
ছবি: সংগৃহীত
খুশকি একটি সাধারণ সমস্যা, যা মাথার ত্বকের শুষ্কতা, ছত্রাকের সংক্রমণ বা তৈলাক্ত ত্বকের কারণে হতে পারে। এটি অস্বস্তিকর এবং অনেক সময় বিব্রতকরও বটে। তবে ঘরোয়া কিছু উপাদান ব্যবহার করে এই সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
এখানে ঘরোয়া উপায়ে খুশকি দূর করার কিছু কার্যকর পদ্ধতি দেওয়া হলো:
১. টি ট্রি অয়েল (Tea Tree Oil)
টি ট্রি অয়েলে শক্তিশালী অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা খুশকি সৃষ্টিকারী ছত্রাককে (যেমন: ম্যালাসেসিয়া) মোকাবিলায় অত্যন্ত কার্যকর।
-
ব্যবহার পদ্ধতি: আপনার নিয়মিত শ্যাম্পুর সঙ্গে কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে নিন। এরপর সেই শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। সরাসরি ব্যবহার না করে শ্যাম্পুর সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করাই ভালো, কারণ এটি ত্বককে শুষ্ক করে দিতে পারে।
২. নারকেল তেল
নারকেল তেল মাথার ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে এবং শুষ্কতা কমায়, যা খুশকির অন্যতম কারণ। এতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যও রয়েছে।
-
ব্যবহার পদ্ধতি: হালকা গরম নারকেল তেল মাথার ত্বকে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। ৩০ মিনিট বা সম্ভব হলে সারা রাত রেখে দিন। এরপর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে ভালো ফল পাবেন।
৩. অ্যাপল সাইডার ভিনেগার (Apple Cider Vinegar)
অ্যাপল সাইডার ভিনেগার মাথার ত্বকের pH ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে এবং ছত্রাকের বৃদ্ধি কমায়। এর অ্যাসিটিক অ্যাসিড খুশকি দূর করতে সহায়ক।
-
ব্যবহার পদ্ধতি: এক ভাগ অ্যাপল সাইডার ভিনেগারের সঙ্গে এক ভাগ পানি মিশিয়ে নিন। শ্যাম্পু করার পর এই মিশ্রণটি মাথার ত্বকে লাগিয়ে ৫-১০ মিনিট রেখে দিন। এরপর পরিষ্কার পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করতে পারেন।
৪. নিম পাতা
নিম পাতা তার অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। এটি খুশকি এবং মাথার ত্বকের অন্যান্য সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।
-
ব্যবহার পদ্ধতি: কিছু নিম পাতা বেটে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট সরাসরি মাথার ত্বকে লাগিয়ে ২০-৩০ মিনিট রাখুন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার ব্যবহার করতে পারেন। নিম তেলও ব্যবহার করতে পারেন।
৫. লেবুর রস
লেবুর রসে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড মাথার ত্বকের pH ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং খুশকি সৃষ্টিকারী ছত্রাক কমাতে সাহায্য করে।
-
ব্যবহার পদ্ধতি: ২ টেবিল চামচ লেবুর রসের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ পানি মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগিয়ে নিন। ৫-১০ মিনিট রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এরপর নিয়মিত শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।
৬. দই
দইয়ে প্রোবায়োটিক থাকে, যা মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবেও কাজ করে।
-
ব্যবহার পদ্ধতি: টক দই সরাসরি মাথার ত্বকে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রাখুন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি মাথার ত্বকের শুষ্কতা কমিয়ে খুশকি কমাতে সাহায্য করে।
৭. অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরাতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা চুলকানি এবং মাথার ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
-
ব্যবহার পদ্ধতি: অ্যালোভেরা জেল সরাসরি মাথার ত্বকে লাগিয়ে ২০-৩০ মিনিট রাখুন। এরপর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কিছু অতিরিক্ত টিপস:
-
নিয়মিত চুল ধোয়া: নিয়মিত চুল ধুয়ে মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখুন, তবে অতিরিক্ত ধোয়াও এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি প্রাকৃতিক তেল নষ্ট করতে পারে।
-
সঠিক শ্যাম্পু: মৃদু এবং সালফেট-মুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। যদি আপনার খুশকি খুব বেশি হয়, তাহলে মেডিকেটেড অ্যান্টি-ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন, তবে সেক্ষেত্রে ব্যবহারের আগে একজন ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন।
-
চুলে হিট প্রয়োগ কমানো: হেয়ার ড্রায়ার, স্ট্রেটনার বা কার্লিং আয়রনের মতো হিট-প্রোডাক্টের ব্যবহার কমান। অতিরিক্ত হিট মাথার ত্বককে শুষ্ক করে খুশকি বাড়াতে পারে।
-
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, জিঙ্ক এবং ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার খান। পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
-
স্ট্রেস কমানো: স্ট্রেস বা মানসিক চাপ অনেক সময় খুশকি বাড়িয়ে তোলে। যোগা, মেডিটেশন বা অন্যান্য স্ট্রেস কমানোর পদ্ধতি অবলম্বন করুন।
যদি ঘরোয়া প্রতিকারগুলো ব্যবহার করার পরেও আপনার খুশকির সমস্যা না কমে, অথবা ত্বক লাল হয়ে যায়, চুলকানি বা প্রদাহ বৃদ্ধি পায়, তাহলে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
সাব্বির