
ছবি: সংগৃহীত
এক সময়ের ভাষা আন্দোলন (১৯৫২) কিংবা মুক্তিযুদ্ধ (১৯৭১)—বাংলাদেশের ইতিহাসে সফল বিপ্লবগুলো ছিল সুস্পষ্ট লক্ষ্য, সাংস্কৃতিক পরিচয় ও জাতিসত্ত্বার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন। এসব আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা ছিল সর্বস্তরের: ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক, পেশাজীবী থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তারা পর্যন্ত।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের সফলতার পেছনে যেমন ছিল আন্তর্জাতিক সমর্থন, তেমনি ছিল দেশের মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিক ঐক্য ও জাতীয়তাবোধ। ঐতিহাসিক গবেষক বদরুদ্দীন উমর, আহমেদ রফিউদ্দিন ও শর্মিলা বোস প্রমাণ করেছেন—এই বিপ্লবগুলো ছিল আদর্শিক, জাতীয়তাবাদী এবং সর্বজনগ্রাহ্য।
তবে স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে কিংবা সাম্প্রতিক গণআন্দোলনগুলো কেন বারবার ব্যর্থ হচ্ছে? বিশ্লেষকরা বলছেন, সমস্যা হলো—
- ক্ষমতাবানদের দখলদারি
- স্বৈরশাসনের দমন
- কাঠামোগত সংস্কারের অভাব
- আন্দোলনের অভ্যন্তরীণ বিভাজন
বিশেষজ্ঞ আলী রিয়াজ বলেন, অনেক আন্দোলন তাৎক্ষণিক শাসক পরিবর্তনেই থেমে যায়; দীর্ঘমেয়াদি প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ঘটে না। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা জটিল—তারা আন্দোলনকে নির্বাচনী অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে, কিন্তু ক্ষমতায় এসেই আগের স্বৈরাচারী আচরণ পুনরাবৃত্তি করে।
এছাড়াও, গবেষক ডেভিড লুইসের ভাষ্যে, আন্দোলনগুলো অনেক সময় দলীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট চুক্তির বলি হয়, যেখানে সাধারণ জনগণের ত্যাগ উপেক্ষিত থাকে।
এ কারণেই বহু পণ্ডিত আজ বাংলাদেশে একটি ‘সাংস্কৃতিক বিপ্লব’ এর প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন।
🔍 সাংস্কৃতিক বিপ্লবের বৈশিষ্ট্য কী?
- জাতীয় মূল্যবোধ ও চিন্তার আদর্শগত রূপান্তর
- জনসম্পৃক্ততা এবং সচেতনতার জাগরণ
- পুরনো ধ্যান-ধারণার সংস্কার
- শিক্ষাব্যবস্থা, গণমাধ্যম, পরিবার ও ধর্মীয় চিন্তায় পরিবর্তন
- দীর্ঘস্থায়ী সামাজিক প্রভাব
ড. এএসএম আনাম উল্লাহর মতে, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বিকাশ ও একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পাশাপাশি সংস্কৃতি, চিন্তা ও মূল্যবোধে বড় রকমের পরিবর্তন আনাই এখন সময়ের দাবি।
আঁখি