
ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে প্রতিবেদন, ইরান বর্তমানে গভীর সংকটে রয়েছে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে দেশটি। এ পরিস্থিতিতে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির অনুপস্থিতি দেশজুড়ে উৎকণ্ঠা ও গুঞ্জনের জন্ম দিয়েছে।
দেশজুড়ে যখন উদ্বেগ তুঙ্গে, তখন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক উপস্থাপক খোলাখুলি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন খামেনির অফিসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার দিকে:
“মানুষ খুবই উদ্বিগ্ন সর্বোচ্চ নেতাকে নিয়ে। আপনি কি বলতে পারবেন, উনার কী অবস্থা?”
দর্শকদের পাঠানো অসংখ্য প্রশ্ন তুলে ধরেন উপস্থাপক। কিন্তু স্পষ্ট কোনো উত্তর না দিয়ে মেহদি ফাজায়েলি, খামেনির আর্কাইভ অফিসের প্রধান, বলেন:
*“আমিও অনেক ফোন কল পেয়েছি, সবাই উদ্বিগ্ন। আমাদের উচিত প্রার্থনা করা। সর্বোচ্চ নেতার নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা আছেন, তারা ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইনশাআল্লাহ, আমাদের জনগণ বিজয় উদযাপন করবেন তাদের নেতার পাশে দাঁড়িয়ে।”*
আয়াতুল্লাহ খামেনি, যিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে রাষ্ট্রীয় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত অনুমোদন দেন, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে জনসমক্ষে দেখা দেননি, এমনকি কোনো বিবৃতি বা বার্তাও দেননি। অথচ এই সময়েই যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে, জবাবে ইরান কাতারে অবস্থিত একটি মার্কিন ঘাঁটিতে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, এবং ইসরায়েলের সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছেছে।
সবকিছুর মধ্যেও খামেনির নিরবতা নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে, তিনি কী এখনো সক্রিয়ভাবে দেশ পরিচালনায় আছেন? না কি তিনি গুরুতর অসুস্থ, আহত বা আরও খারাপ কিছু?
সর্বোচ্চ নেতার দীর্ঘ অনুপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইরানের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনের অনেকেই। 'খানেমন' নামক একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক মোহসেন খালিফেহ বলেন,
“যারা তাকে ভালোবাসি, আমরা সবাই গভীরভাবে চিন্তিত।”
তিনি এমনকি সেই অনিশ্চিত কথাটাও বলেন যা কয়েক সপ্তাহ আগেও অকল্পনীয় ছিল:
“যদি খামেনি মারা যান, তার জানাজা হবে সবচেয়ে গৌরবময় ও ঐতিহাসিক।”
খামেনি ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। তাই যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে হামলা কিংবা যুদ্ধবিরতি চুক্তির মতো বড় সিদ্ধান্তে তাঁর সম্মতি প্রয়োজন। তবে সামরিক কমান্ডার ও সরকারি কর্মকর্তারা কেউই নিশ্চিত করে বলেননি, সাম্প্রতিক সময়ের কোনো সিদ্ধান্তে খামেনির সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ বা যোগাযোগ হয়েছে কি না।সরকারি সূত্র বলছে, নিরাপত্তাজনিত কারণে খামেনি এখন একটি বাঙ্কারে অবস্থান করছেন এবং ইলেকট্রনিক যোগাযোগ থেকেও বিরত থাকছেন, যাতে তাকে লক্ষ্য করে কোনো হামলা চালানো না যায়।
সর্বোচ্চ নেতার অনুপস্থিতি ইরানের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে শঙ্কা তৈরি করেছে। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, এই সংকটময় মুহূর্তে দেশের নেতৃত্ব কাদের হাতে? খামেনি কি আদৌ সুস্থ আছেন?
এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি ঘোষণা না আসায়, জল্পনা-কল্পনা থামছেই না। এবং দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অভিজাতদের একটাই প্রশ্ন, “খামেনি কোথায়?”
ছামিয়া