
বগুড়ায় অনাদরে ফুটেছে নয়নতারা ফুল
এই ফুলে গন্ধ নেই, আছে সৌন্দর্যের উপমা। গুণাগুণও অনেক। গোলাপি রঙের পাঁচটি পাপড়ির এই ফুলের নাম নয়নতারা। একদা ছিল বনফুল। এখন মানুষের চোখে ধরে লোকালয়ের অনেক বাগানে প্রবেশ করেছে। তাকালে মানুষের চোখের মিটিমিটি ভাষা চলে আসে। বৃষ্টির সময় এই ফুল দেখলে মনে হবে রিমঝিম ছন্দে নেচে নেচে কথা কইছে। আশা ভোঁসলের কণ্ঠে একটি গান আছে- ‘ফুলে গন্ধ নেই এ তো ভাবতেই পারি না, সুরে ছন্দ নেই এ তো ভাবতেই পানি না...’। এই গানের মতো করে বলা যায় নয়নতারায় গন্ধ নেই তবে এই ফুল মানব জীবনের ছন্দ এনে দিয়েছে।
নয়নতারা। আরেক অর্থে- চোখের তারকা। ফুলের এমন বাংলা নাম কে দিয়েছে তা জানা যায় না। এই ফুলের ইংরেজি ও বিজ্ঞান নাম আছে অনেক। কোনো বাঙালি এতগুলো নাম পড়ে কোনো কিনারা করতে না পেরে ফুলের দিকে চেয়ে চেয়ে চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার পর হয়তো নাম দিয়েছেন ‘নয়নতারা’। সেই থেকে দেশে নয়নতারা নামেই পরিচিতি পেয়েছে। হালে বিজ্ঞানীরা এই ফুল গবেষণা করে নানা ধরনের রোগের প্রতিষেধক খুঁজে পেয়েছেন।
নয়নতারা ফুল অনেক রঙের। হাল্কা বেগুনির প্রলেপে গোলাপি নয়নতারা চোখে পড়ে বেশি। এ ছাড়াও লালচে, সাদার মধ্যে লাল, গোলাপির মধ্যে হলদে নয়নতারার দেখা মেলে কালেভদ্রে। বাড়ির ধারের জঙ্গলে নদী তীরের ঝাউবনে, কোনো বনে অনাদরেই বেড়ে ওঠে এই ফুল। বর্তমানে দেশের অনেক পার্কে, কোনো প্রতিষ্ঠানের বাগানে, ব্যক্তি উদ্যোগের বাগানে, বাড়ির টবে নয়নতারা ফুল ফুটছে। পুষ্পপ্রেমীদের কাছে গোলাপ, রজনীগন্ধা, গন্ধরাজ, গাঁদা, কেয়া ও অন্যান্য সুবাসের ফুলের যেমন কদর নয়নতারার কদর তেমন নেই। যে কারণে গাছে এই ফুল নিরাপদ। কেউ ছেঁড়ে না। ফুলপ্রেমীরা শুধু চোখে দেখেই সৌন্দর্য উপভোগ করে। হৃদয়ের রোমান্টিকতায় নিজেদের ভরিয়ে তোলে। ব্রিটেনে এই ফুলকে মর্যাদা দেয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্যের (ইউকে) রয়েল হর্টিকালচার সোসাইটি এই ফুলকে বাগানের সৌন্দর্যের ফুলের অনন্য পুরস্কার দিয়েছে। তারা বলেছে ফুলটি একই সঙ্গে ‘অর্নামেন্টাল ও হারবাল’। যদিও এই ফুলের কিছু অংশে আছে বিষ, তারপরও বিষে বিষক্ষয়ের মতো এই ফুল অনেক রোগের প্রতিষেধকের কাজ করে।
ফুল, পাতা ও ডালে মূল্যবান রাসায়নিক উপাদান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আছে ভিনাক্রিস্টন, ভিনব্লাস্টিন যা এক ধরনের এলকালয়েড। এই দুই উপাদান লিউকোমিয়া রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার হচ্ছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানীগণ বলছেন নয়নতারায় ৭০ ধরনের এলকালয়েড (উপ-ক্ষার) এবং ডেল্টা ইহোহিম্বিন নামের এক ধরনের রাসায়নিক উপাদান পাওয়া গেছে। ক্রিমিরোগ, মধুমেহ, রক্তপ্রদাহ, সন্ধিবাত, বহুমূত্রসহ কয়েকটি রোগের প্রতিরোধে এই ফুলে ওষুধ তৈরি হচ্ছে। হালে ক্যান্সার চিকিৎসায় এই ফুলের কার্যকারিতা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। গ্রামে বোলতা মৌমাছির কামড়ের জ্বালা মেটাতে হুল ফুটানোর স্থানে এই ফুল ও পাতার রস ব্যবহার করা হয়। নয়নতারার বহুমুখী কার্যকারিতায় চিকিৎসা বিজ্ঞানে বড় আসন করে নিয়েছে।