ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংসে ব্যর্থ মার্কিন হামলা: গোয়েন্দা প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ১০:২৫, ২৬ জুন ২০২৫; আপডেট: ১০:২৬, ২৬ জুন ২০২৫

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংসে ব্যর্থ মার্কিন হামলা: গোয়েন্দা প্রতিবেদন

ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বিমান হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ধ্বংস করতে পারেনি—শুধুমাত্র কয়েক মাস পিছিয়ে দিতে পেরেছে, এমনটাই দাবি করেছে একটি প্রাথমিক মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন। এই মূল্যায়ন এমন এক সময়ে এসেছে যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে এক অস্থির যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।

গত মঙ্গলবার ইরান ও ইসরায়েল—দুই পক্ষই আভাস দেয়, ১২ দিনের ব্যাপক বিমানযুদ্ধ আপাতত শেষ হয়েছে। এর আগে ট্রাম্প প্রকাশ্যে উভয় পক্ষকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জন্য ভর্ৎসনা করেন এবং ভোর ৫টা GMT-তে (পাকিস্তান সময় সকাল ১০টা) যুদ্ধবিরতি কার্যকর ঘোষণা দেন।

যুদ্ধের একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়। ট্রাম্প দাবি করেন, ৩০,০০০ পাউন্ড ওজনের বোমা ব্যবহার করে এই হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে সম্পূর্ণ “ধ্বংস” করে দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের একটি গোয়েন্দা সংস্থা, ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (DIA) এক প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব স্থাপনার প্রবেশপথ বন্ধ করা গেলেও, গভীর ভূগর্ভস্থ স্থাপনার মূল কাঠামো টিকে গেছে। কিছু সেন্ট্রিফিউজ (ইউরেনিয়াম পরিশোধন যন্ত্র) এখনও অক্ষত রয়েছে বলেও জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।

এদিকে হোয়াইট হাউস এ প্রতিবেদনকে "সম্পূর্ণ ভুল" বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, “আমরা আমাদের অস্তিত্বের দুটি বড় হুমকি—পারমাণবিক ধ্বংস ও ২০,০০০ ক্ষেপণাস্ত্রের—সমাধান করেছি।” তবে ইরানি প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান এই সংঘর্ষকে “একটি মহান বিজয়” বলে আখ্যা দেন এবং সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে জানান, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মতপার্থক্য নিরসনে প্রস্তুত।

ট্রাম্প প্রশাসন মঙ্গলবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে জানায়, হামলায় ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম "দুর্বল হয়েছে", তবে ট্রাম্পের “সম্পূর্ণ ধ্বংস” দাবি থেকে তা অনেকটাই পিছিয়ে।

ইসরায়েল ও ইরান—দুই পক্ষই যুদ্ধবিরতি স্বীকার করতে কয়েক ঘণ্টা সময় নেয় এবং পরস্পরের বিরুদ্ধে লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে। ট্রাম্প ইসরায়েলকে প্রকাশ্যে কড়া ভাষায় ভর্ৎসনা করেন এবং বলেন, “আমি এখন ইসরায়েলকে শান্ত করতে হবে... ওরা এতদিন ধরে লড়ছে, এখন নিজেরাই জানে না কী করছে।”

নেতানিয়াহুর অফিস জানায়, যুদ্ধবিরতির প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে তেহরানের কাছে একটি রাডার স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। তবে তারা স্পষ্ট করেনি হামলাটি যুদ্ধবিরতির আগে না পরে হয়েছে।

ইরানি সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় দেশটিতে ৬১০ জন নিহত ও ৪,৭৪৬ জন আহত হয়েছেন। বিপরীতে ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে ২৮ জনের মৃত্যু ঘটে—এই প্রথমবার তারা এত বড় পরিসরে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ভেদ করতে সক্ষম হয়।

যুদ্ধবিরতির খবরে বিশ্ববাজারে তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়ে: তেলের দাম কমে যায়, এবং শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বগতি দেখা যায়, যা অঞ্চলটির স্থিতিশীলতা ফিরে আসার আশার ইঙ্গিত দেয়।

তেহরানে ফেরার পথে ৩৮ বছর বয়সী রেজা শরিফি বলেন, “যুদ্ধ শেষ। শুরুই হওয়া উচিত ছিল না।”

শিহাব

×