মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হলে পারস্পরিক শৃঙ্খলার ভিত্তিতে মানবিকবোধ, সহানুভূতি প্রদর্শন করে চলতে হয়। একে অপরের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে হয়। শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে আমরা নৈতিক, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের নিম্ন সীমায় পৌঁছে গেছি। পারস্পরিক সৌজন্যবোধ, সহমর্মিতা শূন্যের কোঠায়। ভ্রাতৃত্ববোধের মানসিকতা আমাদের মাঝে এখন নেই বললেই চলে। এর কারণ হচ্ছেÑ
১. পরিবারের চরম উদাসীনতা, পরিবারের নিত্য কলহ থেকে শুরু“ করে যে যার মতো লাগামহীন ছুটে চলা।
২. পরস্পরের প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধাবোধ স্নেহ না থাকা।
৩. ঘণ্টার পর ঘণ্টা ইন্টারনেটে গেম, কার্টুনে আসক্তি হওয়া।
৪. মহামানব-মনীষীদের জীবনাচরণ না জানা।
৫. বর্তমানে পরিবারগুলো ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষাকে উপেক্ষা করে ক্লাসে ফার্স্ট হওয়ার চিন্তায় ব্যতিব্যস্ত রাখা।
৬. ছাড় দেয়ার মানসিকতার শিক্ষা না দেয়া।
৭. শিক্ষাঙ্গনে ধর্মীয় শিক্ষাকে কম গুরুত্ব দেয়া।
৮. ধনীর সন্তান এবং দরিদ্র সন্তানের পার্থক্য বা তফাত করে দেখা। অধিকাংশ অভিভাবক এবং শিক্ষক মহোদয়গণ শ্রেণীভেদ মাথায় রেখে অল্পবয়সীদের সঙ্গে কথা বলে থাকেন, যা একেবারেই অনুচিত। এতে করে শিশু আত্মমর্যাদা না শিখে আত্মঅহঙ্কারী হয়ে ওঠারই আশঙ্কা বেশি থাকে।
৯. হিংসাত্মক মনোভাব পোষণ করা।
লোভ, হিংসা, শঠতা, ধূর্ততা, উগ্রতা পরিহার করে সুন্দর, সমৃদ্ধ সমাজ গঠন করাই হলো মানুষের দায়িত্ব ও কাজ। নম্রতা, ভদ্রতা, আচরণে, ভাষায়, কথায়, যে যত বিনয়ী সে ততই মার্জিত, আচরণে, সৌজন্য, শিষ্টাচারের মূর্ত প্রতীকের অধিকারী হয়। বিনয় আর উদারতা সব শিষ্টাচারের উৎসস্থল। বিনয় ও শিষ্টাচার ব্যক্তিত্বকে সমুজ্জ্বল করে। সকল শ্রেণীর কাছে গ্রহণযোগ্যতা আর মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেয়। আমিত্ব পূজায় প্রচার, প্রসার হয় না। অন্যকে ছোট ভাবা উচিত নয়। পরশ্রীকাতর নামক অসুখ ভয়ঙ্কর। হিংসার লালন-পালন কাম্য নয়। নৈতিক শিক্ষার চরম অবক্ষয়ে ক্ষতবিক্ষত আমাদের জীবনের মাস্তুল। নৈতিকতা, শিষ্টাচার, সৌজন্য একে অপরের সঙ্গে সুনিবিড় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সুন্দর হানাহানিমুক্ত সমাজ জীবন, সুশৃঙ্খল একটি সমাজ কাঠামো তৈরিতে পরিবার ও সমাজ জীবনে এখন শিষ্টাচার, সৌজন্যবোধ শুধু জরুরীই নয়, বরং সময়ের বিশাল গুরুত্বপূর্ণ এক দাবি। শিশুদের এবং আগামীর প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে শিষ্টতার সুকোমল নান্দনিক আদর্শ।
জেল রোড, যশোর থেকে