ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমার থেকে ‘গোপনে’ কাঠ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ২২:১৯, ১৪ জানুয়ারি ২০২২

মিয়ানমার থেকে ‘গোপনে’ কাঠ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

সামরিক অভ্যুত্থানের জেরে গত বছর মিয়ানমারের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তারাই এরপর দেশটি থেকে গোপনে মূল্যবান সেগুন কাঠ আমদানি অব্যাহত রেখেছে, যাতে ফুলে ফেঁপে উঠছে জান্তা সরকারের অর্থভাণ্ডার। সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর এ তথ্য সামনে এনেছে জাস্টিস ফর মিয়ানমার নামে একটি মানবাধিকার সংগঠন।- খবর আলজাজিরার সংগঠনটি জানিয়েছে, গত ডিসেম্বর মাসেও মিয়ানমার থেকে সেগুন কাঠ নিয়েছে কয়েকটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান, অথচ যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব দফতর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল গত বছরের এপ্রিলে। মার্কিন আমদানিকারকরা তৃতীয় পক্ষ ব্যবহার করে কৌশলে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়েছে বলে জানিয়েছে জাস্টিস ফর মিয়ানমার। বৈশ্বিক বাণিজ্যভিত্তিক ডেটাবেজ পনজিভার সূত্র উল্লেখ করে পর্যবেক্ষক সংগঠনটি বলেছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে নবেম্বর পর্যন্ত মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো মিয়ানমার থেকে অন্তত ১ হাজার ৬০০ টন সেগুন কাঠ কিনেছে। তারা বলেছে, এসব কাঠ ৮২টি চালানে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই বোর্ড ও তক্তা আকারে ছিল, যা সাধারণত জাহাজ, বাইরের পাটাতন ও আসবাব তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। চীনের মতো তৃতীয় কোন দেশ হয়ে আরও অনেক কাঠ যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে বলে বিশ্বাস জাস্টিস ফর মিয়ানমারের। জান্তা সরকারের কাছে অর্থ সরবরাহ আটকাতে এ ধরনের কাঠ বাণিজ্যে আরও কড়াকড়ি আরোপের দাবি জানিয়েছে তারা। ২০২১ সালের ২১ এপ্রিল জারি মার্কিন রাজস্ব দফতরের নিষেধাজ্ঞা অনুসারে, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান মিয়ানমার টিম্বার এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে সব ধরনের আর্থিক লেনদেন নিষিদ্ধ। এটি মিয়ানমারের কাঠ রফতানি এবং নিলামের মাধ্যমে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রির বিষয়গুলো দেখভাল করে। গত জুনে একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নও। মিয়ানমারের সবচেয়ে মূল্যবান শিল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম এই সেগুন কাঠ। প্রতি বছর কাঠ রফতানি করে কোটি কোটি ডলার আয় করে তারা। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক গ্রুপ এক্সট্রাক্টিভ ইন্ডাস্ট্রিজ ট্রান্সপারেন্সি ইনিশিয়েটিভের তথ্যমতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কাঠ শিল্পের ট্যাক্স ও রয়্যালিটি থেকে প্রায় ১০ কোটি ডলার আয় করেছিল মিয়ানমার সরকার। ওই বছর গোটা বন শিল্প থেকে তাদের আয় ছিল অন্তত ৩২ কোটি ২০ লাখ ডলার। নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বহিনী। এরপর থেকেই বিক্ষোভ-সহিংসতায় উত্তাল দেশটি। স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের মতে, বিক্ষোভকারীদের ওপর জান্তা সরকারের দমন-পীড়নে প্রায় দেড় হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, বন্দী হয়েছেন সাড়ে ১১ হাজারেরও বেশি।
×