা পায় বাংলাদেশ। এ সময় ডি বক্সের ভেতরে ফাঁকায় থাকা টেনডিং টিসেরাংয়ের শট ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ফেরান তিনি।
ম্যাচের শেষদিকে কিছুটা গতি ফেরে বাংলাদেশের খেলায়। ৭৯ মিনিটে সতীর্থের পাসের নাগাল অল্পের জন্য পাননি বক্সে ভালো জায়গায় থাকা নাজমুল হুদা ফয়সাল। ম্যাচের যোগ করা সময়ে সব অনিশ্চয়তার ইতি টেনে দেন ফয়সাল। ৯০+৬ মিনিটে ডানদিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা মুর্শেদের ক্রস থেকে টোকায় ভুটানের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন অধিনায়ক ফয়সাল।
ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেন, দলের প্রতি আস্থা ছিল তার। সেমিতে খেলবে এ বিশ্বাস ছিল। বাফুফের পাঠানো বার্তায় ছোটন বলেন, দুর্দান্ত একটা ম্যাচ খেলার জন্য ছেলেদের অভিনন্দন। এটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ছিল। যেহেতু আমরা মালদ্বীপের বিপক্ষে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ড্র করে এসেছিলাম। ছেলেরা তাদের শতভাগ দিয়ে ৩ পয়েন্ট নিয়ে এসেছে। আমার বিশ্বাস ছিল, ছেলেরা এটা করতে পারবে।
সেরা চারের লড়াইয়ে ভারতকে এড়ানোর উপায় নিজেদের হাতে নেই বাংলাদেশের। মালদ্বীপ-ভুটানের মধ্যকার ম্যাচ ও ‘বি’ গ্রুপের বাকি ম্যাচগুলোর ফলের ওপর নির্ভর করছে বিষয়টা। ছোটন তাই চোখ রাখছেন অন্য গ্রুপের ম্যাচের দিকে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন আমরা ভারত, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের গ্রুপটা দেখব। যারা আমাদের সামনে সেমিফাইনালে আসবে। সে অনুযায়ী আমাদের পরিকল্পনা ঠিক করব।